নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রাজস্ব ব্যবস্থা : টিআইবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দুটি আলাদা বিভাগ তৈরি করতে তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ জারিতে রাজস্ব ব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে অবিলম্বে অধ্যাদেশটি স্থগিত করে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে সম্ভাবনা ও ঝুঁকি বিশ্লেষণপূর্বক ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

শনিবার (১৭ মে) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে টিআইবির পক্ষ থেকে এসব কথা জানানো হয়।

নীতির স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো ও রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার পৃথকীকরণের যে যৌক্তিক ভিত্তির ওপর ভর করে এ পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে, তার স্থলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্বাহী বিভাগ থেকে যে ন্যূনতম স্বাধীনতা ভোগ করার কথা তার সুযোগ থাকলো না বলে মনে করে টিআইবি।

বিবৃতিতে নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ একই কাঠামোর মধ্যে থেকে বের করে আনার দাবি বহুদিনের। কারণ একক কাঠামোর মধ্যে এই দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় অনেক সময় স্বার্থের দ্বন্দ্ব, যোগসাজশের দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি রাজস্ব লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর অবস্থায় নিমজ্জিত ছিল। বিভিন্ন অংশীজন ও বিশেষজ্ঞসহ সর্বশেষ রাজস্ব বিষয়ক পরামর্শক কমিটিরও রাজস্ব ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগের পেছনের নীতিগত সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। তবে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশসমূহকে পাশ কাটিয়ে অধ্যাদেশ জারির উদ্দেশ্য কী? কার স্বার্থেই-বা অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই সুপারিশসমূহ উপেক্ষা করা হলো? রাজস্ব ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার নামে যে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে প্রক্রিয়াটিই স্বচ্ছ কি-না, এমন প্রশ্ন ওঠাও অমূলক নয়। তা ছাড়া, এই তুঘলকি পরিবর্তনের ফলে এর মূল উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি কতটুকু বাস্তবায়িত হবে— এ বিষয়ে নির্মোহ সংশ্লিষ্ট জ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ কতটুকু করা হয়েছে?’

ড. জামান বলেন, অধ্যাদেশে রাজস্ব বোর্ডের বিকেন্দ্রীকরণের নামে সরকারের, বিশেষত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নত চর্চা অনুযায়ী, একটি দেশের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতপূর্বক স্বতন্ত্র সংস্থা, বোর্ড বা এজেন্সি করা প্রয়োজন, যাতে তা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের আওতামুক্ত থাকে। অথচ, পরামর্শক কমিটির মূল সুপারিশকে উপেক্ষা করে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগের অধীনস্ত দুটি বিভাগে পরিণত করা হয়েছে। ফলে কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। এ সুযোগ আরো বাড়তে পারে- এমন সম্ভাবনাও অমূলক নয়।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে চলমান আন্তঃক্যাডার টেনশনে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে, তা-ও অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও আমরা দেখেছি, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট আদায়-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনলাইন করা যায়নি, হয়রানি ও দুর্নীতি কমেনি, চালান জালিয়াতি নিয়ন্ত্রিত হয়নি, করফাঁকি আর অর্থপাচার নিয়ন্ত্রিত হয়নি। দেশের কর জিডিপির অনুপাতও বাড়েনি বরং কমে গেছে একযুগে। এর মধ্যেই পাবলিক অডিট অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে সরকার সিএজি’র রাজস্ব নিরূপণ নিরীক্ষার এখতিয়ার কেড়ে নিয়ে এ ক্ষেত্রে অনিয়মকে জবাবদিহির বাইরে রাখার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এসবের পেছনেও আমলাতন্ত্রের ভেতরে থাকা সংস্কার প্রতিরোধক স্বার্থান্বেষী মহল, যার প্রভাবে আরো একবার নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথকীকরণের নামে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো। শুধু অধ্যাদেশ করে বা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আলাদা বিভাগ সৃষ্টি করে প্রত্যাশিত ফল আসবে না। রাজস্ব বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থায় নিয়োজিত লোকবলের নৈতিকতার চর্চা সমুন্নত রাখা, অটোমেশন, প্রত্যক্ষ কর আহরণে উদ্যোগী হওয়া অপরিহার্য।’

এফপি/এ্সএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশের হারের দায় নিয়ে অস্বস্তির ইঙ্গিত বাটলারের Nov 26, 2025
img
যে পুরুষরা সংসারের কাজে হাত লাগান না, বঞ্চিত হচ্ছেন পরম আনন্দ থেকে Nov 26, 2025
img
আওয়ামী লীগের যারা কোনো জুলুম করেনি, তাদের পাশে আমরা থাকব: রাশেদ খান Nov 26, 2025
img
নিয়ম থাকা সত্ত্বেও শাস্তি হল না রোনালদোর, বিশ্বকাপ নিয়ে শঙ্কা Nov 26, 2025
img
বিশ্বকাপ ড্র ফরম্যাটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনল ফিফা Nov 26, 2025
img
এরদোয়ানকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের জেরে তুর্কি সাংবাদিকের ৪ বছরের কারাদণ্ড Nov 26, 2025
img
খালেদা জিয়া আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে’ : ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ Nov 26, 2025
img
হামলার পর রমরিময়ে বেড়েছে ক্যাফের আয়, কানাডার পার্লামেন্টেও ‘স্টার’ কপিল শর্মা! Nov 26, 2025
img
আর্টসেলের লিংকনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে রাকসুর জিএসের মামলা Nov 26, 2025
img

লাতিন-বাংলা ফুটবল সুপার কাপ

ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ম্যাচের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা বাফুফের Nov 26, 2025
img
দুই বিএনপি নেতার বহিষ্কারাদেশ বহাল Nov 26, 2025
img
শিল্পী হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে আত্মসম্মান বোধ থাকলে চলবে না: মনোময় ভট্টাচার্য Nov 26, 2025
img
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, কারাগারে কেমন আছেন ইমরান খান? Nov 26, 2025
img
পুলিশ বক্সে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পেলেন না যুবদল কর্মী Nov 26, 2025
img
এখন বিয়ের জন্য আর কিছু বাকি থাকে না: মমতা শঙ্কর Nov 26, 2025
img
গোলাম রাব্বানীর ছাত্রত্ব বাতিল, জিএস পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত পরে Nov 26, 2025
img
আমি বলিউডে অভিনয় করতে চাই: ঋত্বিক চক্রবর্তী Nov 26, 2025
img
নোয়াখালী এক্সপ্রেসের প্রধান কোচের দায়িত্বে খালেদ মাহমুদ সুজন! Nov 26, 2025
img
খ্যাতির উল্টোপিঠটা মোটেই সুখকর নয়: গিরিজা ওক Nov 26, 2025
img
‘ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিলেন’, এবার সাঁতার কাটতে ব্যবসায়ীকে নিয়ে ট্যুরে মালাইকা, ফাঁস ভিডিও! Nov 26, 2025