যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতের সাধারণ মানুষ

বাতাসে যুদ্ধের শঙ্কা—সম্ভাব্য ভয়াবহ সামরিক সংঘাত শুরু হতে পারে এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে কী করণীয়? বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজলে জনগণ কেমনভাবে সাড়া দেবে? এসব বিবেচনায় নয়াদিল্লি থেকে বিভিন্ন রাজ্যকে মহড়া পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ভারতের সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা থেকেই আগাম প্রস্ততি শুরু করেছে নয়াদিল্লি। তারই অংশ হিসেবে একাধিক রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে 'সিভিল ডিফেন্স ড্রিল' বা বেসামরিক প্রতিরক্ষা মহড়া পরিচালনার।

মঙ্গলবার (৬ মে) ভারতের সরকারি সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে, দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে নাগরিকদের অবহিত করতে এই মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম এত বড় পরিসরে সিভিল ডিফেন্স মহড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সীমান্তে প্রতিরক্ষা বাহিনীও বড় পরিসরে যুদ্ধ মহড়া শুরু করেছে।

রাজস্থান সীমান্তে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ‘প্রি-প্ল্যানড ট্রেনিং এক্সারসাইজ’ শুরুর মধ্যেই এই উদ্যোগের তাৎপর্য নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি যুদ্ধের সম্ভাবনার দিকেই ইঙ্গিত করছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৩০০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই মহড়া চলবে, যার মধ্যে রয়েছে দিল্লি, পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর ও গুজরাটের মতো সীমান্তবর্তী ও কৌশলগত এলাকাগুলি।

এই মহড়ার আওতায় মানুষকে শেখানো হচ্ছে কীভাবে বিমান হামলার সাইরেন শুনলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে, কোথায় লুকাতে হবে, কীভাবে ব্ল্যাকআউটের সময় কাজ করতে হবে, এবং জরুরি প্রয়োজনে কীভাবে নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করতে হবে।

পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে ইতিমধ্যেই একাধিকবার রাতের বেলা ব্ল্যাকআউট মহড়া হয়েছে। সেনাবাহিনী স্থানীয় বিদ্যুৎ দফতরের সহযোগিতায় নির্ধারিত সময়ের জন্য পুরো শহরকে অন্ধকারে ডুবিয়ে মহড়া চালায়। সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মীদেরও এই মহড়ায় অংশ নিতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পেহেলগাম হামলার জেরে নয়াদিল্লিতে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাতে সরকারের প্রতিক্রিয়া শুধু কূটনৈতিক নয়, সামরিক প্রতিশোধের দিকেও গড়াতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের পরপর কয়েকটি বৈঠক সেই বার্তাই দিচ্ছে।

এদিকে, পাকিস্তানও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে। সীমান্ত বন্ধ, ভিসা বাতিল, এবং সামরিক মহড়াসহ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে।

তীব্র এই স্নায়ুযুদ্ধের আবহে ভারতের সাধারণ মানুষ এখন যুদ্ধকালীন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি যতই উত্তপ্ত হোক তা সামরিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, যুদ্ধ হলে তা কারো জন্যই সুখকর হবে না।

আরএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ৮ জন May 07, 2025
img
ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতি করার দাবি পাকিস্তানের May 07, 2025
img
ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন যুবক May 07, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের ওপর ছাত্রদল নেতার হামলা May 07, 2025
img
ভারতের আরও একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত, সবমিলিয়ে দাঁড়াল ৩ May 07, 2025
img
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানীতে বিস্ফোরণ! May 07, 2025
img
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে নারীর পাশে দাঁড়াতে হবে : উপদেষ্টা May 07, 2025
img
ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আহছানিয়া মিশনের ৯ পরামর্শ May 07, 2025
দেশে ফিরেই অসুস্থ মাকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে ডা. জুবাইদা রহমান May 07, 2025
img
ইতিহাস গড়েও সেমিফাইনাল শেষে বার্সার স্বপ্নভঙ্গ May 07, 2025