সরকারি তিতুমীর কলেজে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত জুলাই যোদ্ধাদের উপর প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা করেছে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
সোমবার (২৬ মে ) দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে হল খোলার দাবিতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের উপর হঠাৎ করে ছাত্রদল হামলা চালায়।
এ হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আরিফুর রহমান মোল্লা, যুগ্ন আহবায়ক রিমু, যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন বাশার, যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক খাজা মাইনুদ্দিন , যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনর রশীদ, আহ্বায়ক কমিটির বাইজিদ হাসান সাকিব, যুগ্ম আহ্বায়ক ইমাম উদ্দিন, আহ্বায়ক কমিটি সদস্য আল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুর উদ্দিন জিসান, যুগ্ম আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ, আহবায়ক কমিটির সদস্য রাশেদুজ্জামান হৃদয়সহ তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের দেড়শোর নেতাকর্মী।
এ সময় সংবাদ কাভার করতে গেছে সাংবাদিকদের ওপরেও হামলা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলেজের হল খোলার বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কলেজের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। এ সময় ছাত্রদলে নেতাকর্মীরা এসে ব্যানার ,প্ল্যাকার্ড ছিঁড়ে ফেলে এবং শিক্ষার্থীদের মারধর করে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন বলে জানা গেছে। নায়েক নূর মোহাম্মদ নামে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারি তিতুমীর কলেজের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন নাইমকে ব্যাপক মারধর করে ছাত্রদল। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল ইমারজেন্সিতে ভর্তি আছে৷
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, আমি ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম এমন সময় দেখি, হল নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হয়েছেন এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর উপর আকস্মিক হামলা চালায়। এতে অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা ছাত্রলীগ এর সময়ে এমন ঘটনা দেখতাম কিন্তু জুলাই আন্দোলনের পর এটিই প্রথম যা পূর্বেকার ফ্যাসিস্ট সময়ের ঘটনা মনে করিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আলি আহমেদ বলেন, গতকাল হলের শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল ,কিন্তু তা করেনি এ বিষয়ে আমরা প্রিন্সিপালের কাছে জানতে গেলে তাকে না পেয়ে প্রিন্সিপালের কক্ষের সামনে অবস্থান করি। এ সময় কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজা সহ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের হুমকি দেয়। আজ পুনরায় এ হল বিষয়ে আন্দোলন কর্মসূচি করতে গেলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালায়।
তিনি আরও বলেন, প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের বিশৃঙ্খলাকারী বলে ছাত্রদলের হাতে উঠিয়ে দিয়েছেন, আজকে তিনি আমাদের উপর হামলা করিয়েছেন। আগে হল ছাত্রলীগের অধীনে থাকতো এখন ছাত্রদলের অধীনে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার যুগ্ম আহবায়ক হেলাল উদ্দিন নাইম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে যায়, সেখানে মারামারির ঘটনার ভিডিও করতে গেলে তার উপর হামলা করা হয়।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার আহবায়ক আলাউদ্দিন মিনহাজ বলেন, মুক্ত গণতন্ত্র চর্চা ও মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতেই আমরা জুলাই আন্দোলন করেছি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা মানে শিক্ষার্থীদের বাক স্বাধীনতা হরণ করা। নাইমের অবস্থা এখন খুব খারাপ। আমরা খুব দ্রুতই এর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিব।
এ বিষয়ে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে তাদেরকে বাহিস্কার করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টিএ/