হজ ইসলামের একটি মহান ইবাদত—যা মুসলমানদের জীবনে এক অভূতপূর্ব আত্মিক ভ্রমণ। এই সফরটি আল্লাহর ঘরে যাওয়ার আমন্ত্রণ। তাই হজে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আত্মিক, আর্থিক ও শারীরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি, যাতে হজ কবুল হয় এবং তা জীবনে সত্যিকারের পরিবর্তন আনে।
১. নিয়ত ও ইখলাস (نِيَّة وَإِخْلَاص)
আল্লাহ তাআলা বলেন, وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ তাদেরকে আদেশ করা হয়নি কিন্তু এই জন্য যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে। (সুরা আল-বাইয়্যিনাহ: ৫)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى. নিশ্চয়ই সকল কাজ নিয়তের ওপর নির্ভর করে, আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য রয়েছে যা সে নিয়ত করে। (সহিহ বুখারি: ১, মুসলিম: ১৯০৭) ব্যাখ্যা: হজের পূর্বে মনে রাখতে হবে যে, এটি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং তাঁর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।
২. হালাল উপার্জন থেকে খরচ করা
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্র (হালাল) জিনিসই গ্রহণ করেন। (সহিহ মুসলিম: ১০১৫) ব্যাখ্যা: হজে যাওয়ার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে, হজের ব্যয় হালাল উপার্জন থেকে হচ্ছে।
হারাম আয়ের মাধ্যমে হজ কবুল হয় না।
৩. ফরজ ইলম শিক্ষা নেওয়া (হজের মাসাইল জানা)
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। (ইবনু মাজাহ: ২২৪) ব্যাখ্যা: হজের সঠিক পদ্ধতি শিখে যাওয়া জরুরি, যাতে বিদআত বা ভুল পদ্ধতি থেকে বাঁচা যায়। হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতগুলো জানা অপরিহার্য।
৪. তওবা করা ও হারাম থেকে বিরত থাকা
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে তওবা করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো। (সুরা আন-নুর: ৩১) ব্যাখ্যা: হজের পূর্বে আন্তরিকভাবে তওবা করা উচিত এবং জুলুম, সুদ, গিবত, হিংসা ইত্যাদি গুনাহ থেকে ফিরে আসা জরুরি।
৫. দেনা-পাওনা পরিশোধ করা ও মানুষের হক আদায় করা
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لِأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ مِنْ شَيْءٍ، فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ যার ওপর কারো হক রয়ে গেছে (সম্মান বা সম্পদে), সে যেন আজই তা পরিশোধ করে নেয়। (সহিহ বুখারি: ২৪৪৯) ব্যাখ্যা: হজে যাওয়ার পূর্বে সবার হক আদায় করা এবং দেনাদারের কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া কর্তব্য।
৬. হজের সামগ্রী প্রস্তুত করা ও নিরাপদ সফরের পরিকল্পনা করা। ব্যাখ্যা: হজের প্রস্তুতিমূলক কাজ যেমন ইহরামের কাপড়, প্রয়োজনীয় ওষুধ, পরিচয়পত্র, এবং ভ্রমণের কাগজপত্র প্রস্তুত করা জরুরি। হজ এজেন্সি বা কাফেলার সাথে সমন্বয় করা উচিত।
৭. আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও মুসলিম ভাইদের কাছে দুআ চাওয়া ও বিদায় নেওয়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمُ السَّفَرَ، فَلْيُوَدِّعْ إِخْوَانَهُ، فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي بِمَا تَقْضِي الْمَنِيَّةُ তোমাদের কেউ সফরে যাওয়ার সময় যেন তার ভাইদের থেকে বিদায় নিয়েযায়, কেননা সে জানে না মৃত্যু কবে আসবে। (মুসনাদ আহমদ: ১৪৩২৮)
হজ একটি মহান ইবাদত, যা আল্লাহর ঘরের দিকে রওনা দিয়ে তার নৈকট্য লাভের এক অনন্য সুযোগ। তাই এর পূর্বে আত্মশুদ্ধি,হজে যাওয়ার আগে ও হজের সময় অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা, ছবি তোলা বা আত্মপ্রদর্শনের পরিবর্তে ইবাদত, তাওবা, কোরআন তিলাওয়াত এবং হজের মূল রুকনগুলো ঠিকভাবে পালনে মনোযোগী হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের হজ্জে মাবরুর নসিব করুন আমিন।
আরএম/এসএন