ফররুখ আহমদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি ও শিশু সাহিত্যিকদের অন্যতম। ১৯১৮ সালের ১০ জুন মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে তার জন্ম। তার পিতা খান সাহেব সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর।
বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে কাব্যক্ষেত্রে ফররুখ আহমদের আগমন ঘটে। ১৯৪৪ সনে ২৬ বছর বয়সে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’ প্রকাশিত হয়। কিশোর বয়স থেকেই তিনি কাব্য-চর্চা শুরু করেন।
১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের মর্মন্তুদ দৃশ্য নিয়ে ফররুখ আহমদ অসংখ্য কবিতা রচনা করেন। ওই সময়ে লেখা তার প্রায় ১৯টি কবিতায় দুর্ভিক্ষের চিত্র ফুটে ওঠেছে। তিনি ছিলেন মুসলিম পুনর্জাগরণে বিশ্বাসী।
চল্লিশের দশকে ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন অর্থাৎ পাকিস্তান আন্দোলন প্রবলতর হয়। ওই সময় স্বাধীনতার সপক্ষে গণজাগরণমূলক কবিতা লিখে ফররুখ আহমদ বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।
ফররুখের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্য উল্লেখযোগ্য সাত সাগরের মাঝি, আজাদ কর পাকিস্তান, সিরাজম মুনীরা, নৌফেল ও হাতেম, মুহূর্তের কবিতা, হাতেম তা’য়ী, হে বন্য স্বপ্নেরা, ইকবালের নির্বাচিত কবিতা, কাফেলা, হাবেদা মরুর কাহিনী প্রমুখ। এর মধ্যে ‘সাত সাগরের মাঝি’ ফররুখ আহমদের প্রথম এবং সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।
ফররুখের পূর্ণাঙ্গ সনেট গ্রন্থের মধ্যে ‘মুহূর্তের কবিতা’, ‘দিলরুবা’, ও ‘অনুস্বার’ প্রধান। তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য প্রচুর ছড়া ও কবিতা রচনা করেন।
১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর ইসলামী রেনেসাঁর এই কবি বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর ১৯৭৭ সনে মরণোত্তর একুশে পদক দিয়ে ভাষা আন্দোলনে তার কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ১৯৮০ সালে তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়।
তার একটি উক্তি-
“মৃত্যু আসে তিল তিল শ্রান্তি
ম্লান সুপ্তির বন্ধনে।”