কুড়িগ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে স্কুলশিক্ষার্থী জান্নাতিকে তার বাবা হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মেয়েকে হত্যার অভিযোগে রোববার (১১ মে) রাতে জান্নাতির বাবা জাহেদুলকে গ্রেফতার করেছে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। একই সাথে জান্নাতির মা মোর্শেদা ও বড় চাচি কহিনুর বেগমকে আটক করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুল্লাহ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জান্নাতির বাবা জাহেদুলের দেওয়া তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওসি।
এর আগে গত শনিবার (১০ মে) সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে নিজ বসতবাড়ির পাশে কৃষিজমি থেকে জান্নাতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় জান্নাতির চাচা খলিল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।
জান্নাতির পরিবারের দাবি, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন রাতের বেলা জান্নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখে। তবে তাদের এমন দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জান্নাতির বাবা জাহেদুল ও চাচা খলিলের সাথে একই এলাকার মকবুল পাটোয়ারি গংয়ের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এছাড়াও খলিল ও জাহেদুলের আপন ছোট ভাই রফিকুলের সাথেও জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান। এসব নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মামলাও রয়েছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গরু-ছাগল চুরি, খড়ের গাদায় আগুন দেওয়াসহ পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।
জাহেদুল ও তার বড় ভাই খলিল জমি নিয়ে তাদের আপন ভাই রফিকুল ও তার স্ত্রী হালি বেগমকেও মারধর করেন। রফিকুল বাদী হয়ে মামলাও করেছেন। কিন্তু জাহেদুল ও খলিলের ভয়ে তারা কয়েক মাস এলাকাছাড়া ছিলেন। জাহেদুল ও খলিল প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ছোট ভাই রফিকুল ও তার স্ত্রীকে মারার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ হালি বেগমের।
হালি বেগম বলেন, স্বামীর আপন ভাই খলিল, জাহেদুল ও একরামুলরা পিটিয়ে আমার হাত-পা ভাঙি দিয়েছে। স্বামীসহ আমাকে মারার বুদ্ধি করছিল। আমাদের মেরে ফেলে মেয়েকে ফাঁসাবে। এটা জানার পর আমি বাড়ি ছেড়ে গেছিলাম।
রফিকুল ইসলাম বলেন, জাহেদুল খুব খারাপ লোক। খলিল আর একরামুল মিলিয়ে আমাকে মেরে পাটোয়ারিসহ খন্দকার গোষ্ঠীকে ফাঁসানোর প্ল্যান করছিল। ওরা আমাকে পেলে এক ঘণ্টার মধ্যে মেরে ফেলবে। ওরা নিজের মেয়েকে নিজে মারছে। এটার কোনো ভুল নাই।
আপন ভাইদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণ জানতে চাইলে এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল বলেন, আমার পাঁচ বিঘা জমি ওরা আবাদ করতে দেয় না। আমি বন্ধক রাখছি। সেই বন্ধক নেওয়া লোকদেরও জমিতে নামতে দেয় না। এ নিয়ে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে মেরে ফেলতে চাইছে। আমি মামলাও করেছি।
জাহেদুলকে গ্রেফতা্রের খবরে এলাকাবাসীর অভিযোগ, জান্নাতিকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর পেছনে শুধু জাহেদুল নয় তার বড় ভাই খলিলের প্রত্যক্ষ মদদ থাকতে পারে। এলাকায় খলিলের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত রুহল আমিন ওরফে উকিল এবং আব্দুল কাদের নামে দুই প্রতিবেশী খলিল ও জাহেদুলকে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে এ নিয়ে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুল্লাহ জানান, তদন্তে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় জান্নাতির বাবা জাহেদুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও জান্নাতির মা ও চাচিকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আর কারও সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।
এফপি/টিএ