আজ পর্যন্ত অবৈধ এক টাকা স্পর্শ করিনি : সারজিস আলম

এখন পর্যন্ত অবৈধ কোনো টাকা স্পর্শ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। একই সঙ্গে অনৈতিক কোনো সুপারিশকে প্রশ্রয় দেননি বলে দাবি করেছেন তিনি।

সারজিস আলম বলেন, এটি আমার কাছে অভ্যুত্থানের রক্তের কমিটমেন্ট। আমার নিজের সাথে নিজের কমিটমেন্ট।আজ রবিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন এনসিপির এই নেতা।

সারজিস আলমের পোস্টটি  পাঠকদের জন্য হুবাহু তুলে ধরা হলো-

কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপপ্রচার, মনগড়া তথ্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ চোখে পড়েছে। শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে কমেন্টে রিপ্লাই করেছি। বাকিগুলো এড়িয়ে গিয়েছে।

যে অভিযোগগুলোর সাথে দূর-দূরান্তেও আমি আমার কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাইনি সেগুলোর ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা কিভাবে সম্ভব? বরং পিছনে লেগে থাকা শত শত প্রোপাগান্ডা মেশিনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে আমরা কাজের দিকে ফোকাস দিতে চাই। সর্বশেষ ৮-৯ মাসের এই অল্প সময়ে এত প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি যে এমন প্রোপাগান্ডা স্বাভাবিকভাবেই এখন ফেস করতে হবে এবং সামনের দিনে এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক।

খারাপ লাগার বিষয় এটাই যে, কেউ একজন একটা লেখা লিখলো কিংবা কোন একটা নিউজে একটা লেখা আসলো- এটাকেই অনেকে সত্য মনে করে সে অনুযায়ী জাজমেন্ট শুরু করে। অভিযুক্ত আর দোষী এক বিষয় নয়।

একটা অভিযোগকে সত্য মনে করার পূর্বে আদৌ তার সত্যতা আছে কিনা, কিংবা যিনি লিখেছেন তার অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা, কিংবা কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে কোনো লেখা; পর্দার অন্তরালের কোনো গেইমপ্ল্যানের অংশ কিনা সেগুলো যাচাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ।আমাকে কেন্দ্র করে কয়েকজনের অপপ্রচার মূলক লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে- এখানে কয়েকটা ঘটনা ঘটতে পারে।

প্রথমত, কেউ তাকে কিছু তথ্য পাঠিয়েছে এবং কোন প্রকার যাচাই না করে সেগুলো বিশ্বাস করে সোশ্যাল মিডিয়া তুলে ধরেছে।

দ্বিতীয়ত, এগুলো তার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে অনুমান নির্ভর।

তৃতীয়ত, কোন কিছু হাসিলের লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই লেখা লিখেছেন,

অথবা রাজনৈতিক ইকুয়েশনকে সামনে রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
পরের দুইটি উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে যারা লিখেন তাদের সাথে কথা বলে খুব একটা লাভ নেই। কারণ অসৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এটা তারা করবেই। কিন্তু অনেকে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে অনুমান নির্ভর যেই লেখাগুলো লিখেন তাদের সাথে কথা বললে অলমোস্ট সকল ক্ষেত্রে এই মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং গুলো দূর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেটা ঘটেছে মুয়াজ আব্দুল্লাহ এবং রাফিদের সাথে। তাদের সাথে কথা বলার পর তারা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছে- তাদের অনেক মিসকনসেপশন দূর হয়েছে।

ব্যক্তি বিশেষে আমাদের চিন্তা ভিন্ন। কোন একটা বিষয়কে একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে যেভাবে দেখবে; আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট, এবং বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমি সেভাবে নাও দেখতে পারি। সে যেমন ভাবছে ঘটনাটা তেমন নাও হতে পারে। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে একই বিষয়ের পারসেপশন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

কয়েকজন গাজী সালাউদ্দিন তানভীর এর সাথে আমার একক এবং অতি সম্পৃক্ততা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং তাকে আমার আত্মীয় হিসেবে দেখিয়েছেন। প্রথমত, তিনি আমার আত্মীয় নন। অভ্যুত্থানের পরেই তার সাথে আমার এবং আমাদের পার্টির একাধিক জনের প্রথম পরিচয় হয়। আমার সাথে তার যতটুকু পরিচয় ও সম্পর্ক রয়েছে আমার পার্টির একাধিক জনের সাথে তার ততটুকু কিংবা তার চেয়ে বেশি পরিচয় ও সম্পর্ক রয়েছে। পার্টি গঠনের সময় অনেকেই অনেকের নাম পার্টিতে আসার ক্ষেত্রে প্রস্তাব করেছিলেন। তেমনি পার্টিতে আসার ক্ষেত্রে একাধিকজন তার নাম প্রস্তাব করেছিলেন‌ এবং অন্য সবার মত একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকেও নেওয়া হয়েছে।

ব্যক্তি তানভীর যদি আমাদের সাথে সম্পর্কগুলোকে কাজে লাগিয়ে কিংবা নিজের পদবী ব্যবহার করে কোন অন্যায় বা অনৈতিক কাজ করে থাকেন তাহলে সাংগঠনিক এবং আইনগতভাবে তদন্ত সাপেক্ষে তিনি শাস্তি পাবেন। আর যদি কোন অপরাধ প্রমাণিত না হয় তাহলে তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন। কিন্তু তার যেকোনো বিষয় হলে আমার নাম টেনে আনাকে আমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করি এবং এটা নোংরা রাজনীতির অংশ। সম্পর্ক অনেকের সাথেই থাকতে পারে। কিন্তু আমি কারো অসৎ উদ্দেশ্য এবং অবৈধ কার্যক্রমকে সহযোগিতা করছি কিনা সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজে সেটা কখনোই করিনি এবং ভবিষ্যতেও করবো না ইনশাআল্লাহ।

যে কেউ যদি কারো অজান্তে একজনের নাম ভাঙিয়ে কোন কিছু করেও থাকে তাহলে সে দায় একান্তই তার। সে অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হতে পারে।

এ বিষয়ে দায়িত্বশীল পদে থেকে সবচেয়ে বেশি নোংরা মানসিকতা এবং বিবেকবোধহীন আচরণের পরিচয় দিয়েছেন গণধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হয়েও শুধুমাত্র টিআরপি আর ফুটেজের আশায় প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে মনগড়া আর সাপ্লাই পাওয়া তথ্যকে একত্রিত করে তিনি আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি অভিযোগ করেছেন।

আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমাকে নিয়ে তার ফেসবুকে লেখা অভিযোগুলো তিনি যদি সত্য প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিব। আর যদি না পারেন তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিবেন। গাটস্ থাকলে এই চ্যালেঞ্জটুকু তিনি গ্রহণ করুক।

পিনাকি দাদাকে আমি শ্রদ্ধা করি। ফ্যাসিস্ট বিরোধী লড়াইয়ের তিনি একজন অগ্রসৈনিক। কিন্তু তিনি যখন অনুমানের প্রেক্ষিতে আর্মি চিফের সাথে ঘুটু করার কথা বলেন তখন ব্যথিত হই। বিনয়ের সাথে তাকে বলতে চাই, অভ্যুত্থানের শক্তি আর ফেসগুলোকে আইসোলেটেড করার মাধ্যমে তারুণ্যের সম্ভাবনাকে শেষ করে দেওয়ার নানা অপচেষ্টা এখন হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে। সেসব অপচেষ্টার ফাঁদে না পড়ে বরং তারুণ্যকে ঐক্যবদ্ধ করতে আপনার প্রচেষ্টা আমরা প্রত্যাশা করি। কঠিন সময়ে যেহেতু দুনিয়াদারি এসব লোভের উর্ধ্বে থাকতে পেরেছি, আগামীতেও অন্য কোনো ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক ইকুয়েশন স্পর্শ করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষে কিছু কথা। একটা গ্রুপ আছেন যারা এখনো মনে করেন যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে ছাত্রলীগের বাধ্যতামূলক প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করেছি তাই এটা সম্ভবত আমার উইক পয়েন্ট এবং এখানে খোঁচা দিয়ে আমাকে দুর্বল করা যাবে। কিন্তু আপনি আপনার মস্তিষ্কে ভালো করে ঢুকিয়ে নিন- একটা রেজিমের সবচেয়ে শক্তিশালী স্টাবলিশমেন্ট- 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে' থেকে সেই রেজিমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, রেজিমের বিরুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বিদ্রোহ করে রেজিম পতনের গণঅভ্যুত্থানে সামনে থেকে লড়াই করা এত সহজ বিষয় নয়। যারা আগে থেকে অন্য রাজনৈতিক দলের ছিল এটা বরং তাদের চেয়েও কঠিন। বিবেকবোধ আর ব্যক্তিত্বকে সামনে রেখে এই কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই আজ আমরা বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছি। যে 'বর্তমান' রক্ত আর জীবন দিয়ে লেখা।

৫'ই আগস্টের পর থেকে আজ পর্যন্ত অবৈধ এক টাকা স্পর্শ করিনি, অনৈতিক কোন সুপারিশকে প্রশ্রয় দেইনি। এটা আমার কাছে অভ্যুত্থানের রক্তের কমিটমেন্ট। আমার নিজের সাথে নিজের কমিটমেন্ট।

এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
একদিন পরই আইনে পরিণত হলো ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ Jul 05, 2025
img
শুটিংয়ে দেরি করায় গোবিন্দকে চড় মারলেন অমরিশ পুরি! Jul 05, 2025
img
মুন্সিগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের Jul 05, 2025
img
৫ দিনের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি না করলে ৭০ শতাংশ শুল্কারোপের হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের Jul 05, 2025
img
রাজধানীর ডেমরা থেকে ফেনীর ছাত্রলীগ নেতা রবিন গ্রেফতার Jul 05, 2025
img
ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতার দাবি Jul 05, 2025
রংপুরে জামায়াতের জনসভা মঞ্চে শহীদ আবু সাঈদের বাবা-ভাই Jul 05, 2025
একক মাতৃত্ব ও কো-প্যারেন্টিং নিয়ে যা বললেন মিথিলা Jul 05, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Jul 05, 2025
৩ আগস্ট শহীদ মিনারে দলীয় ইশতেহার ঘোষণা এনসিপির Jul 05, 2025
img
জুলাইয়ের যুদ্ধ চালিয়ে যাব পার্লামেন্ট পর্যন্ত: সামান্তা শারমিন Jul 05, 2025
img
‘দেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, বিএনপি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’ Jul 05, 2025
img
বয়স বাড়লে হৃদ্‌যন্ত্রের যত্নে নিয়মিত খেতে হবে সবুজ শাকসবজি Jul 05, 2025
img
৮ ঘণ্টার ঘুম কি আদৌ জরুরি? জেনে নিন Jul 05, 2025
img
আল্লু অর্জুন ও অ্যাটলির অ্যাকশন ছবিতে অভিনেত্রী ম্রুনাল ঠাকুরের ঝলক! Jul 05, 2025
img
রাজপথ এনসিপি ও ছাত্র-জনতার দখলে থাকবে: সামান্তা শারমিন Jul 05, 2025
img
টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় প্রাণ গেল অন্তত ১৩ জনের Jul 05, 2025
img
‘আরও ভাল হওয়ার জায়গা আছে’, আমিরকে সরাসরি সমালোচনা নতুন প্রেমিকা গৌরীর! Jul 05, 2025
img
'জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে' Jul 05, 2025
img
'বিএনপিতে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের স্থান নেই' Jul 05, 2025