‘অন্তর্বর্তী সরকার বিচারব্যবস্থার সংস্কার বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অধিকার দমনের চেষ্টায় রয়েছে’

অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক আইন প্রণয়ন ও নীতিগত পদক্ষেপগুলো মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষায় ‘আশঙ্কার কারণ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

সংগঠনটি বলেছে, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কিছু সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার এবং আইন প্রয়োগে ভারসাম্য রক্ষার প্রশ্নে উদ্বেগ তৈরি করছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বিচারব্যবস্থার সংস্কার বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অধিকার দমনের চেষ্টায় রয়েছে।

বুধবার (২১ মে) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব দাবি করে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, টানা তিন সপ্তাহের বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। এর পরই নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেয়। সরকার ইতোমধ্যে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও, সাম্প্রতিক কিছু উদ্যোগ হতাশা সৃষ্টি করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ১২ মে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি কঠোর সংশোধনী ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের ওপর ‘অস্থায়ী’ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দলটির সমর্থনে সভা, প্রকাশনা এবং অনলাইনে বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। একইসঙ্গে পূর্ববর্তী সরকারের আমলে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া গুমের ঘটনাগুলো মোকাবিলায় প্রস্তাবিত আইন আন্তর্জাতিক মান পূরণ করে না এবং অতীতের অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতেও ব্যর্থ।

সংগঠনটি জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ বিরোধীদের দমনে আইনের অপব্যবহার করেছে, কিন্তু নিজেরাই এখন এর শিকার হলে মৌলিক স্বাধীনতার প্রশ্ন থেকে যায়।

সংগঠনটির এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল। এখন সেই একই পদ্ধতি যখন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে, তখন একে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখার দাবি তুলছে, যা দ্বৈত মানদণ্ডের উদাহরণ।

তিনি বলেন, জোরপূর্বক গুমের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া বাস্তবিক কোনো বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে না। এটি নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারকে সত্য বা জবাবদিহিতার পথও দেখাতে পারছে না। তাদের পরিবারের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত হচ্ছে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ হতাশাজনক, কারণ গত ১৫ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার না শেষ হওয়া পর্যন্ত দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। যা কার্যত দলটিকে নিষিদ্ধ করার শামিল। নিষেধাজ্ঞার ফলে আওয়ামী লীগের প্রকাশনা, মিডিয়া, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, সভা, সমাবেশ ও সম্মেলনসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, যা দলের সমর্থকদের বাকস্বাধীনতায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করেছে।

প্রতিবেদন আরও বলা হয়, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে, যা রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে মামলা ও বিলুপ্তির ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালকে প্রদান করে। এই নতুন বিধান রাজনৈতিক দল, সহযোগী গোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকদের ব্যাপকভাবে সংজ্ঞায়িত করে, যা বিচার প্রক্রিয়া ও সংগঠনের স্বাধীনতায় আন্তর্জাতিক মান লঙ্ঘনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।

এইচআরডব্লিউ মনে করে, সরকারে থাকা অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার প্রয়োজন, তবে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর অতিরিক্ত বিধিনিষেধ মানুষের মৌলিক স্বাধীনতার লঙ্ঘন এবং পুরোনো রাজনৈতিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
'গণতান্ত্রিক যাত্রায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র' Oct 24, 2025
img
খতিব অপহরণকারীদের আইনের আওতায় আনতে সরকার কাজ করছে : ধর্ম উপদেষ্টা Oct 24, 2025
মন খুশি করার আমল | ইসলামিক টিপস Oct 24, 2025
বুড়ো বয়সে আমল করলে সওয়াব হয় | ইসলামিক জ্ঞান Oct 24, 2025
ভাবে যৌথ কাজ করলেও সম্পর্ক নষ্ট হয় না | ইসলামিক টিপস Oct 24, 2025
img
কোহলির শেষ এখনও আসেনি, মন্তব্য গাভাস্কারের Oct 24, 2025
দীপাবলিতে প্রথমবার কন্যা দুয়ার মুখ দেখালেন দীপিকা-রণবীর Oct 24, 2025
img
ব্রেকআপের পর দেওয়ালে মাথা ঠুকতেন সালমান, তবুও চুপ ছিলেন ঐশ্বরিয়া Oct 24, 2025
জুলাই সনদে ঐক্য, কিন্তু রাজনীতিতে অনৈক্য বেড়েই চলেছে Oct 24, 2025
img
বহিষ্কৃত ৭ নেতাকে পুনরায় দলে ফেরাল বিএনপি Oct 24, 2025
রাজউকের প্লট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নতুন যে সিদ্ধান্তের কথা জানালেন আইন উপদেষ্টা Oct 24, 2025
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তনের গুঞ্জন Oct 24, 2025
বিলুপ্ত বাগছাস, আত্মপ্রকাশ 'জাতীয় ছাত্রশক্তি'র Oct 24, 2025
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগের গুঞ্জন Oct 24, 2025
আয়কর রিটার্ন ছাড়া দান করা যাবে না রাজনৈতিক দলকে! Oct 24, 2025
img
ঈশানের জীবনের প্রথম ভাইফোঁটা, নুসরাতের মন্তব্য Oct 24, 2025
img

‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই’

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবার : শফিকুল আলম Oct 24, 2025
img
এবার চোরের ভূমিকায় ক্রিস হেমসওয়ার্থ Oct 24, 2025
img
ফাটল দেখা গেল যমুনা রেলসেতুর পিলারে, কর্তৃপক্ষ বলছে ফাটল নয় 'হেয়ার ক্র্যাক' Oct 24, 2025
img
মাদক কারবারিদের হত্যা করতে ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডেও হামলা হতে পারে: ট্রাম্প Oct 24, 2025