পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ভারতের মধ্যরাতের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, বুধবার (৭ মে) মধ্যরাতে সংঘটিত এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছে। এর আগে ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হওয়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের বিনা উসকানিতে অব্যাহত গোলাবর্ষণ এবং যুদ্ধবিরতির চরম লঙ্ঘন।
অন্যদিকে ভারতের দাবি, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতশাসিত কাশ্মীরে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং আরও ৪৩ জন আহত হয়েছেন।
এই হামলার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ভাষণে তিনি ভারতের এই হামলাকে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “ভারত এর মূল্য দেবে।” তিনি আরও বলেন, “ভারত হয়তো ভেবেছিল পাকিস্তান পিছু হটবে, কিন্তু তারা ভুলে গেছে যে এটি এমন একটি জাতি, যারা দেশের জন্য লড়াই করতে জানে।”
ভাষণে তিনি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার ইঙ্গিতও দেন। জানান, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী প্রতিরক্ষা গড়ে তুলে পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে নয়াদিল্লি এখনও কোনো বিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি।
তিনি আরও বলেন, নিহতদের মধ্যে সাত বছর বয়সী একটি শিশুও রয়েছে, যেটি তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে অবস্থান করছিল। এই ঘটনা উল্লেখ করে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “নিহতদের প্রতিটি রক্তের ফোঁটার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।”
গত মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত হামলা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের অনুরোধ ও তথ্য উপেক্ষা করে পাকিস্তানকে ভুলভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছিলাম।” তিনি দেশবাসীকে সাহস ও সংহতির সঙ্গে দেশের নিরাপত্তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ভারত-পাকিস্তানের চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে নিয়ন্ত্রণ রেখার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের সুচেতগড় ও জেওরা ফার্ম গ্রাম থেকে মানুষদের গাড়ি ও অস্থায়ী ট্রেলারে করে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। ভারতের পাঞ্জাবের কিছু গ্রামের মানুষও বাড়িঘর খালি করে দূরের গ্রাম বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে করে মালপত্র নিয়ে যাচ্ছে তারা।
বিবিসির সঙ্গে কথা বলা সীমান্তের কয়েকটি পরিবার জানিয়েছে, তারা নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। তবে প্রতিটি পরিবারের একজন বা দুইজন সদস্য সম্পত্তি ও জমিজমা রক্ষার জন্য গ্রামেই থাকছেন।
ভারতের ফিরোজপুর জেলার হুসেনিওয়ালা সীমান্তের কাছে সরাসরি সংযুক্ত প্রায় ১২ থেকে ১৪টি গ্রামে ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছে। সেখানকার ঝুগে হাজারা সিং গ্রামের বাসিন্দা জিৎ সিং বলেন, “এখানে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মানুষ আত্মীয়দের বাড়িতে চলে যাচ্ছে।”
এসএস