গাজার পাঁচ শতাংশেরও কম ফসলি জমি ব্যবহারযোগ্য

গাজা উপত্যকায় কৃষিজমির মাত্র ৪.৬ শতাংশ বর্তমানে চাষযোগ্য রয়েছে, যুদ্ধজনিত ধ্বংস এবং প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে বাকি ৯৫ শতাংশ জমি ক্ষতিগ্রস্ত বা ব্যবহারযোগ্য নয়। জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক মূল্যায়নে এই তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিকে আরো তীব্র হয়েছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং জাতিসংঘ স্যাটেলাইট সেন্টার যৌথভাবে এই মূল্যায়ন পরিচালনা করেছে।

এফএও-এর উপমহাপরিচালক বেথ বেকডল বলেন, ‘এই ধ্বংস শুধুই অবকাঠামোর ক্ষতি নয় — এটি গাজার কৃষিভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পতন এবং জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার শামিল।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ গাজার ৮০ শতাংশেরও বেশি কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৭৭.৮ শতাংশ জমিতে প্রবেশের সুযোগ নেই। এর ফলে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪.৬ শতাংশে। এফএও আরো জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে কৃষি গাজার মোট অর্থনীতির প্রায় ১০ শতাংশ অবদান রাখত এবং ৫ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ কৃষিকাজ, পশুপালন বা মৎস্য শিকারের উপর নির্ভর করতেন।

উচ্চ রেজোলিউশনের স্যাটেলাইট চিত্রের ভিত্তিতে করা মূল্যায়নে দেখা গেছে, গাজায় ৮০ শতাংশের বেশি নলকূপ এবং তিন-চতুর্থাংশের বেশি গ্রীনহাউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা, বিশেষ করে রাফাহ অঞ্চলে পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক, যেখানে প্রায় সকল কৃষি জমিই এখন ব্যবহার অযোগ্য। দক্ষিণাঞ্চলেও পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক।’

এফএও-এর উপমহাপরিচালক বেথ বেকডল বলেন, ‘গাজার কৃষিখাতের এই ধ্বংসাবশেষ ভবিষ্যতের জন্য এক অশনিসংকেত।

এটি শুধু কৃষিজ পণ্য উৎপাদন নয়, বরং গোটা জনসংখ্যার খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবিকার প্রশ্ন।’ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যদি দ্রুত কৃষি পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে গাজা দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত হতে পারে। জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন বলে আখ্যা দিয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল গাজায় যুদ্ধ শুরুর আগে বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হতো, যার মধ্যে ছিল মাল্টা, খেজুর ও জলপাই। কিন্তু ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর ১৯ মাস পর পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে।

টানা ১১ সপ্তাহের অবরোধের ফলে ইসরায়েলের খাদ্য আমদানিতে কড়াকড়ির কারণে গাজায় প্রায় অর্ধকোটি মানুষ এখন তীব্র খাদ্য সংকটের মুখে, যাদের মধ্যে অনেকেই ক্ষুধায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর মতে, দ্রুত ও টেকসই সহায়তা ছাড়া গাজা দুর্ভিক্ষের চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাতে আর বেশি সময় নেবে না।

এসএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চাকসু নির্বাচনে প্যানেল দেবে না বাগছাস Sep 16, 2025
img
একবারের জন্য হলেও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জামায়াত: তাহের Sep 16, 2025
img
আফগানিস্তানের পক্ষে ‘বাজি’ ধরে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিলেন শোয়েব মালিক Sep 16, 2025
img
মিমি-অঙ্কুশের পর এবার বেটিং বিপাকে সোনু সুদ Sep 16, 2025
img
নির্বাচনের পরও বিচার চালিয়ে নেওয়ার রোডম্যাপ চেয়েছেন নাহিদ ইসলাম Sep 16, 2025
img
অর্থহীনের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর, আসছে চমক Sep 16, 2025
img
কিছু আসনের লোভে পিআর চাইলে জাতীয় জীবনে ভয়ংকর পরিণতি আসবে : সালাহউদ্দিন Sep 16, 2025
img
কাজল-টুইঙ্কলের সঞ্চালনায় দীর্ঘদিন পর জমবে বরুণ-আলিয়ার আড্ডা Sep 16, 2025
img
আর মাত্র ২৮ রানের অপেক্ষায় লিটন দাস! Sep 16, 2025
img
রাতারাতি ব্রেকআপ, করতে চেয়েছিলেন আত্মহত্যা! Sep 16, 2025
img
জাপার কাদের-শামীমের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন ছাত্র অধিকার নেতার Sep 16, 2025
img
৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি শুক্রবার, ২৫৬ কেন্দ্রে একযোগে হবে পরীক্ষা Sep 16, 2025
img
ফের বিশ্ববাজারে বাড়ল স্বর্ণের দাম Sep 16, 2025
img
টানা ৮ দিন চীনা ভিসা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা Sep 16, 2025
img
‘আমি খুব কৃতজ্ঞ মানুষ, মিথ্যা কথা বলি না’ Sep 16, 2025
img
চূড়ান্তভাবে একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক Sep 16, 2025
img
ঠাকুরগাঁওয়ে এজলাস সংকট, ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা Sep 16, 2025
img
তিন মামলা থেকে চসিক মেয়রকে অব্যাহতি Sep 16, 2025
img
ছাত্রলীগ এখন ছাত্রশিবির : দুলু Sep 16, 2025
img
বিজয় দেবরাকোন্ডার নতুন ছবিতে খলনায়ক হিসেবে থাকছে হলিউড তারকা Sep 16, 2025