মদ্যপ অবস্থায় হেমার বিয়ে ভেঙে দেন ধর্মেন্দ্র

প্রেমে পড়েছিলেন এক বলিউড অভিনেতার। কিন্তু নায়িকার পরিবার ছিল সেই সম্পর্কের ঘোর বিরোধী। নায়ক যে বিবাহিত, চার সন্তানের পিতা। মেয়ের পরকীয়া সম্পর্ককে কোনও ভাবেই মেনে নিতে রাজি ছিলেন না তাঁর বাবা-মা।

তাই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বলিউডের অন্য নায়কের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন হেমা মালিনীর। বিয়ের দিনই মত্ত অবস্থায় ধর্মেন্দ্র হাজির হয়ে হেমার বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন।
বলিউডের ‘ড্রিম গার্ল’ হেমা। তিনি মন দিয়ে ফেলেছিলেন ‘হি ম্যান’ ধর্মেন্দ্রকে।

কিন্তু ধর্মেন্দ্র তখন বিবাহিত এবং চার সন্তানের পিতা। তবুও হেমা এবং ধর্মেন্দ্রের প্রেম কোনও বাধা না মেনে ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। মেয়ে যে এক বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে প্রেম করছেন তা মানতে পারেনি হেমার পরিবার।ধর্মেন্দ্র-হেমার প্রথম ছবি ‘তু হাসিন ম্যায় জওয়ান’, মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭০ সালে।

ক্যামেরার সামনে প্রেম করতে করতে বাস্তবেই একে অপরের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন দুই তারকা। হেমা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, প্রথম দেখাতেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে, ধর্মেন্দ্র তাঁর মনের মানুষ। ধর্মেন্দ্রের সঙ্গেই সারা জীবন কাটাতে চান তিনি।
 
একসঙ্গে অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন ধর্মেন্দ্র এবং হেমা। সেই ছবিগুলোর মধ্যে ‘শরাফত’, ‘নয়া জমানা’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘দোস্ত’, ‘জুগনু’, ‘আজাদ’, ‘দিল্লাগি’, ‘শোলে’ অন্যতম।
সত্তরের দশকে ধর্মেন্দ্র এবং হেমা, দু’জনেই ক্যারিয়ারের শীর্ষে। পর্দার বাইরেও সে সময় তাঁদের প্রেমের রসায়ন তুঙ্গে। ‘ড্রিম গার্ল’কে দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ না করে পারেননি ধর্মেন্দ্র।

শোনা যায়, ধর্মেন্দ্রকে মনে মনে ভালোবেসে ফেললেও হেমা তাঁর প্রতি নিজের আবেগ প্রকাশ করতেন না। পরে দু’জনের সম্পর্ক আরও গাঢ় হওয়ার পর ধর্মেন্দ্রকে মনের কথা জানিয়েছিলেন হেমা। কিন্তু এই সম্পর্কের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আপত্তি জানিয়েছিলেন হেমার বাবা-মা।

বলিউডের সূত্রে জানা গেছে, হেমার গুণমুগ্ধ ছিলেন জীতেন্দ্র এব‌ং সঞ্জীব কুমারের মতো বলিউড অভিনেতারা। হেমাকে নাকি প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন সঞ্জীব। ‘শোলে’ ছবির সেটেই নাকি হেমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বাঁধতে চেয়েছিলেন সেই নায়ক। কিন্তু কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র।

বলিউডের গুঞ্জন, সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে নাকি হেমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সঞ্জীব। এমনকি হেমার পরিবারকেও সে কথা জানিয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু সঞ্জীবের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হেমা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা। হেমা বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় ভেঙে পড়েছিলেন সঞ্জীব। তবে ‘শোলে’ ছবিতে হেমার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ায় আরও এক বার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
 
শোনা যায় যে, ‘শোলে’ ছবির সেটে হেমাকে আবার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সঞ্জীব। সেই সময়ে ধর্মেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন হেমা। সে কথা জানতেন না সঞ্জীব। দ্বিতীয় বার সঞ্জীবের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হেমা। সে কারণে ধর্মেন্দ্রের রোষেও পড়েছিলেন নায়ক। বলিউডে জনশ্রুতি, সঞ্জীবের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে ‘শোলে’র পরিচালক রমেশের কাছে গিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র।

ধর্মেন্দ্র নাকি রমেশকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, শুটিংয়ের সময় সেটের সকল তারকা এবং ক্রু সদস্যদের জন্য যেন কড়া নিয়মকানুন তৈরি করা হয়। তা ছাড়া ‘শোলে’ ছবিতে সঞ্জীব এবং হেমার একসঙ্গে কোনও দৃশ্য যেন না থাকে, সেই আবদারও করেছিলেন অভিনেতা।

গুঞ্জন ওঠে যে, ধর্মেন্দ্রের জনপ্রিয়তার কারণে তাঁর কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন রমেশ। চিত্রনাট্য এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল যেখানে সঞ্জীব এবং হেমাকে একসঙ্গে কোনও দৃশ্যে শুট করতে না হয়। পাত্র হিসাবে সঞ্জীবকে ফিরিয়ে দিলেও জীতেন্দ্রকে পছন্দ ছিল হেমার বাবা-মায়ের।

শোনা যায়, হেমাকে পছন্দ করতেন জীতেন্দ্রের পরিবারের সদস্যরা। দুই বাড়ির মতেই হেমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন জীতেন্দ্র। তবে তাঁর কাছের এক বন্ধুকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘হেমা আমায় ভালোবাসেন না। আমিও ওকে ভালোবাসি না। কিন্তু আমার বাড়ির লোকেরা সকলেই ওকে পুত্রবধূ হিসাবে পছন্দ করেছেন। তাই আমি অমত জানাইনি। বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছি।’’

হেমার পরিবার ভেবেছিল, জীতেন্দ্রের সঙ্গে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে পারলে হেমার মন থেকে ধর্মেন্দ্রের স্মৃতি মুছে যাবে। তাই তড়িঘড়ি দুই বাড়ির পক্ষ থেকে বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলা হয়েছিল। শোনা যায়, চেন্নাইয়ে (তৎকালীন মাদ্রাজ) হেমা এবং জীতেন্দ্রের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র।
 
জনশ্রুতি রয়েছে, ধর্মেন্দ্র তাঁর এক বান্ধবীকে নিয়ে মত্ত অবস্থায় অনুষ্ঠানবাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। চিৎকার করে হেমাকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘জীতেন্দ্রকে বিয়ে করে তুমি ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছ।’’ ধর্মেন্দ্রের চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসেন হেমার বাবা। ধর্মেন্দ্রকে সকলের সামনে ধমক দিয়েছিলেন তিনি।

হেমার বাবা নাকি ধর্মেন্দ্রকে বলেছিলেন, ‘‘আমার মেয়ের জীবন থেকে তুমি চলে যাও। তুমি বিবাহিত। সন্তান রয়েছে তোমার। আমার মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে পারবে না।’’ অশান্তি থামাতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় চেয়ে নেন হেমা। কিন্তু জীতেন্দ্রের পরিবার হেমার প্রতি ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। ফলে হেমার সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যায় জীতেন্দ্রের।

নায়ক হয়ে ওঠার আগে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালে প্রকাশ কউরকে বিয়ে করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। প্রথম স্ত্রীকে বিবাহবিচ্ছেদ না দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। বহু বছর সম্পর্কে থাকার পর ১৯৮০ সালের মে মাসে হেমাকে বিয়ে করেছিলেন অভিনেতা।

ধর্মেন্দ্র এবং হেমার বিয়ে নিয়ে বলিউডে প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল। অভিনেতার সংসার ভাঙার নেপথ্যে দায়ী করা হয়েছিল হেমাকে। এক সাক্ষাৎকারে হেমা বলেছিলেন, ‘‘আমি ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে করেছি তার অর্থ এমন নয় যে, ওর কাছ থেকে পরিবার কেড়ে নেব।’’

বিয়ের এক বছর পর ১৯৮১ সালে প্রথম কন্যাসন্তান এষা দেওলের জন্ম দেন হেমা। তার চার বছর পর ১৯৮৫ সালে জন্ম দ্বিতীয় কন্যাসন্তান অহনা দেওলের। এখনও দুই পরিবার নিয়েই রয়েছেন ৮৯ বছরের অভিনেতা।

এমআর/টিএ


Share this news on: