রোহিঙ্গাসহ মানবিক খাতগুলোতে নরওয়েকে পাশে চায় বাংলাদেশ

মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন মানবিক খাতে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য নরওয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার (২০ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি স্টিন রেনাতে হোহেইমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ আহ্বান জানান তিনি।

রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা বাস্তব মানুষ, যাদের বাস্তব স্বপ্ন আছে। অনেকেই ছোট শিশু অবস্থায় এসেছে—৭ বা ১০ বছর বয়সে। এখন তারা কিশোর। তারা ক্যাম্পেই বড় হয়েছে। প্রতিদিন নতুন শিশুর জন্ম হচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝে। তারা ফিরে যেতে চায়, কিন্তু আটকে আছে। আমরা যেন তাদের ভুলে না যাই।

হোহেইম এই মানবিক সংকটের গুরুত্ব স্বীকার করে বলেন, “এ সংকটে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য আমরা বাংলাদেশের ভূমিকাকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করি। আমরা আমাদের সম্পর্ককে শুধু উন্নয়ন সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আরও বিস্তৃত, গতিশীল অংশীদারত্বের দিকে এগিয়ে নিতে চাই।”

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে হোহেইম বাংলাদেশের প্রতি নরওয়ের অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।

এ সময় নরওয়েজীয় স্টেট সেক্রেটারি দেশটির প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোরের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান এবং দুদেশের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, “আপনি নরওয়েতে সুপরিচিত একটি নাম। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই আপনাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। আপনাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে।”

ড. ইউনূস দুদেশের গভীর ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, “সংকটের সময়গুলোতে নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় আপনাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।”

হোহেইম বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রতি নরওয়ের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি সমর্থন জানাতেই আমরা এসেছি। আপনার কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব, আর বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশাও অনেক।”

প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের বিভিন্ন সংকটের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “জুলাইয়ের গণবিপ্লবের সময় বহু প্রাণহানি হয়েছে, আর আমাদের অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকার বছরে আনুমানিক ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করতে দিয়েছে। ঋণগুলোকে যেন উপহার হিসেবে বিবেচনা করা হতো, আর আমরা পেয়েছি পাহাড়সম বকেয়া বিলের বোঝা।”

তবে এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও ড. ইউনূস বলেন, “বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা বাড়ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিডা সামিটে বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলো আমাদের বাস্তবতা নিজ চোখে দেখতে এসেছে, এর মধ্যে কিছু নরওয়ে থেকেও এসেছে। তারা কোনো বাধ্যবাধকতায় নয়, বরং সম্ভাবনায় বিশ্বাস রেখেই এসেছে।”

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, এসডিজি সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. মোশারফ হোসেন।

আরএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img

জুলাই গণঅভ্যুত্থান

আহত ও শহীদ পরিবারের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হবে: আসিফ মাহমুদ Sep 15, 2025
img
পুলিশে ফের বড় রদবদল Sep 15, 2025
img
আফতাবনগর-বনশ্রীতে ৩ সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন Sep 15, 2025
img
ভুল করলে যৌক্তিক সমালোচনা করতেও ছাড়বেন না : হামিম Sep 15, 2025
img
শুল্ক না কমালে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে উঠবে ভারতের Sep 15, 2025
img
সরকারি চাকরিজীবীদের পে-স্কেল নিয়ে নতুন নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার Sep 15, 2025
img
দেড় মাসে ১১৩ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক Sep 15, 2025
img
তরুণরা সক্রিয় থাকলে দেশের কোনো সমস্যা অমীমাংসিত থাকতে পারে না : প্রধান উপদেষ্টা Sep 15, 2025
img
বলিউড দুনিয়ার কালো অধ্যায় সামনে আনলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া Sep 15, 2025
img
ডিজিটাল লেনদেনে কমবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার : গভর্নর Sep 15, 2025
img
জামায়াতে ইসলামীর ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা Sep 15, 2025
img
ভারতের আচরণ স্পোর্টসম্যানশিপের পরিপন্থী : মহসিন নাকভি Sep 15, 2025
img
ভাঙ্গায় আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে আবারও দুই মহাসড়ক অবরোধ Sep 15, 2025
img
গুরুতর অভিযোগে গুগলের বিরুদ্ধে মামলা Sep 15, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের মৌলিক রদবদল করার ম্যান্ডেট রাখে না : জিল্লুর রহমান Sep 15, 2025
img
ভারতীয় ক্রিকেটারদের হাত না মেলানোর নেপথ্যে গম্ভীর Sep 15, 2025
img
কাতার একা নয়, ইসলামি বিশ্ব তাদের পাশে আছে: আরব লীগ প্রধান Sep 15, 2025
img
আসছে ‘হেরা ফেরি ৩’, ফেব্রুয়ারি-মার্চে শুরু শুটিং Sep 15, 2025
img
ইনজুরিতে সাকিব, করাতে হবে অস্ত্রোপচার Sep 15, 2025
img
যেখান থেকে মানুষের উত্থান হয়, ওখানেই পতন হয় : গোলাম মাওলা রনি Sep 15, 2025