ভারত নয়, এবার মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই ঢুকছে শত শত গরু

কক্সবাজারের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অবাধে প্রবেশ করছে মিয়ানমার থেকে আসা শত শত গরু ও মহিষ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে গভীর রাতে কিংবা দিনদুপুরে এভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে চোরাই পশু। স্থানীয় ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো প্রক্রিয়াটি চলছে একটি সুসংগঠিত চোরাচালান চক্রের নিয়ন্ত্রণে।

সরাসরি সীমান্তবর্তী গর্জনিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির মধ্যবর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় সারি সারি গরু চলছে। মুখ ঢাকা কিছু ব্যক্তি এই গরু গুলোকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, কেউবা হেঁটে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। এসব গরু পরে ট্রাকে তোলা হচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, "গরুগুলোর হিসাব রাখে আলাদা লোক। গণনা করে প্রতি গরুতে নির্দিষ্ট টাকার চাঁদা আদায় করা হয়। বিজিবি সদস্যদের ম্যানেজ করে এসব গরু দেশের ভেতরে আনা হয়।" তিনি আরও বলেন, "একটা রাতেই যদি কয়েকশ গরু ঢোকে, তাহলে কারবারির লাভের অঙ্ক সহজেই অনুমেয়।"

স্থানীয়দের অভিযোগ, চোরাচালান ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা এ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন বলেও ইঙ্গিত মিলেছে।

এদিকে সীমান্তে অবস্থানরত এক বিজিবি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গরু চোরাচালানের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, "গত কয়েক বছরের তুলনায় চোরাচালান কমলেও কারবারিরা নতুন নতুন রুট তৈরি করছে। আমাদের লোকবল সংকটও রয়েছে। অনেক সময় আমরা জানতে পারি গরু চলে যাওয়ার পরে।"

অবৈধ পশু প্রবেশের কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে। স্থানীয় বাজারে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমার থেকে আসা এসব গরু তুলনামূলকভাবে সস্তায় কিনে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সীমান্তবর্তী বাজারে গরুর হাটের ইজারার দর হু-হু করে বেড়ে যাচ্ছে। গর্জনিয়া বাজারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আড়াই কোটি টাকা থেকে নিলামের ডাক গিয়ে ঠেকেছে ২৬ কোটি টাকায়।

এছাড়া গরু ও ইয়াবা চোরাচালানকে কেন্দ্র করে নাইক্ষ্যংছড়ির গোরচুনিয়া, কচ্ছপিয়া ও কাওয়ারকুপ এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক সশস্ত্র বাহিনী। এসব গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, যা স্থানীয়দের নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত করছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব চোরাচালান আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সময় এসেছে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

'নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও নিশ্চিত হয়নি Dec 08, 2025
img
বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসে পুলিশকে নিরাপত্তা তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ Dec 08, 2025
img
আগামী সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা দেয়া শুরু করতে পারে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক : আহসান এইচ মনসুর Dec 08, 2025
img
ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৫ Dec 08, 2025
img
কেজিতে ৪০ টাকা কমলো পেঁয়াজের দাম Dec 08, 2025
বাংলাদেশে ফিরে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে চান সাকিব Dec 08, 2025
img
চট্টগ্রাম বন্দর, দিনে চাঁদাবাজি হয় দুই-আড়াই কোটি : শ্রম উপদেষ্টা Dec 08, 2025
আইসিসি ইভেন্টে আমি সফল না, আমার ক্যালিবার অনুযায়ী খেলতে পারিনি: তামিম Dec 08, 2025
১৫ মাসে সরকারের কাজ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া Dec 08, 2025
img
‘নারী শাসিত পুরুষ’ নিয়ে আসিফের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় ওমর সানী Dec 08, 2025
img

নরসিংদীতে খায়রুল কবির খোকন

বেগম জিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনাই দায়ী Dec 08, 2025
img
সমুদ্রে মাছের অতিরিক্ত আহরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে: মৎস্য উপদেষ্টা Dec 08, 2025
img
তিন মাসে নতুন কোটিপতি আমানতকারী ৭৩৪ জন Dec 08, 2025
img
জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত চাওয়া রিট খারিজ Dec 08, 2025
img
মাছ শুধু বাণিজ্যিক পণ্য নয়, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা Dec 08, 2025
img
অধ্যাদেশের দাবিতে হাইকোর্ট-মৎস্য ভবন সড়ক অবরোধ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের Dec 08, 2025
img
সালাহ নিজের লিগ্যাসি নিজেই নষ্ট করছেন : রুনি Dec 08, 2025
img
আতিফ আসলামের ঢাকায় আসা চূড়ান্ত, ১৩ ডিসেম্বর কনসার্ট Dec 08, 2025
img
কিশোরগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ৪ মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংবাদ সম্মেলন Dec 08, 2025
img
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে জোবাইদা রহমান Dec 08, 2025