টানা তিনদিনের ছুটিতেও কক্সবাজারে পর্যটক কম

বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক মিলে টানা তিনদিনের ছুটি পেয়েছে চাকরিজীবী ও কাজে ব্যস্ত মানুষ। এরপরও উল্লেখ করার মতো পর্যটকের ভিড় নেই কক্সবাজারে।বৃহস্পতিবার প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ রুম বুকিং থাকলেও শুক্রবার (২ মে) এটি ৫০-৪০ শতাংশে নেমে এসেছে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, প্রকৃতিতে বৈশাখের দাবদাহ চলছে। রাতে হালকা ঠান্ডা পড়লেও দিনে উষ্ণ। এমন দিনে পর্যটন জমে কম। তবুও মৌসুমের শেষ টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে বিপুল পরিমাণ পর্যটক আশা করেছিলাম। তেমনটি হয়নি। অনেক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজে মে দিবসের দিনের জন্য আগাম কিছু বুকিং হলেও শুক্রবার অনেক কক্ষ খালি পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখেই রয়েছেন।
 
বিচকর্মী বেলাল হোসেন বলেন, সৈকতে আসা পর্যটকদের সিংহভাগই সকাল থেকে ঢেউয়ের সান্নিধ্য নিতে যান। উত্তাল ঢেউয়ে গোসলরতদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। হ্যান্ড মাইকে এসব বিষয়ে বার বার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকার শাহজাদপুর থেকে কক্সবাজার যাওয়া খায়রুল ইসলাম দম্পতি বলেন, এবার মূল ঘোরাঘুরির সময়টাতে রমজান পড়েছে। এরপর নানা কারণে আর কক্সবাজার আসা হয়নি। কিন্তু মে দিবস ও সাপ্তাহিক মিলে তিনদিন ছুটি পাওয়ায় পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছি। রোববার ফিরবো ঢাকায়। আমাদের মতো আরও অনেকে এসেছেন। বেশ ভালো লাগছে।
 
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মোটামুটি পর্যটক আগমন ঘটেছে। এ সময়ে সেন্টমার্টিন বা অন্য স্পটে যাওয়ার প্রচারণা থাকলে আরও কিছু পর্যটক বাড়তো। কিন্তু গরম, ঠান্ডা মিলিয়ে উল্লেখ করার মতো পর্যটক আগমন ঘটেনি। মৌসুমের শেষ টানা ছুটিটা আশানুরূপ না হলেও কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।

সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের প্রকৃতিও পাল্টেছে। উত্তাল সাগরে নিয়ম মেনে গোসলে নামতে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে যেখানে পতাকা রয়েছে এবং লাইফগার্ড কর্মীরা অবস্থান করছেন সেখানে গোসল করা নিরাপদ।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের রাতযাপনের প্রায় ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে। টানা কয়েকদিনের ছুটি থাকলে বিগত সময়ে ৮০ শতাংশ রুম আগাম বুকিং হতো। কিন্তু এবার আমাদের হোটেলেই হয়েছে ৫০-৫৫ শতাংশ।
 
সি-নাইট হোটেলের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, কিছু তারকা হোটেলে ৮০-৯০ শতাংশ আর গেস্ট হাউজ কটেজে ৭০-৮০ শতাংশ বুকিং হয়। যা গড়ে ৫০-৬০ শতাংশই ধরা যায়। এরপরও প্রায় আবাসনে পর্যটক উপস্থিতি হতাশাগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, মে দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা কয়েকদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়বে, তা মাথায় রেখে অতীতের মতো সৈকত ও পর্যটন স্পটে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। এরপরও কোথাও কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির শিকার হলে পুলিশ বক্স, তথ্য কেন্দ্র বা টুরিস্ট পুলিশ ভবনে এসে জানানোর অনুরোধ করা হয়।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, দেশের প্রধানতম পর্যটন এলাকা হিসেবে কক্সবাজারে সারাবছর পর্যটক সমাগম থাকবে সেটাই সবার কাম্য। সেভাবেই পর্যটক নিরাপত্তায় পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পুরো পর্যটন জোনে টহলে থাকে।

এমআর/টিএ


Share this news on: