ছোটবেলা থেকেই ভীষণ খেলাপ্রেমী। রাত জেগে দেখতেন আন্তর্জাতিক ক্লাবের প্রায় সব খেলা। সেটা হোক ক্রিকেট কিংবা ফুটবল, কোনোটাই মিস করতেন না। আরেকটা বিষয় চাইলেও মিস করতে পারতেন না, সেটা হলো সংবাদপত্র পড়া, তা-ও সেটা বাবার কারণে।
কোনো দিন পত্রিকা না পড়লে রাতে বাসায় খাবার বন্ধ থাকত বলেও জানান তিনি। বলছি, মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে খেলাধুলাবিষয়ক শো উপস্থাপনায় পারদর্শী নুসরাত জেরিন মুনের কথা।
শুরুটা হয়েছিল আরজে হিসেবে, সেটাও আবার মুন্সীগঞ্জেই। সেখানকার স্থানীয় কমিউনিটি এফএমএ অনেকটা শখের বশেই রেডিও জকি হিসেবে কাজ শুরু করেন।
বছরখানেক পর ডাক পান ডিএনসিসি মেয়র কাপ টুর্নামেন্ট উপস্থাপনা করার। সেই থেকে শুরু, এর পর থেকে শুধু টুর্নামেন্টই নয়, টেলিভিশন শো, করপোরেট শো, বিনোদন বিষয়ক শো—সবখানেই যেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছেন এই লাস্যময়ী তরুণী। তার ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে, দম ফেলারই যেন নেই ফুরসত।
নুসরাত জেরিন বলেন, ‘রেডিও জকি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম অনেকটা শখের বশেই।ফেসবুকে সার্কুলার দেখে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু প্রথমে তারা আগ্রহী হননি, শুধু ফেসবুকে অনেক ফলোয়ার নেই বলে। পরে সেখান থেকে চলে আসি। কিছুদিন পরেই তারা আমাকে ডাকেন এবং কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই অনএয়ার শোতে বসিয়ে দেন। আমি জাস্ট শোটা কন্টিনিউ করি এবং তারা এতে বেশ মুগ্ধ হন, করতালি দেওয়া শুরু করেন।
এরপর প্রায় বছরখানেক কন্টিনিউ করেছিলাম এটা। এরপর হঠাৎ করেই উপস্থাপনা করার জন্য ডাক পাই ডিএনসিসি মেয়র কাপ টুর্নামেন্টে। উপস্থাপনা ভালো লাগায় তারা সেটা কন্টিনিউ করতে বলেন, আমিও সেটা করি। এরপর টেলিভিশন থেকে ডাক পাই শো উপস্থাপনা করার। এনটিভির ‘আজকের দুপুর’ দিয়ে শুরু, এরপর বিভিন্ন টেলিভিশনের বহু শো করেছি এই দুই বছরে, যা আমার জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। এখন তো ব্যস্ততাও প্রচুর।’
.
‘বাবার স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কাজ করার। কোনোটাই হলো না। মাস্টার্স শেষ করার পর উপস্থাপনায় জড়িয়ে গেলাম। যেহেতু খেলাধুলার প্রতি প্রেম আমার ছোটবেলা থেকেই তাই এই ধরনের শোগুলোই আমার বেশি করা হয়। না চাইতেই অল্প সময়ে অনেক কিছু পেয়ে গেছি। এখন আমার স্বপ্ন একটাই, খেলাধুলা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করতে চাই। সেটা হোক উপস্থাপনা কিংবা যেকোনো কিছু।’—যোগ করেন তরুণ এই উপস্থাপিকা।
যা নিয়ে বেড়ে ওঠেছেন, সেসব প্রতিষ্ঠান কিংবা তাদের সঙ্গে কখনো কাজ করবেন সেটাও কখনো ভাবেননি তিনি। কখনো এ রকম ইচ্ছাও ছিল না, যার কারণে পুরো বিষয়টা তার কাছে ম্যাজিক্যাল মনে হয়। নুসরাত জেরিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ত ভীষণ খেলাপ্রেমী। কোনো খেলা দেখা মিস করতাম না। এখন খেলা নিয়েই শো করি। আরেকটা মজার বিষয় হলো, আমাদের বাসায় সব সময় একতা পত্রিকা রাখা হতো। বাবা চাইতেন আমরা দুই বোন যেন প্রতিদিন পত্রিকা পড়ি।
কোনোভাবেই মিস দেওয়া যেত না। পত্রিকা না পড়লে সেদিন খাওয়া বন্ধ। সেই সুবাদে প্রচুর পত্রিকা পড়া হতো। পত্রিকা পড়ে অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। পড়াশোনার বাইরে এখন পর্যন্ত যা জ্ঞান অর্জন করেছি তা শুধু এই পত্রিকাটা থেকে। ছোটবেলা থেকে যে পত্রিকা পড়ে বড় হয়েছি তাদেরও অনেকগুলো শো করেছি আমি। যেটা আমার জন্য অন্য রকম ভালো লাগার।
উপস্থাপনায় ক্যারিয়ার মাত্র দুই বছরের। এই সময়েই দর্শকের অগণিত ভালোবাসা পেয়েছেন বলে জানান তিনি। খেলাধুলা বিষয়ক শো করতেই তার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। পাশাপাশি বিনোদনেও রয়েছে মন। মডেলিং কিংবা অভিনয়ের অসংখ্য প্রস্তাব পেয়েছেন তবে ফিরিয়ে দিয়েছেন বিনয়ের সঙ্গে। উপস্থাপনায় থিতু হলেও মুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়) ফ্যাকাল্টি হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের লেকচারার তিনি।
এমআর/এসএন