স্টারলিংকের মাধ্যমে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

স্টারলিংকের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, স্টারলিংকের একটি লোকাল গেটওয়ে থাকবে। এর কমার্শিয়াল টেস্ট রান ও গ্রাউন্ড টেস্ট চলমান। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য স্টারলিংক কোম্পানিকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে, যার দশ দিন গত হয়েছে। এ সময় শেষ হলেই তাদের লোকাল গেটওয়ে বাধ্যতামূলক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি ডিভাইসের ক্ষেত্রে রেট, ভ্যাট, ট্যাক্স আছে তাই ডিভাইসের বিষয়ে এনওসি নেবে।

তিনি আরও বলেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে, যা সাফল্যের নির্দেশনা প্রকাশ করে। প্রথমত, ৯০ দিন আগে বাংলাদেশে কোনও এনজিএসও (নন-জিওস্টেশনারি অরবিট) লাইসেন্স ছিল না। এই ৯০ দিনের মধ্যে দ্রুততার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটা এনজিএসও গাইডলাইন তৈরি করেছে এবং সেটির অনুকূলে একটা অপারেটর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অপারেটর আবেদন করেছে এবং সেই আবেদনটাও প্রসেস করে চার মাসের সময়ের মধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে মে এর মধ্যে এটা কমার্শিয়াল যাত্রা শুরু করতে পেরেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ধরনের টেলিকমিউনিকেশন লাইসেন্সের রোল আউটের ইতিহাসের প্রথম ও অনন্য ঘটনা।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখনো ফাইবার পৌঁছায়নি। মাত্র ৩০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারে ফাইবার আছে। এমতাবস্থায় মোবাইল কোম্পানিগুলোর যে সেবা দান সেটা মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে হয়, যেটা লো ক্যাপাসিটি। বাংলাদেশে এখনও হাজার হাজার মোবাইল টাওয়ার আছে যারা শুধু ৩০০ এমবিপিএস এর একটা ব্যান্ডউইডথ দিয়ে একটা মোবাইল টাওয়ার সচল রাখে ডেটা ইন্টারনেটের জন্য এবং সেই ডেটা ইন্টারনেটটা প্রায় কয়েক হাজার গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হয়। স্টারলিঙ্কের ক্ষেত্রে মাত্র একটা সেটআপ বক্স দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে।

স্টারলিংক কি উদ্যোক্তা বান্ধব? উদ্যোক্তারা ইন্টারনেট সেবা প্রদানে কীভাবে স্টারলিংক ব্যবহার করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এনজিএসও’র বিধিবিধান এমনভাবে করেছি যেন স্টারলিংক বা সমজাতীয় ইন্টারনেট সুবিধা উদ্যোক্তাবান্ধব হয়। অর্থাৎ, একজন উদ্যোক্তা কিংবা একাধিক উদ্যোক্তা নিজেরা যদি ৪৭ হাজার টাকার একটা তহবিল গঠন করে, এই তহবিলের মাধ্যমে তারা ইন্টারনেট সেটআপ বক্স কিনবে। কেনার মাধ্যমে তারা তাদের আশেপাশের দোকানে এই ইন্টারনেটের বিক্রি/সেবা প্রদান করতে পারবে।

ওয়াইফাই রেঞ্জ আনুমানিক, আনুমানিক ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মিটার, এই ৫০ মিটার জোনের মধ্যে বাংলাদেশের গ্রামের গ্রোথসেন্টারগুলোতে অনেক দোকানপাট থাকে। সেখানে সহজেই ইন্টারনেট সেবা এক ব্যক্তি কিনে বা একাধিক ব্যক্তি সমিতি আকারে কিনে মাল্টিপল ব্যবহার সম্ভব। আইনে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়নি। এছাড়া শহরের বাসভবনে ওয়াইফাই শেয়ারিং করে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্ভব। স্টারলিংকে যেহেতু বিল্টইন রাউটার আছে সেহেতু রাউটার হতে রাউটারে আইএসপি সেটাপেও ব্যবহার সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি আমরা চেষ্টা করব আমাদের মাইক্রোক্রেডিট অথরিটি কিংবা ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশন কিংবা ব্যাংকের জন্য, যাতে এই স্টারলিংক উদ্যোক্তাদের এই অর্থের সংস্থান হয়। পাশাপাশি যারা নাগরিক সেবার উদ্যোক্তা হবেন, তাদের জন্য স্টারলিংক কীভাবে সহজে নেওয়া যায়- এর জন্যও আমরা ফাইন্যান্সিয়াল প্যাকেজে কাজ করার পরিকল্পনা করছি।

আমরা বলছি, স্টারলিংকের দাম কিছুটা বেশি। মাসিক খরচ ছয় হাজার এবং চার হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে, এটা আমরা স্টারলিংকে কিছুটা নেগোশিয়েশন করে এটা কমিয়েছি। কিন্তু যেহেতু এটা শেয়ার্ড হবে এবং শেয়ার করা যাবে, শেয়র করার উপর যেহেতু আমরা বিধিনিষেধ রাখিনি এবং বিক্রি করার উপরও বিধিনিষেধ রাখিনি। সেজন্য এই ইন্টারনেট দিয়ে ব্যবসা সফল ব্যবসা মডেল, এসএমই বা ব্যবসা মডেল তৈরি করা সম্ভব।

পাশাপাশি কেউ যদি এই স্টারলিংক ব্যবহার করে তা ইন্টারনেট নিয়ে (মোবিলিটি এবং রোমিং সুবিধা ছাড়া) সেটাকে ফিড করে যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেখানেও আমরা কোনো বাধা রাখিনি। অর্থাৎ বাংলাদেশের এসএমই কিংবা উদ্যোক্তা বিকাশে সব ধরনের ফ্যাসিলিটি আইন, আইনগত ফ্যাসিলিটেশন রাখা হয়েছে।

‘স্টারলিংকের মাধ্যমে আমাদের মাইক্রোক্রেডিট কিংবা ইএমআই অথবা যেকোন এমএফআই/এমআরএ পদ্ধতিতে অন্য কোম্পানিগুলো ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশনগুলো চাইলে ওয়াইফাই লেডি হিসেবে নতুন একটা উদ্যোক্তার ধারা সৃষ্টি করতে পারে। যদি তারা চাইলে শুধু গ্রামীণ মহিলাদের একটা বিশেষ ঋণ দিতে পারে, ঋণের মাধ্যমে তারা স্টারলিংক নিয়ে ইন্টারনেট সেবা বিক্রয় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভবন ছাড়াও ইনফরমাল কো-ওয়েবিং বিজনেসের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবেন।’

চলমান চীন মার্কিন বাণিজ্য দ্বন্দ্বের মধ্যে স্টারলিংকের ব্যবহারে অনুমতি প্রদানে কোনো প্রভাব পড়বে কী? জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যোগাযোগ প্রযুক্তির বিচারে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। বাংলাদেশে ৪/৫জি টেকনলোজিতে সর্বাধুনিক নেটওয়ার্ক ও ব্যাকবোন স্থাপনে চীনা প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বিটিসিএল, টেলিটক সংস্থার অধীন চীনা অর্থায়নে ও প্রকৌশলীদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানির ভেন্ডর হিসেবেও অনেক চীনা কোম্পানি কাজ করছেন। আমরা চাই, চীন কিংবা মার্কিন ব্যবসায়ীরা যেন স্বাধীনভাবে এখানে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে উন্মুক্তভাবে ব্যবসা করতে পারেন। চীনা কোম্পানি জিডব্লিউ যদি আসতে চায় তারাও একই প্লেসে সুবিধাপ্রাপ্ত হবে। উল্লেখ্য, অন‍্যান‍্য দেশের কিছু কোম্পানি যেমন Amazon Kuiper, Telesat, Satteloit, এবং Oneweb (UK) আগ্রহী। তারা এখানে ব‍্যবসা করলে আমরা তাদেরও একই রকম পলিসি সুবিধা দিতে প্রস্তুত।

আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের দাম কি সহনীয়? এমন প্রশ্ন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, একটা ভবনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এমন অনেকগুলো অ্যাপার্টমেন্ট, কন্ডোমিনিয়াম, ফ্ল্যাট থাকে। তারা বেশ কয়েকটা অ্যাপার্টমেন্ট যারা পাশাপাশি থাকে তারা মিলে পাশাপাশি চারটা বা পাঁচটা অ্যাপার্টমেন্ট বা কয়েকটা দুই একটা তলা মিলে এই সার্ভিস ব্যবহার তবে এক্ষেত্রে রেঞ্জ সর্বোচ্চ ২০ মিটার করতে পারবেন। সবকিছু মিলিয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য এবং কনজিউমারদের জন্য এককালীন দামটা বেশি হলেও সেটাপ কস্টটা বেশি হলেও আমার মনে হয় এটা যখন ডিস্ট্রিবিউটেড হয়ে যাবে অর্থাৎ সমবায় ভিত্তিতে হবে তখন এটার আর খুব বেশি অনুভূত হবে না।

রিজিওনাল প্রাইস বিবেচনায় স্টারলিংকের ব্যয় কি বাংলাদেশে বেশি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিজিওনাল যে প্রাইস আমরা অ্যানালাইসিস করেছি সেখানে দেখেছি যে, রিজিওনাল প্রাইসের তুলনায় বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম সবচেয়ে কম। এমনকি শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডের চেয়েও কম। আমরা এটা তাদের রেখেছি যাতে তারা মানুষের সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে। যেহেতু বিষয়টা শেয়ার্ড হবে, একক ব্যক্তি যিনি কিনবেন, যিনি ব্যয় নির্বাহ করবেন তার জন্য দাম বেশি হলেও শেয়ারিং এ কোনো সীমা না থাকায় একাধিক শেয়ারিং এ দাম কমে আসবে।

আরএম/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

'নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও নিশ্চিত হয়নি Dec 08, 2025
img
বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসে পুলিশকে নিরাপত্তা তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ Dec 08, 2025
img
আগামী সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা দেয়া শুরু করতে পারে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক : আহসান এইচ মনসুর Dec 08, 2025
img
ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৫ Dec 08, 2025
img
কেজিতে ৪০ টাকা কমলো পেঁয়াজের দাম Dec 08, 2025
বাংলাদেশে ফিরে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে চান সাকিব Dec 08, 2025
img
চট্টগ্রাম বন্দর, দিনে চাঁদাবাজি হয় দুই-আড়াই কোটি : শ্রম উপদেষ্টা Dec 08, 2025
আইসিসি ইভেন্টে আমি সফল না, আমার ক্যালিবার অনুযায়ী খেলতে পারিনি: তামিম Dec 08, 2025
১৫ মাসে সরকারের কাজ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া Dec 08, 2025
img
‘নারী শাসিত পুরুষ’ নিয়ে আসিফের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় ওমর সানী Dec 08, 2025
img

নরসিংদীতে খায়রুল কবির খোকন

বেগম জিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনাই দায়ী Dec 08, 2025
img
সমুদ্রে মাছের অতিরিক্ত আহরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে: মৎস্য উপদেষ্টা Dec 08, 2025
img
তিন মাসে নতুন কোটিপতি আমানতকারী ৭৩৪ জন Dec 08, 2025
img
জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত চাওয়া রিট খারিজ Dec 08, 2025
img
মাছ শুধু বাণিজ্যিক পণ্য নয়, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা Dec 08, 2025
img
অধ্যাদেশের দাবিতে হাইকোর্ট-মৎস্য ভবন সড়ক অবরোধ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের Dec 08, 2025
img
সালাহ নিজের লিগ্যাসি নিজেই নষ্ট করছেন : রুনি Dec 08, 2025
img
আতিফ আসলামের ঢাকায় আসা চূড়ান্ত, ১৩ ডিসেম্বর কনসার্ট Dec 08, 2025
img
কিশোরগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ৪ মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংবাদ সম্মেলন Dec 08, 2025
img
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে জোবাইদা রহমান Dec 08, 2025