শেষ হলো পিকেকের ৪০ বছরের লড়াই

অবশেষে বিলুপ্ত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম আলোচিত সশস্ত্র গোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। তুরস্কের বিরুদ্ধে ৪০ বছর ধরে বিদ্রোহ চালানো কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র রাজনৈতিক দল পিকেকে অস্ত্র সমর্পণ ও দল বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে অবসান ঘটতে যাচ্ছে তুরস্ক-পিকেকের ৪০ বছর ধরে চলা সংঘাতের।


গতকাল সোমবার (১২ মে) গোষ্ঠীটির ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম ফিরাত নিউজ এজেন্সির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

পাশাপাশি সংগঠনটির স্বাধীন ও সার্বভৌম কুর্দিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নেও ইতি ঘটল। গত রবিবার স্বেচ্ছায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছে গোষ্ঠীটি।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দলটির কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওজালান দল বিলুপ্ত করে দিতে বাইরে থাকা নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় অস্ত্র পরিত্যাগ ও দল আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেওয়ার এ ঘোষণা এলো।

তুরস্কের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ কুর্দি, তাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেছিল পিকেকে। পরে তারা সেখান থেকে সরে এসে কুর্দি অঞ্চলগুলোর আরো স্বায়ত্তশাসন এবং কুর্দিদের অধিকার রক্ষায় বেশি মনোযোগ দেওয়া শুরু করে। তাদের বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।

তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র পিকেকে-কে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তকমা দিয়েছে।

দল বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া বিবৃতিতে এ কুর্দি গেরিলারা বলেছেন, তাঁরা তাঁদের ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে’, তাই ‘সশস্ত্র লড়াইয়ের পথ পরিত্যাগ করা হচ্ছে’।

এখন থেকে কুর্দিদের যাবতীয় সংকটের ‘সমাধান গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমেই করা যাবে’, পিকেকে সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা এএনএফে এমনটাই বলেছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি।

৭৬ বছর বয়সী ওজালান ফেব্রুয়ারিতে তার বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণ করে সংগঠন গুটিয়ে নেওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। ওই সময় কারাগার থেকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অভীষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা ও তার বাস্তবায়নে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক ঐকমত্যই মূল পথ।

পিকেকের এই নেতা ১৯৯৯ সাল থেকে ইস্তাম্বুলের দক্ষিণ-পশ্চিমে মর্মর সাগরের একটি দ্বীপে কারাগারের একটি নির্জন সেলে বন্দি আছেন। দল বিলুপ্ত করার বিনিময়ে ওজালান ও তার সমর্থকরা কী পাবে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি, তবে এ সিদ্ধান্তের পথ ধরে ওজালান জামিনে ছাড়া পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুর্কি সেনাদের কাছে পিকেকে ব্যাপকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে ইরাক ও সিরিয়ায় সশস্ত্র এ দল এবং তাঁর সহযোগীদের কাজ করাও কঠিন হয়ে উঠছে।

এসএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ