‘আকাশে মেঘ দেখলেই এখন বুক ধড়ফড় করে’

‘মাঝরাতে বিকট শব্দে নদের বাঁধ ভেঙে ঢলের পানি আমাদের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরবাড়ি ভেঙে যায়, আসবাবপত্র, হাঁস-মুরগি সব ভেসে যায়। তখন ১০ দিন স্বামী-সন্তান নিয়ে মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আবার বর্ষা আসছে, কিন্তু বাঁধ তো ঠিক হলো না। তাই আকাশে মেঘ দেখলেই এখন বুক ধড়ফড় করে।’ চোখ ভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নিজপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাজমা বেগম (৬০)।
 
নাজমা বেগমের এই শঙ্কা শুধু তার একার নয়, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পাড়ে বসবাসকারী হাজারো মানুষ আজ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর রাতে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর প্রায় ১ হাজার ৯০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ৪ হাজার ২১০ মিটার বাঁধ।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় পানিতে ডুবে নষ্ট হয় প্রায় ১৬ হাজার ৩০০ হেক্টর আমন ধান এবং ভেসে যায় ২ হাজার ৮৭৫টি পুকুরের মাছ। ভাঙনের ছয় মাস পার হলেও অধিকাংশ অংশে এখনো সংস্কারের কোনো কাজ শুরু হয়নি।
 
চেল্লাখালী নদী সংলগ্ন বাঘবেড় গ্রামের সুরুজ মিয়া (৫৫) বলেন, ওই রাতে কোমর সমান পানি উঠেছিল ঘরে। আমাদের সবকিছু পানিতে ভেসে গেছে। গরিব মানুষের এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এখন গাঙে পানি কম, এখনই যদি বাঁধের কাজ না হয়, বর্ষায় তো আবার মরতে হবে।

ওই গ্রামের আলী আহসান বলেন, বাঁধ ভাঙনের ছয় মাস কেটে গেছে, কিন্তু মেরামত হলো না। ওই জায়গা দিয়ে ঢলের পানি ঢুকে শহরের অনেক এলাকাও প্লাবিত হয়। এবারও যদি ঢল নামে, কী করব জানি না। ঋণ করে কোনোমতে ভাঙা ঘর ঠিক করেছি, আবার নতুন ক্ষতি হলে কী হবে আল্লাহ জানে।
 
পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল হক বলেন, ভোগাই নদীর নিজ পাড়ায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শহরের তিনটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। বাড়িঘরে পানি ঢুকে, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার জরুরি।

শেরপুর-জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের জন্য প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। নিজপাড়ার অংশে এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে চেল্লাখালী নদীর একাংশে এবং শহরের গড়কান্দা এলাকায় সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, বর্ষার আগেই বাকি ভাঙন অংশগুলোর সংস্কার সম্পন্ন করা যাবে।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত বাঁধ মেরামত না হলে আরেকটি পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই তারা সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ চান, যেন গারো পাহাড়ের পাদদেশে আবারও বন্যার করাল গ্রাসে হারিয়ে না যায় তাদের স্বপ্ন ও স্বাভাবিক জীবন।

এমআর/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঢালাও দরপতনে বাজার থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার মূলধন উধাও Apr 26, 2025
img
মুশফিকের পাশে জাকের, জয়ের জন্য সবার কাছে ভালো পারফরম্যান্সের প্রত্যাশা Apr 26, 2025
img
ম্যাচের পরেই মদের খোঁজে বেরোলেন রাজস্থান রয়্যালসের সিইও Apr 26, 2025
img
জামায়াতের ব্যানারে অমুসলিম প্রার্থী স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত নতুন মাত্রা যোগ করেছে: রনি Apr 26, 2025
img
এবার গীতিকার ও সুরকার হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন রূপ Apr 26, 2025
img
খাতা না দেখানোয় সহপাঠীদের মারধরে এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু Apr 26, 2025
img
নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ নতুনধারা জনতার পার্টি’ Apr 26, 2025
img
লটারিতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই বাংলাদেশি প্রবাসী Apr 26, 2025
img
বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফেরানোর সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের Apr 26, 2025
img
আমরা ভারতে খেলব না এটা পরিষ্কার: গুল ফিরোজা Apr 26, 2025