সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্টের জবাব দিলেন রাশেদ খান

এলাকায় গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে শোডাউন, বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন এনসিপির মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

রবিবার নিজের অভিযোগের জবাব দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন সারজিস আলম। সেখানে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আজ পর্যন্ত অবৈধ এক টাকাও স্পর্শ করিনি, অনৈতিক কোনো সুপারিশকে প্রশ্রয় দেইনি।

এটা আমার কাছে অভ্যুত্থানের রক্তের কমিটমেন্ট। আমার নিজের সাথে নিজের কমিটমেন্ট।

তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপপ্রচার, মনগড়া তথ্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ চোখে পড়েছে। শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে কমেন্টে রিপ্লাই করেছি।

বাকিগুলো এড়িয়ে গিয়েছে। যে অভিযোগগুলোর সাথে দূর-দুরান্তেও আমি আমার কোন সম্পর্ক খুঁজে পাইনি সেগুলোর ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা কিভাবে সম্ভব? বরং পিছনে লেগে থাকা শত শত প্রোপাগান্ডা মেশিনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কাজকে প্রাধান্য দেওয়া শ্রেয় মনে করি। সর্বশেষ ৮-৯ মাসের এই অল্প সময়ে এত প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি যে এমন প্রোপাগান্ডা স্বাভাবিকভাবেই এখন ফেস করতে হবে এবং সামনের দিনে এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক।

সারজিস তার পোস্টের একটি অংশে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে সবচেয়ে বেশি নোংরা মানসিকতা এবং বিবেকবোধহীন আচরণের পরিচয় দিয়েছেন গণধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হয়েও শুধুমাত্র টিআরপি আর ফুটেজের আশায় প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে মনগড়া আর সাপ্লাই পাওয়া তথ্যকে একত্রিত করে তিনি আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি অভিযোগ করেছেন। আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমাকে নিয়ে তার ফেসবুকে লেখা অভিযোগগুলো তিনি যদি সত্য প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিব। আর যদি না পারেন তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিবেন। গাটস্ থাকলে এই চ্যালেঞ্জটুকু তিনি গ্রহণ করুক। 

এর একদিন পর আজ সোমবার সারজিদের পোস্টের জবাব দিয়েছেন রাশেদ খান। নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে সারজিস আলম আমাকে কল করেন। ১ ঘণ্টার অধিক সময় মোবাইলে তার সাথে কথোপকথন হয়। তিনি আমার কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। বিস্তারিত আলাপ তুলে ধরতে হলে অনেক লেখা লাগবে।

কথোপকথনের সারসংক্ষেপ হলো, আমি তার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করছি। তিনি ভুল ভাঙাতে চেষ্টা করেন ও আমাকে বলেন, আমি যেন তাকে নিয়ে একটা পজিটিভ পোস্ট করি। কিন্তু আমি করিনি, কারণ আমি যেসকল বক্তব্য দিয়েছি, তার যথেষ্ট আলামত ও তথ্য উপাত্ত রয়েছে।

রাশেদ বলেন, প্রথমত, যুগান্তর পত্রিকায় ছাত্র সমন্বয়ক নামধারী গাজী সালাউদ্দীন তানভীর সচিবালয়ে নিজেকে সারজিস ও হাসনাতের পরামর্শে আসার কথা স্বীকার করেন। যমুনা টিভির একটি ভিডিও আমাকে দেখান সরজিসের খুব কাছের একজন। তিনিও আক্ষেপ করে বলেন, সারজিসের প্রভাব খাটিয়ে ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেন তানভীর। আনসার ক্যু’র দিন সারজিসের সঙ্গে তানভীর কেন সচিবালয়ে প্রবেশ করলেন এবং একসঙ্গে বের হলেন? 

রাশেদ আরো বলেন, ডিসি নিয়োগের কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত তানভীর যে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব হয়েছেন, সেই তথ্যও কেউ জানতেন না। সেটিও আমি সারজিস আলমের ঘনিষ্ঠজন থেকে পেয়েছি। এখন প্রশ্ন হলো, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন সারজিস এনসিপিতে পদ দিতে রেফারেন্স করলেন? এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি সারজিসকে প্রশ্ন করি। তিনি আমাকে উত্তর দেন, শুধু কি আমি একাই রেফারেন্স করেছি, আর কেউ করেনি? কথোপকথনের সময় হাসনাতের নাম আসে। তখন, তিনি বলেন, তাহলে কেন আপনি শুধু আমার নাম নেন? এনসিপি সূত্রমতে, গাজী সালাউদ্দীন তানভীরের সাথে সারজিস ও হাসনাত দুজনেরই ঘনিষ্ঠতা আছে। যেটা সারজিসও স্বীকার করেছেন এবং তাদের দুজনের রেফারেন্সই ডিসি নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তি এনসিপির মতো তরুণদের দলে গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না থাকা স্বত্তেও গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন!

দ্বিতীয়ত, যখন এনসিটিবির কেলেঙ্কারি সামনে আসে, তখন রাখাল রাহাকে নিয়ে সারজিস পোস্ট করলেও গাজী সালাউদ্দীন তানভীরের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। কেন গাজী সালাউদ্দীন তানভীরকে এড়িয়ে গেলেন সারজিস? তারসঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এজন্য? ডিসি কেলেঙ্কারির সাথে অভিযুক্ত থাকা ব্যক্তি পুনরায় কাদের সহযোগিতায় এনসিটিভিতে কাজ করার সুযোগ পেলেন?

তৃতীয়ত, তানভীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাদা প্রাডো গাড়ি নিয়ে যেতেন, কারা কারা তার গাড়ির অপেক্ষায় থাকতেন, সেটি ছবি দেখে বোঝার চেষ্টা করুন।

চতুর্থত, যখন গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসানের উপর শহীদ মিনারে যেসকল আহতলীগের সদস্যরা হামলা করেন, এদের জমিন করাতে সহযোগিতা করেন সারজিস আলম ও জুলাই ফাউন্ডেশনের স্নিগ্ধ। গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পান তারা। এই জামিনের নেপথ্যেও ছিলেন সারজিস আলম।

এছাড়া গণমাধ্যমে সারজিসের বিষয়ে সেসব তথ্য এসেছে, আমি সেগুলো নিয়ে বিভিন্নসময় কথা বলেছি। এমনকি এনসিপির কয়েকজন নেতাও আমাকে বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী পুনর্বাসনের অভিযোগ এবং বিভিন্ন সময় ডা. জারা সহ তাদের নেতাদের পোস্টের আলোকে মন্তব্য করেছি। সারজিসের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব তার দল ও সরকারের। তার যদি চ্যালেঞ্জ করতে এতোই মন চাইতো, তবে সংবাদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন। কিন্তু ৭ মাসেও তিনি সেই চ্যালেঞ্জ করেননি! অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন তিনি এতো আশ্রয়-প্রশয় দেন? কার সহযোগিতায় তানভীর সচিবালয়ে ও এনসিটিবিতে ঢুকলেন? এসবের তদন্তে সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেন তদন্ত কমিটি গঠন করছে না? তাহলেই তো জানা যাবে, সারজিস আলম দোষী না নির্দোষ?


আরএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দক্ষিণ চীন সাগরে চর দখল করলো বেইজিং Apr 28, 2025
img
জীবজন্তু সম্পর্কে ইসলাম কী বলে Apr 28, 2025
img
পহেলগাম কাণ্ডে ভারত-পাকিস্তানকে সংযত হওয়ার বার্তা দিল চীন Apr 28, 2025
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা প্রসঙ্গে যা বললেন আসিফ নজরুল Apr 28, 2025
img
'আমি বর-কনে উভয়পক্ষেরই' বললেন ছোট পর্দার ‘ফুলকি’ Apr 28, 2025
ইরেশ যাকেরের মা/ম''লা নিয়ে যা বললেন ফারুকী Apr 28, 2025
জুলাই আ"ন্দো"ল'নের মামলায় ঢালাও আসামি করার অভিযোগ Apr 28, 2025
টিকটকে জু"য়া"র প্রচারনা, সতর্ক করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জিডি Apr 28, 2025
সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে পাল্টা প্রশ্ন ফারুকীর, উত্তর নেই সাংবাদিকের Apr 28, 2025
পহেলা বৈশাখ নিয়ে সাংবাদিকের ভুল সংশোধন করে যে উত্তর দিলেন উপদেষ্টা ফারুকী Apr 28, 2025