ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে পানি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাকিস্তানের

জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার বলেছেন, পহেলগাম হামলার পর প্রতিপক্ষ ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ইসলামাবাদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে।

মঙ্গলবার (৬ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সামা টিভি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) একটি ইন-ক্যামেরা বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করে তিনি বলেন, কাশ্মীর বিরোধ আজও অমীমাংসিত, যা পঁচাত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, কাশ্মীর ইস্যুই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মূল বিরোধ এবং এটি অবশ্যই কাশ্মীরিদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে। কাশ্মীরিদের সম্পৃক্ততা ছাড়া এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব নয়।

রাষ্ট্রদূত ইফতিখার আরও বলেন, এই মূল সমস্যার সমাধান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি কখনোই আসবে না।

ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর (আইআইওজেকে)-এ মানবাধিকার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে নিরীহ সাধারণ মানুষ এখনও দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন ভারতীয় বাহিনীর হাতে।

পহেলগাম হামলা নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, পাকিস্তান একাধিকবার বলেছে এবং আবারও বলছে যে এই ঘটনায় আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা স্বাধীন, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেন, সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক লড়াইয়ে পাকিস্তান সম্মুখসারির রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করেছে এবং ৯০,০০০-এর বেশি প্রাণ উৎসর্গ করেছে।

রাষ্ট্রদূত ইফতিখার পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।

ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি জানান, এই বিষয়টিও নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই শান্তির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন অপরিহার্য। পাকিস্তান সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংলাপই শান্তির একমাত্র টেকসই পথ।
রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তা পরিষদকে বৈঠক আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা।

বৈঠকের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব খালেদ খিয়ারি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্যে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। পরে রাষ্ট্রদূত ইফতিখার কাশ্মীর ও পানি ইস্যুতে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।

১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগেই জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ভারত ও পাকিস্তানকে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কাশ্মীরে সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

আরআর/এসএন

Share this news on: