মৌসুমীদের সঙ্গে সম্পর্ক শুটিংয়ের পরও অটুট থাকবে, বললেন যশ

বাঙালি সিনেমার রূপালি পর্দায় এক সময়ের প্রিয় মুখ মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় আবার ফিরছেন। দীর্ঘ বিরতির পর 'আড়ি' ছবির মাধ্যমে বাংলা ছবিতে তার প্রত্যাবর্তন ঘটছে। এই ছবিতে তিনি মা চরিত্রে অভিনয় করছেন, যাঁর সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা ও আবেগের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে যশ দাশগুপ্ত তাঁর ছেলের চরিত্রে রয়েছেন, এবং নুসরত জাহানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করছেন। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় তার বড় মেয়ে পায়েলকে হারিয়েছেন, এবং যশ দাশগুপ্তও মাতৃহারা। এই বাস্তব অভিজ্ঞতা তাদের পর্দায় সম্পর্কের গভীরতা ও বাস্তবতা এনে দিয়েছে। 'আড়ি' ছবির মাধ্যমে মা ও ছেলের সম্পর্কের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে, যা দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলবে।

সম্পর্ক যে তৈরি হয়েছে সে কথা অস্বীকার করেননি যশ। বলেছেন, “বিনোদন দুনিয়ার রীতি, শুটিং শেষ সম্পর্ক শেষ। যে যার মতো ফিরে যাই নিজের দুনিয়ায়। মৌসুমীদির ক্ষেত্রে বিষয়টি বোধহয় অন্য রকম হতে চলেছে। আমাদের সম্পর্কটা মনে হচ্ছে এখানেই ফুরিয়ে যাওয়ার নয়।” যশের উপলব্ধি, তিনি কোনও দিন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াত কন্যা পায়েলের জায়গা নিতে পারবেন না। অভিনেত্রীও পারবেন না তার মায়ের জায়গা নিতে। তবু যেন অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে বাধা পড়েছেন উভয়েই।

বলতে বলতে যশ ফিরে গিয়েছেন শুটিং শুরুর দিনগুলোয়। জানালেন, একটু ভয়ে ভয়েই গিয়েছিলেন ষাট-সত্তরের দশকের সাড়া জাগানো বাংলা-হিন্দি ছবির নায়িকার কাছে। দ্বিধায় ছিলেন তিনি, মৌসুমী রাজি হবেন তো?

অভিনেতার কথায়, “আমরা ওর কাছে মায়ের চরিত্র নিয়ে গিয়েছিলাম। উনিও একজন মায়ের চোখ দিয়ে চরিত্রটিকে বিচার করেছেন। চিত্রনাট্য শুনেছেন। তার পর এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছেন। অভিনেত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছুই করেননি।” সেই থেকে কলকাতায় বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর অভিভাবক যশ! অভিনেত্রীর ছোট মেয়ে শহরে মাকে ছাড়তে এসেছিলেন। তিনি যশের হাত ধরে বলে গিয়েছিলেন, “মাকে তোমাদের জিম্মায় ছেড়ে যাচ্ছি। নিজেদের মা মনে করে যত্ন নিও। সামলে রেখো। কাজ ফুরোলে আবার মাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিও।” 

যশের দাবি, সে দিন থেকে তিনি মৌসুমীর ছেলে, অভিনেত্রী তার মা। “কাধে গুরু দায়িত্ব এসে পড়ল। বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে নয়, একজন মাকে সুস্থ ভাবে তার সন্তানের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে”, বললেন তিনি।

তাই সেটে এবং সেটের বাইরে যশ মৌসুমীর ২৪ ঘণ্টার ‘স্থানীয় অভিভাবক’। সেটেই রান্না হয়েছে শুক্তো থেকে মাছে ঝোল। মৌসুমী তৃপ্তি করে খেতেন। “একবার তালের বড়া খাওয়ার বায়না করলেন মৌসুমীদি। আমাদের সেটের ঠাকুর তাল এনে, চেছে, বড়া ভেজে খাওয়ালেন। খেয়ে দেয়ে ছেলেমানুষের মতো খুশি!” আবার বেগতিক দেখলে ‘মা’কে শাসনও করেছেন। যাতে শরীরখারাপ না হয়। শনিবার ফের মুম্বই উড়ে গেলেন মৌসুমী।

পর্দার ছেলে-ছেলের বৌ কলকাতা বিমানবন্দরে ছাড়তে এসেছিলেন তাকে। মনখারাপ? “তা তো একটু হবেই”, জবাব অভিনেতার। 

পর ক্ষণেই ঝলমলে কণ্ঠস্বর তার, “জানেন, মৌসুমীদিকে দেখবেন বলে ওর সমসাময়িকেরা ‘আড়ি’ দেখতে আসছেন। এটা আমাদের কম পাওনা?”

ইদানীং বাংলা ছবিতে পুরনো দিনের অভিনেতাদের রমরমা। মিঠুন চক্রবর্তী থেকে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে শর্মিলা ঠাকুর, রাখি গুলজ়ার, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। এই প্রজন্মের অভিনেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে যশ বলেন, “বিষয়টি আমি এ ভাবে দেখি না। এক, অভিনেতাদের অবসর বলে কিছু নেই। যে কোনও বয়সে তাঁরা অভিনয় করতে পারেন। দুই, ওরা ফিরছেন বলে ওঁদের সময়ের দর্শকেরা হলে ফিরছেন। এই শ্রেণির দর্শকেরা মাঝে কিন্তু বাংলা ছবি দেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন।” 

পাল্টা প্রশ্ন যশও রেখেছেন, “এ বার বলুন, পুরনো দিনের অভিনেতারা ফিরলে ইন্ডাস্ট্রির লাভ না লোকসান?”

আরএম/এসএন

Share this news on: