বেইলি রোডে ফায়ার ফাইটারদের সাহসিকতায় প্রাণে বাঁচলেন ১৮ জন

রাজধানীর বেইলি রোডে গত সোমবার (৫ মে) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিজেদের সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ১৮ জনকে জীবন রক্ষা করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর, ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শত শত মানুষ করতালির মাধ্যমে ফায়ার ফাইটারদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানায়।

সোমবার সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ টাওয়ারে আগুন লাগে, যা দ্রুত ভবনের একাধিক তলায় ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একের পর এক ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রথমে ৬টি ইউনিট কাজ শুরু করে, পরে আরও ৩টি ইউনিট যোগ দেয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর, রাত ৭টা ৪৭ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনের ভেতরে আটকে পড়া ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন নারী, ৭ জন পুরুষ ও ২ জন শিশু ছিলেন। প্রথমে ছাদ থেকে তিনজনকে উদ্ধার করা হয়, তারপর ধাপে ধাপে বাকিদের নিরাপদে বের করে আনা হয়।

১৮ তলা বিশিষ্ট এই ভবনে ‘বেইলি ডেলি’ নামে একটি ফুড কোর্ট, বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট, বিপণী বিতান, শিশুদের খেলার জায়গা ‘বাবুল্যান্ড’, অফিস এবং আবাসিক ফ্ল্যাট ছিল। অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে ভিড় জমে যায়, অনেকেই দৃশ্য ধারণ করতে এসেছিলেন, আবার কেউ সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তবে এই ভিড়ের কারণে রাস্তার মোড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যারিকেড দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সাধারণ মানুষ ফায়ার সার্ভিসের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়েছেন। ঢাকা মেইলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চাকরিজীবী জিহাদ হোসাইন বলেন, “আমি পাশেই থাকি, খবর পেয়ে চলে এসেছি। বড় দুর্ঘটনা হতে পারত, তবে ফায়ার সার্ভিস দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।” শিক্ষার্থী ফারুক হাসান বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন, পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।”

বেইলি রোড এলাকার দোকানি রফিকুল ইসলাম জানান, “ফায়ার সার্ভিস সাধারণত এমন কাজই করে, তবে প্রতিবার এত দ্রুত ও সফলভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না। এজন্যই মানুষ তাদের করতালি দিয়ে সম্মান জানিয়েছে।”
তবে ভবনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিমা ইসলাম বলেন, “ওই ভবনের বেজমেন্টে ২৬টি গ্যাস সিলিন্ডার ছিল, এবং প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলও রাখা ছিল। আগেও কর্তৃপক্ষকে এগুলো সরানোর পরামর্শ দিয়েছি, ফায়ার স্টিংগুইশারও মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল।”

রাজধানীর বাসিন্দা ও শিক্ষক লিটন ইসলাম মন্তব্য করেন, “এভাবে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট ও বিপণী বিতান চালানোর ফলে ঝুঁকি থেকেই যায়। সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

প্রসঙ্গত, গত বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের আরেকটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন প্রাণ হারান। সে সময় ভবনের নিচ থেকে উপরে ওঠার পথ ধোঁয়ায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই বের হতে পারেননি। যদিও এবার তা হয়নি, তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপ ও সাহসিকতায় এবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, তবে ভবন ব্যবস্থাপনায় গাফিলতির বিষয়গুলো সামনে এসেছে, যা ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কলেজছাত্র চরিত্রে আর অভিনয় করবেন না : জোভান Oct 20, 2025
img
১৬২ আরোহী নিয়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে গেল এয়ারবাস এ৩২০ বিমান Oct 20, 2025
img
টি-টোয়েন্টিতে দারুণ মাইলফলক গড়লেন হ্যারি ব্রুক Oct 20, 2025
img
সালমান শাহর মৃত্যু : হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ Oct 20, 2025
img
নীলনকশার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে: ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী Oct 20, 2025
img
এবার বিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খুললেন সামান্থা Oct 20, 2025
img
মিরপুরে স্পিন শক্তি বাড়াতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ স্পিনার Oct 20, 2025
img
সালমান শাহ হত্যার বিচারের দাবিতে জজ কোর্টে ভক্তরা Oct 20, 2025
img
আগামী সংসদে নির্ধারকের ভূমিকায় থাকবে এনসিপি: সারজিস Oct 20, 2025
img
ভিসা জটিলতায় ২৪ কোটি টাকার গলফ টুর্নামেন্ট খেলতে পারছেন না সিদ্দিক Oct 20, 2025
img
দেশের পরিচালকরা আমাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেননি : জয়া আহসান Oct 20, 2025
img
একের পর এক বিয়ের প্রস্তাবে বিব্রত হিরো আলম Oct 20, 2025
img
বগুড়ায় সারজিস আলমের গাড়িবহরে হামলা Oct 20, 2025
img
আ. লীগের আগে জামায়াতের নিষিদ্ধ হওয়া উচিত ছিল : বরকত উল্লাহ বুলু Oct 20, 2025
img
কুখ্যাত চীনা সাইবার স্ক্যাম হাব ধ্বংসের দাবি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর Oct 20, 2025
img
বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়া এনসিপির জন্য সঙ্গতিপূর্ণ : জাহেদ উর রহমান Oct 20, 2025
নবীজির চমৎকার একটি ঘটনা | ইসলামিক জ্ঞান Oct 20, 2025
img
গ্রাহাম পটারকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দিলো সুইডেন Oct 20, 2025
img
রাজনীতিতে অনৈক্যের সুর : মির্জা ফখরুল Oct 20, 2025
ভাষা শহিদদের অবমাননা করলেন শিক্ষকরা! Oct 20, 2025