ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু-ছাগল নিয়ে ব্যাপারীরা আসছেন রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে। সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে বেচাকেনাও। তবে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট গাবতলী এখনো পুরোদমে জমে উঠেনি। ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি। ছোট গরুতে নজর ক্রেতার।
রোববার (১ জুন) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর প্রধান ও স্থায়ী এ পশুর হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাক, পিকআপ ভরে আসছে কোরবানির পশু। কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে হাটের প্রধান ফটক সাজানো হয়েছে। হাসিল ঘরও প্রস্তুত করা হয়েছে। সড়কে যেমন তৎপর ট্রাফিক পুলিশ, তেমনি হাটেও তৎপর ভলান্টিয়াররা। সড়কে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না কোরবানির পশুবাহী কোনো যানবাহন।
বড় ও দামি গরুর সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়, তবে ছোট গরুর ক্ষেত্রে ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন গরু ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিবিঘ্নিত আবহাওয়ার কারণে দিনভর ক্রেতা সমাগম কম ছিল। অসংখ্য স্থানে শেড তৈরির কাজ চলছে। হাসিল ঘরও তৈরি করা হচ্ছে কোথাও কোথাও। সন্ধ্যার পর ক্রেতা সমাগম বেড়েছে গাবতলীতে। তবে বিক্রি হচ্ছে ছোট গরু।
গাতবলী গরুর হাটে ঢুকতেই কথা হয় রুপনগর থেকে আসা এক ক্রেতার সঙ্গে। প্রথম দিন হাটে এসেই পছন্দ হওয়ায় গরু কিনেই ফিরছেন তিনি।
ফারদিন নামে ওই ক্রেতা বলেন, দেশি গরু, দেখেই পছন্দ হয়ে গেছে। দাম হাঁকিয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আমিও দাম হাঁকা শুরু করি লাখ টাকা থেকে। শেষমেষ বনিবনা হয় ১ লাখ ২৫ হাজারে।
তিনি বলেন, আজ শুধু ঘুরবো নিয়ত করেই হাটে আসা। আত্মীয়-স্বজন মিলে অন্তত ৫টা গরু কিনতে হবে। তাই দরদাম হাঁকিয়ে তারপর বুঝে শুনে কিনবো। কিন্তু হাটে এসেই একটা শাহী ক্রস পছন্দ হয়ে গেলো। ভাগ্নের বাজেট কম। পৌনে দুই লাখে গরুটা কিনে এখন বাসায় ফিরছি।
প্রবেশ পথ দিয়ে হাটের ভেতরে ঢুকতেই সব বড় বড় গরুর শেড। তবে অধিকাংশ বড় গরুর শেডের সামনে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি। যেখানে কেউ ভিডিও করছেন, কেউ ছবি তুলছেন। দামাদামিও হচ্ছে। তবে দামাদামিতেই থেমে যাচ্ছে ক্রেতার আগ্রহ।
সাব্বির হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, গরু কিনবো ভেবেই এসেছি। সাত বন্ধু মিলে গরু কোরবানি করবো। বাজেট আড়াই লাখ। যেটা পছন্দ হয় সেটা দামের নাগালেই নাই। আবার যেটা বাজেটের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে সেটা পছন্দ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, হাটে ঢুকতেই বড় অংশজুড়ে বিভিন্নজাতের বড় সব গরু। গরু দেখলেই কিনতে মন চাইবে। কিন্তু টার্গেট আড়াই লাখের গরু। গরুর সাইজ ও আনুমানিক ওজনের চেয়ে বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেরা। আমার মতো অনেক ক্রেতাই হাটে ঘুরছেন কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দামে ও মানে মেলাতে পারছেন না।
ক্রেতাদের অভিযোগ, অনেক বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের অভিযোগ, বড় গরুর ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি। দামদর করছেন, ঘুরছেন, কম ক্রেতাই কিনছেন। তাদের আশা করছি পরশু থেকে বাড়বে বেচাকেনা।
হাটের প্রধান ফটকের পাশেই কয়েক সারি জুড়ে বিভিন্ন জাতের বড় বড় সব গরু। বিক্রেতাদের নজর ক্রেতার খোঁজে, রাখালরা ব্যস্ত গরুর যত্ম ও খাবার খাওয়াতে।
মেহেরপুর থেকে ১৪টি ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের গরু নিয়ে সন্ধ্যায় নেমেছেন আলাল মিয়া। তিনি বলেন, আড়াই লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরু এখানে আছে। এখানে থাকলেই খরচ। লাভের মধ্যে পেলেই সব ছেড়ে দেবো।
তিনি বলেন, সন্ধ্যায় হাটে আসছি। দরদাম শুরু হয়েছে, ক্রেতারা আসছেন। তবে কিনতে আগ্রহী ক্রেতাদের নজর দেড় থেকে তিন লাখের গরুতে।
আফজাল হোসেন নামে ঢাকার কেরানীগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী দুই শেডজুড়ে গরু দিয়ে সাজিয়েছেন। নিজের ছাড়াও কেনা গরু এনেছেন তিনি।
তিনি বলেন, লাভের আশায় গতকাল এই হাটে ঢুকেছি। ৩৪ গরুর মধ্যে মাত্র ২টা বিক্রি করেছি। আবহাওয়া খারাপ। কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা মিলছে না। তবে হাট আগামী বুধবার বিকেল থেকেই পুরোদমে বেচাকেনার আশা তার।