সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মহাবিশ্ব বিজ্ঞানীদের আগের ধারণার তুলনায় অনেক দ্রুত বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে।
ডাচ বিজ্ঞানীদের পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মহাবিশ্ব প্রায় ১০⁷⁸ বছর পর ‘হকিং রেডিয়েশন’ নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে বিলীন হয়ে যাবে। এই সংখ্যাটি ১-এর পর ৭৮টি শূন্যযুক্ত—astronomically বিশাল সময়।
তাত্ত্বিকভাবে, ‘হকিং রেডিয়েশন’ এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্ল্যাক হোল থেকেও শক্তি বা বিকিরণ নিঃসরণ ঘটতে পারে। ১৯৭৪ সালে এই ধারণাটি প্রথম দেন বিখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং।
বিজ্ঞানীদের আগের অনুমান ছিল, এ প্রক্রিয়া ঘটতে প্রায় ১০^১১০০ বছর সময় নেবে। নতুন গবেষণায় এ ধারণা পাল্টে গিয়েছে তাদের।
মহাবিশ্বের ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সাদা বামন তারার পুরোপুরি ক্ষয় হতে এ সময়টিই লাগবে। এসব তারা মহাবিশ্বের সবচেয়ে টেকসই বস্তু। তাই এগুলোই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে টিকে থাকবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
নতুন এ গবেষণাটি ২০২৩ সালের এক গবেষণার ধারাবাহিকতা থেকে করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে দেখা গিয়েছিল, কেবল ব্ল্যাক হোলই নয়, বরং অন্য বিভিন্ন বস্তুও ‘হকিং রেডিয়েশন’ নামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘বাষ্পীভূত’ হতে পারে।
নতুন এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন, এ ঘটনা পুরোপুরি শেষ হতে ঠিক কত সময় লাগবে।
এ গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও ব্ল্যাক হোল বিশেষজ্ঞ হেইনো ফাল্কে বলেছেন, “মহাবিশ্বের চূড়ান্ত সমাপ্তি আগের ধারণার চেয়ে অনেক আগেই ঘটবে। তবে সৌভাগ্যক্রমে সেটি ঘটতে এখনও অনেক সময় লাগবে।”
এ গবেষণার ভিত্তি হচ্ছে ‘হকিং রেডিয়েশন’। এ তত্ত্বটি প্রস্তাবের সময় স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, ব্ল্যাক হোল থেকেও কৃষ্ণকণা ও রেডিয়েশন বা বিকিরণ বের হয়ে আসতে পারে। এ সময় ব্ল্যাক হোলের প্রান্তে দুটি কণা তৈরি হয়, একটি কণা ব্ল্যাক হোল শুষে নেয়, আর অন্যটি বেরিয়ে যায়।
এ প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে ব্ল্যাক হোল ক্ষয় হতে শুরু করে এবং একসময় তা কণা ও রেডিয়েশনে পরিণত হয়।
গবেষকরা বলছেন, একটি বস্তু পুরোপুরি বাষ্পীভূত হতে কত সময় লাগবে তা নির্ভর করে সেটি কতটা ঘন তার ওপর। যেমন– নিউট্রন তারা ও স্টেলার ব্ল্যাক হোলের ক্ষয় হতে প্রায় ১০^৬৭ বছর সময় লাগে।
এদিকে, চাঁদ বা একজন মানুষের পুরোপুরি ক্ষয় হতে প্রায় ১০^৯০ বছর লাগতে পারে। তবে গবেষকরা এটাও বলেছেন, এর আগেই অন্য কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব বস্তু বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এ পরিবর্তন মানব জীবনের জন্য কোনো হুমকি নয়। এগুলো ঘটতে এখনও অনেক সময় নেবে। তবে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে এ গবেষণার ফলাফল।
‘ইউনিভার্স ডিকেইস ফাস্টার দেন থট, বাট স্টিল টেইকস এ লং টাইম’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জার্নাল অফ কসমোলজি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোপার্টিকেল ফিজিক্স’-এ।
এসএস