কি হচ্ছে তাবলিগে?

তাবলিগ জামাতের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। কবে এর সমাধান হবে এমন কোনো তথ্যও মিলছে না কারো কাছে। তাই সারা দেশের তাবলিগ সদস্যদের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ও হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সমাধান নিয়ে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

কি হচ্ছে তাবলিগ জামাতে?

এই প্রশ্ন তাবলিগের প্রায় ৯০ ভাগ ভক্ত, সমর্থক ও সদস্যদের। মঙ্গলবার তাবলিগ ভক্ত, সমর্থক ও সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

জুবায়ের আহমেদ নামের এক তাবলিগ সদস্য জানান, তাবলিগ একটি দীনি প্রতিষ্ঠানের নাম। যেখানে এক মাত্র কাজ আল্লাহকে ভয় করে সহী তরিকায় ইসলামের দাওয়াতী কাজ করা। সেখানে কোনো ধরনের নেতৃত্ব বা পদ পদবীর লোভ থাকার কথা নয়। কিন্তু সম্প্রতি তাবলিগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রথমে নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এক পর্যায়ে ওই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে বিষয়টি আংশিক সমাধান হলেও বর্তমানে ফের দু’পক্ষ দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে। তাই সাধারণ সদস্যদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। আবার কারো কারো মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে এর সমাধান কিভাবে, কবে হবে তা নিয়ে কেউ কিছু বলছে না বলে জানান জুবায়ের আহমেদ।

আব্দুর রহমান নামের আরেক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাবলিগের মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব দেখা দিবে তা কখনো ভাবি নাই। তবে যা হচ্ছে তা অবশ্যই দুঃখজনক। এ সংকট নিরসের উপায় কবে, কিভাবে হবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমি অনেক মুরব্বিদের কাছে দ্বন্দ্বের সমাধান সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু কেউই ওই প্রশ্নের উত্তর দিতে চান না।

মুরব্বিদের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে সেটার সমাধান কী হবে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রায়ই কাকরাইল জামে মসজিদ যান পুরান ঢাকার ইব্রাহিম আলী নামের এক তাবলিগ সদস্য। তিনি জানান, তাবলিগের সবাই হতাশ। কেউ এর সমাধান জানেন না। আল্লাহ এর ভালো সমাধান জানেন।

তবে ভক্তদের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশ টাইমসের এই প্রতিবেদকও ব্যর্থ হয়েছেন। উভয় পক্ষের মুরব্বিরা সামাধানের পথ না খুঁজে একে অপরের উপর দোষারূপে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

মঙ্গলবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একে অপরের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশে করতে দেখা গেছে।

তাবলিগ সূত্রে জানা গেছে, আমির নির্ধারণকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে তাবলিগ জামাত। আর ওই দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছেন মোহাম্মদ সা'দ কান্দালভি। এক পক্ষ তাকে সারা বিশ্বের আমীর নির্বাচিত করেছেন। অপর পক্ষ তার নেতৃত্ব মানতে নারাজ। এই দ্বন্দ্বের রেশ কাটতে না কাটতেই ২০১৭ সালে টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়ে যায়। ওই সময় মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভি টঙ্গি ইজতেমায় অংশ নিতে ঢাকায় আসেন।

কিন্তু অপর পক্ষের বাধায় তিনি টঙ্গিতে না গিয়ে ভারতে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রায় কয়েক মাস প্রকাশ্যে ওই দ্বন্দ্ব দেখা না গেলেও এবার ইজতেমার প্রস্তুতি নেয়াকে কন্দ্রে করে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর তাবলিগের মাওলানা সাদ আহমাদ কান্ধলভী ও মাওলানা জোবায়ের আহমেদ সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে ইসমাইল মন্ডল (৭০) নামের একজন নিহত হন। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের মিলকিপাড়া গ্রামে। এছাড়াও আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ।

পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান মিয়া কামলা উভয় পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং নির্বাচনের আগে টঙ্গি ময়দানে কেউ সমাবেশ করতে পারবেন না বলে ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তবে জোবায়ের পক্ষের লোকজন সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এছাড়া সোমবার প্রথমবারের মত সাদ অনুসারীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য উপস্থাপর করেন।  

সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ একে অপরের বিপক্ষে মামলাও দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাদ অনুসারী বাংলাদেশের আমীর মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, আমরা বিষয়টি সমাধানের পক্ষে। কিন্তু তারা বিষয়টি সমাধান না করে উল্টো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে লিপ্ত রয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে মাওলানা জোবায়ের আহমেদ পক্ষের দায়িত্বশীল এক নেতা বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, আমরা বিষয়টি সমাধান করতে চাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সমাধান হচ্ছে না।

 

টাইমস/কেআর/টিএইচ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রেকর্ড শাটডাউনে অচল যুক্তরাষ্ট্র, বাতিল হাজারো ফ্লাইট Nov 07, 2025
img
সরকার না পারলেও বিএনপি নির্বাচনের আবহ তৈরি করতে পেরেছে : জিল্লুর রহমান Nov 07, 2025
img
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যেই করুক ছাড় দেবে না পুলিশ: ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি Nov 07, 2025
img
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ফ্রান্সের স্কোয়াড ঘোষণা, নেই তিন তারকা Nov 07, 2025
img
বাংলা ধারাবাহিকের ভিত্তি পার্শ্বচরিত্র : সুব্রত গুহরায় Nov 07, 2025
img
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ১১ কোটি ডলারের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান হবে ৭৬০৭ জনের Nov 07, 2025
img
টলিউডে টিকে থাকতে মাটির পা জরুরি : সন্দীপ্তা সেন Nov 07, 2025
img
দেশের দুই বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস Nov 07, 2025
img
ফিফার বর্ষসেরা হওয়ার দৌড়ে ১১ জন, মেসি ও রোনালদো ভিন্ন তালিকায় Nov 07, 2025
img
সম্পর্ক মানে শর্ত নয়, বোঝাপড়া : অপরাজিতা আঢ্য Nov 07, 2025
img
ডিএসইর বাজার মূলধন হারাল আরও ৮৬৩২ কোটি টাকা Nov 07, 2025
img
মালদ্বীপে অবৈধ বর্জ্য তেল বিক্রির ঘটনায় ৫ বাংলাদেশি গ্রেফতার Nov 07, 2025
img
দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ Nov 07, 2025
img
বাবার উপস্থিতির প্রতীক খুঁজছেন পল্লবী শর্মা Nov 07, 2025
img
ইরান ইস্যুতে ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপ Nov 07, 2025
img
সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হতে যাচ্ছে কাজাখস্তান Nov 07, 2025
img
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল জাতিসংঘ Nov 07, 2025
img
মাইকিং করে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মারামারির ঘোষণা বড় ভাইয়ের Nov 07, 2025
img
বিমানবন্দরে কুকুরের উৎপাত, পাইলটের বুদ্ধিমত্তায় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা Nov 07, 2025
img
বিএসইসির নতুন ‘মার্জিন রুলস, ২০২৫’ জারি, গেজেট প্রকাশ Nov 07, 2025