বুধবার-ই (২৮ মে) ফারুকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর চিঠি লিখেছিলেন বোর্ড পরিচালকরা।
চিঠিতে তারা লেখেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্তির সাথে সাথে বোর্ড কমিটিসমূহের পুনর্গঠনের কথা থাকলেও দীর্ঘ ৫ মাস পর তিনি বোর্ড এর বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠন করেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বোর্ড সভাপতি জনাব ফারুক আহমেদের স্বেচ্ছাচারিতা ও একক আধিপত্যের কারণে বেশিরভাগ পরিচালকবৃন্দই স্বাভাবিকভাবে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ও স্বাধীনভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের পাশ কাটিয়ে বর্তমান বোর্ড সভাপতির এককভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ, একক আধিপত্য ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিসিবির অভ্যন্তরে যেমন অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তেমনি দেশে ও দেশের বাহিরে সুনাম ক্ষুণ্নসহ বাংলাদেশ ক্রিকেটের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে চলেছে।’
চিঠিতে তারা আরও উল্লেখ করেন, সাবেক কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে-সহ চুক্তিভুক্ত বিভিন্ন স্পেসালাইজড কোচকে তাদের সঙ্গে পরামর্শ এবং আলোচনা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেন। যার বিসিবির সংবিধান এর পরিপন্থী। এছাড়া পতিত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে অপসারণের বিষয়ে আলোচনা করলেও তিনি সেটি আমলে নেননি। বরং তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে বহাল রেখেছেন। তিনি নিজেও অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়ে, তাদের পদোন্নতি দিয়ে সৎ ও কর্মঠদের কোনঠাসা করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সবশেষ বিপিএলে যোগ্যতা না থাকার সত্বেও দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংসকে নিজের একক সিদ্ধান্তে খেলার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনাও করেন পরিচালকরা। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্লাব দখল ও আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য ক্লাব দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার অভিযোগও তোলা হয় চিঠিতে। জিম্বাবুয়ের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টেস্টে হার এবং র্যাঙ্কিংয়ে অবনমনের জন্যেও তারা ফারুককে দায়ী করেন।
তারা অভিযোগের এক পর্যায়ে উল্লেখ করেন, ‘বোর্ড সভাপতি জনাব ফারুক আহমেদের এসকল স্বৈরাচারী মনোভাব ও কর্মকাণ্ডকে পরিচালনা পর্ষদ সমর্থন না করলে তিনি আমাদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌন্যমূলক আচরণ প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে আসছেন। এছাড়া আমাদের না জানিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে এককভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পরিচালনা পর্ষদের মিটিংয়ে সেগুলো ভূতাপেক্ষিকভাবে পাশ করিয়ে নিতে পর্ষদের উপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন যা বিসিবির গঠনতন্ত্রের চরম লঙ্ঘন।’
পরিচালকরা তাদের অভিযোগপত্রে আরও জানান, দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ ও গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনের ব্যাপারে ফারুকের অনীহা দায়িত্ব পালন ব্যর্থতার সামিল এবং তিনি তার অভীষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত বলে তিনি মনে করেন।
চিঠির শেষে তারা ফারুকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে লেখেন, ‘বিসিবির মতো একটি প্রতিষ্ঠান যা দেশের ক্রিকেট অঙ্গনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে সমুজ্জল করেছে, সেই বোর্ডের বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের এরুপ স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতিপরায়নতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, একক আধিপত্য ও ঔদ্ধত্যের কারণে নিরুপায় হয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং বিসিবিকে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে তাহার উপর সম্পূর্ণরূপে অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করছি। যেহেতু জনাব ফারুক আহমেদ বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কর্তৃক মনোনীত পরিচালক হিসেবে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, সেহেতু নিম্ন স্বাক্ষরিত সংখ্যাগরিষ্ট পরিচালকগণের অনাস্থা প্রস্তাবটি আমলে নিয়ে এনএসসি কর্তৃক জনাব ফারুক আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করতে প্রয়োজনীয় আকুল আবেদন করছি। এ বিষয়ে নিম্ন স্বাক্ষরকারীগণের পক্ষ হতে আপনার দপ্তরকে যথাসাধ্য সহযোগিতা প্রদানে আমরা বদ্ধ পরিকর থাকিব।’
চিঠিতে স্বাক্ষর করেন, নাজমুল আবেদীন, ফাহিম সিনহা, মোঃ সাইফুল আলম স্বপ্ন চৌধুরী, ইফতেখার রহমান, মাহবুব উল আনাম, কাজী ইনাম আহমেদ, মোঃ মনজুর আলম ও মোঃ সালাহউদ্দিন চৌধুরী।
এর আগে বুধবার (২৮ মে) রাতে ফারুককে ডেকে তাকে সরানোর ইঙ্গিত দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ইতোমধ্যে তার জায়গায় সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামকে বুলবুলকে আনার পরিকল্পনা সাজাচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তবে আজ দেশের একটি গণমাধ্যমকে পদ না ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন ফারুক। কিন্তু পরিচালকদের এমন অনাস্থার পর তিনি কীভাবে পদ ধরে রাখেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
এদিকে নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করার এখতিয়ারও নেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। আইসিসির নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো দেশের ক্রিকেট বোর্ডে সরকার বা অন্য কেউ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার খড়গে পড়তে হবে। ফলে নিয়ম মেনেই সরাতে হবে ফারুককে।
এফপি/এস এন