শুল্ক প্রত্যাহার নিয়ে ট্রাম্প-ভারতের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেওয়ার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি দ্রুতভাবে অস্বীকার করেছে ভারত সরকার।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এই বিষয়ে আলোচনা এখনও চলমান এবং "সবকিছু চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিত নয়।"

আগের দিন অবশ্য পুরোই উল্টো কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, দিল্লি “একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে যেখানে তারা আমাদের ওপর মূলত কোনো শুল্ক আরোপ না করেই পণ্য নিতে চাচ্ছে”।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, যেকোনও বাণিজ্য চুক্তি পারস্পরিকভাবে লাভজনক হতে হবে এবং উভয় দেশের জন্য কার্যকর হতে হবে।
“বাণিজ্য চুক্তি থেকে আমাদের এটাই প্রত্যাশা। চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এর ওপর কোনও রায় দেওয়া আগাম বলা হয়ে যাবে,” সংবাদ সংস্থাগুলোকে বলেন তিনি।

এর আগে কাতারের রাজধানী দোহায় ব্যবসায়িক নেতাদের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় ট্রাম্প এ বিষয়ে মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যে বোয়িং জেটসহ বেশ কয়েকটি চুক্তির ঘোষণাও দেন।
অ্যাপলের ভারতে আইফোন উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে আলাপের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি অ্যাপলের সিইও টিম কুককে জানিয়েছেন যে তিনি চান না অ্যাপল ভারতে কিছু উৎপাদন করুক, কারণ এটি “বিশ্বের সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপকারী দেশগুলোর একটি”।

তিনি আরও বলেন, “তারা (ভারত) আমাদের এমন একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে যেখানে মূলত তারা আমাদের ওপর কোনও শুল্ক আরোপ না করতে সম্মত হয়েছে। আমি বলেছিলাম— ‘টিম, আমরা তোমার সাথে সত্যিই ভালো ব্যবহার করছি। বছরের পর বছর ধরে তুমি চীনে যে সমস্ত কারখানা তৈরি করেছো, আমরা তা সহ্য করেছি। ভারতে তুমি যে কারখানা তৈরি করবে তাতে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই। ভারত নিজেরাই নিজেদের সামাল দিতে পারে’।”

এই মাসের শুরুতে আয় প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় অ্যাপল জানিয়েছিল, তারা বেশিরভাগ আইফোনের উৎপাদন চীন থেকে ভারতে স্থানান্তর করছে। আর আইপ্যাড এবং অ্যাপল ওয়াচের মতো পণ্যের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হবে ভিয়েতনাম।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত এপ্রিলে ভারতীয় পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এমন অবস্থায় দিল্লি দ্রুততম সময়ে একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের ৯০ দিনের বিরতি ৯ জুলাই শেষ হয়ে যাবে।

এই সপ্তাহেই বিনিময় হওয়া পণ্যের আমদানি শুল্ক কমাতে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। যার ফলে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমে হবে ৩০ শতাংশ, আর কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর চীনের শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমে হবে ১০ শতাংশ।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলার (১৪৩ বিলিয়ন পাউন্ড)।

ইতোমধ্যেই দিল্লি বারবন হুইস্কি, মোটরসাইকেলসহ আরও কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। তারপরও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, যা কমিয়ে আনতে চান ট্রাম্প।

“যেহেতু ট্রাম্প বারবার ভারতের উচ্চ শুল্ককে বাণিজ্য ঘাটতির জন্য দায়ী করেছেন, তাই গাড়ি ও কৃষি পণ্য ছাড়া সব কিছুর ওপর শুল্ক কমিয়ে ভারত একটি ‘জিরো ফর জিরো’ নীতি গ্রহণ করে প্রথম দিন থেকেই ৯০ শতাংশ মার্কিন রপ্তানির ওপর শুল্ক শূন্য করতে পারে,” বলছিলেন দিল্লিভিত্তিক বাণিজ্য বিশ্লেষক অজয় শ্রীবাস্তব।

তার মতে, “তবে চুক্তিতে কঠোর পারস্পরিক সম্পর্ক নিশ্চিত করতে হবে, যাতে উভয় দেশই সমান হারে শুল্ক কমায়।”

ট্রাম্প এবং মোদি বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য স্থির করেছেন, তবে কৃষির মতো রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল খাতে ভারত কোনও ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা কম।

বহু বছর ধরে চলা সংশয় কাটিয়ে ভারত সম্প্রতি বাণিজ্য চুক্তিতে আরও আগ্রহ দেখাচ্ছে। গত সপ্তাহে ভারত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা হুইস্কি ও গাড়ির মতো সংরক্ষিত অনেক খাতে উল্লেখযোগ্যভাবে শুল্ক কমাবে।

প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা আলোচনার পর গত বছর ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয় এমন চারটি দেশ নিয়ে গঠিত ইউরোপীয় ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের (ইএফটিএ) সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ বছরের মধ্যেই একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারত জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিবিসি বাংলা

আরএ/টিএ

Share this news on: