মার্টিন লুথার কিং: ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরণার প্রতীক

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী নাগরিক অধিকার আন্দোলন কর্মী। তার অনুপ্রেরণাদানকারী অহিংস আন্দোলন জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে মার্কিন জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। নিয়ে এসেছিল উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তন। সাদা ও কালো সব মার্কিনির হৃদয়ে ছিল তার স্থান।

তিনি ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি আটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ও দাদা দুজনই ছিলেন আফ্রিকান ও আমেরিকান ব্যাপটিস্ট গির্জার যাজক। পড়াশোনা করেছেন বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকেই তিনি শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গদের বৈষম্য ও অবিচারের বিষয়ে সচেতন হন। এসময় তিনি মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হন। কারণ গান্ধীর দর্শন তার ব্যাপটিস্ট বিশ্বাসের শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ২৪ বছর বয়সে কোর্টা স্কট নামে এক সুন্দরী ও মেধাবী তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর তিনি অ্যালাবামায় একটি ব্যাপটিস্ট চার্চের যাজক নিযুক্ত হন।

১৯৫৫ সালের ৫ ডিসেম্বর মন্টগোমারির রাস্তায় বাসে করে যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় বাসে সাদা ও কালোদের জন্য পৃথক আসন থাকায় তিনি বৈষম্যের শিকার হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে তিনি বাস বয়কটের ডাক দেন। তার ডাকে কয়েক মাস বাস বয়কট আন্দোলন চলে এবং বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। অবশেষে বাসে সাদা-কালো পৃথক আসন ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন মার্কিন আদালত। এ ঘটনা তার জীবনে এক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে।

নাগরিক অধিকার আন্দোলন এগিয়ে নিতে তিনি ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে ‘সাউদার্ন ক্রিস্টিয়ান লিডারশিপ কনফারেন্স’ (এসসিএলসি) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬০ সালের দিকে ম্যালকম এক্স ও অন্যান্য কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের উত্থান হয়,  যা অনেকটা সহিংস ছিল। তবে  সবসময় অহিংস আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন মার্টিন লুথার কিং।

মার্টিন লুথার কিং ছিলেন একজন অনুপ্রেরণাদানকারী ও প্রভাবশালী বক্তা। তিনি খুব সহজেই শ্রোতাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন। তিনি তার শ্রোতাদের আশার বাণী শোনাতেন। তিনি বৈষম্য ও অবিচার দূর করবার স্বপ্ন দেখতেন ও দেখাতেন।

তিনি বলতেন, “এটা কীভাবে হয় যে তুমি তোমার ভাইয়ের চোখে ছোট্ট ধূলিকণাও দেখতে পাও অথচ নিজের চোখে মরীচিকাও দেখতে পাওনা”! তাই বন্ধু কিংবা শত্রু সবাইকে ভালোবাসার আহবান জানান তিনি। তার প্রতিটি বক্তব্যেই তিনি প্রতিশোধ নয়, ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে জয় করতে উদ্বুদ্ধ করতেন।

১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট তিনি ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়ালে আড়াই লাখ লোকের সামনে ‘আই হেভ অ্যা ড্রিম’ শীর্ষক তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণে আব্রাহাম লিঙ্কনের দাসত্ব প্রথা বিলুপ্ত করার ঘোষণা স্মরণ করে সব ধরনের বর্ণবাদ প্রতিহত করার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেছিলেন, “আমার একটি স্বপ্ন, একদিন এই জাতি এই বিশ্বাস নিয়ে বড় হবে যে, সৃষ্টিগতভাবে আমারা সবাই সমান। আমি স্বপ্ন দেখি যে, একদিন দাসের সন্তানেরা ও দাস মালিকের সন্তানেরা একই ভ্রাতৃত্বের টেবিলে বসবে।” ওই বছরই তিনি টাইম ম্যাগাজিনের  ‘পার্সন অব দ্য ইয়া ‘ খেতাবে ভূষিত হন। পরের বছর ১৯৬৪ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। পুরস্কারের ৫৪হাজার ১২৩ডলার অর্থ তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের তহবিলে দিয়ে দেন।

এর পর থেকে তিনি অসংখ্য বার হত্যার হুমকি পান। তবু তিনি তার আন্দোলন থেকে পিছু হটেন নি। এক পর্যায়ে ‘আই হেভ বিন টু দ্য মাউন্টেইন টপ’ শীর্ষক ভাষণের এক দিন পর ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল গুপ্তঘাতকের আঘাতে মারা যান এই মহান নেতা।

যুগ যুগ ধরে বিশ্ববাসীর কাছে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে থাকবেন মার্টিন লুথার কিং।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘ট্রেটর্স’ জিতেও শান্তি নেই, শুভেচ্ছার বদলে হুমকি পাচ্ছে উরফি! Jul 04, 2025
img
দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মঞ্চে ব্ল্যাকপিঙ্ক Jul 04, 2025
img
সংবিধান ছুড়ে ফেলার কথা বললেই তা বাতিল হয়ে যায় না: রিজভী Jul 04, 2025
img
তিন সপ্তাহ পর ইরানে অবতরণ করল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট Jul 04, 2025
img
পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপে কোনো অগ্রগতি হয়নি : ট্রাম্প Jul 04, 2025
img
আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি চাঁদা দাবি করে, সে আমার লোক নয় : সারজিস Jul 04, 2025
এখনও কোটা বহাল! বুয়েট বন্ধ করে দিতে বললো শিক্ষার্থীরা! Jul 04, 2025
img
বৈধ উৎস নেই, তারিক সিদ্দিকের সম্পদ বাজেয়াপ্তের আহ্বান Jul 04, 2025
গোলাম মাওলা রনির প্রতি সরাসরি অভিযোগ প্রেস সচিবের Jul 04, 2025
বাংলাদেশপন্থী কারা, হাসনাত আব্দুল্লার উত্তর Jul 04, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে, রোধ হবে দুর্নীতি : মাসুদ সাঈদী Jul 04, 2025
img
বিএনপিতে কোনো হাইব্রিডদের জায়গা হবে না : আহমেদ আযম খান Jul 04, 2025
img
দিয়োগো জোতার সম্মানে তার ২০ নাম্বার জার্সি তুলে রাখলো লিভারপুল Jul 04, 2025
img
‘আমায় পাকিস্তানি বললেও চলবে’, পুরনো মন্তব্যে ফের বিতর্কে কারিনা Jul 04, 2025
img
বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ স্থগিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিসিবি Jul 04, 2025
img
আমাদের বিচ্ছেদ পারসোনাল ইস্যু ছিলো না, ছিল ন্যাশনাল ইভেন্ট: মিথিলা Jul 04, 2025
img
ফিরছে ‘গাল্লি বয়’, তবে এবার নতুন মুখে ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে Jul 04, 2025
img
টিকটক তারকা ক্রিস্টোফারকে গুলি করে হত্যা Jul 04, 2025
img
গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারাল শতাধিক মানুষ Jul 04, 2025
কঙ্গনার ব্যক্তিগত ছবি চাইতেন হৃতিক, পাঠাতেন নিজের ছবিও Jul 04, 2025