বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এপ্রিল ২০২৫ মাসে সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৫০ শতাংশে, যা মার্চ মাসে ছিল ৭.৫৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মার্চে ঋণ প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ানোর পর আবার কমে গেছে।
ব্যাংকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মার্চে মৌসুমি আমদানি চাহিদা বৃদ্ধির ফলে যে ঋণ প্রবাহ দেখা গিয়েছিল, তার পরবর্তী মাসে কিছুটা মন্দা ছিল প্রত্যাশিত। একজন বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘রমজানের পর ভোগ্যপণ্যের চাহিদা স্থিতিশীল থাকলেও মার্চের মতো আমদানিনির্ভর অর্থায়নের তেমন চাপ ছিল না।’
গত মার্চ মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৮২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭.৫৭ শতাংশে পৌঁছে যায়, যা ছিল চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। রমজানকে সামনে রেখে আমদানি চাহিদা বৃদ্ধি ও দীর্ঘদিনের বকেয়া বৈদেশিক ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তর করে ‘ফোর্সড লোন’ হিসাবে দেখানোর ফলে ওই প্রবৃদ্ধি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এপ্রিল শেষে বেসরকারি খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭.২১ লাখ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় (১৬.০১ লাখ কোটি টাকা) বেশি।
গত কয়েক মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল নিম্নমুখী : জানুয়ারিতে ৭.১৫%, ডিসেম্বরে ৭.২৮%, নভেম্বরে ৭.৬৬%, অক্টোবর ৮.৩%, সেপ্টেম্বর ৯.২%, আগস্ট ৯.৮৬%, জুলাই ১০.১৩%, এবং জুনে ছিল ৯.৮৪%।
২০২৪ সালের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কারণে এই মন্দা আরো প্রকট হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাত এখনো গঠনগত কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এর মধ্যে রয়েছে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি, ঋণ বিতরণে ধীরগতি এবং মূলধনের ঘাটতি ইত্যাদি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩.৪৫ লাখ কোটি টাকা, যা আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২১.৩৩ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৯.৮ শতাংশ (জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত)। কিন্তু বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রশ্ন তুলছে।
এদিকে, কয়েকজন ব্যাংকের ঋণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘নতুন যে বাজেট পেশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি ঋণ বাড়বে। কারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের এখন চেয়ে ভালো। পাশাপাশি আমদানি ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।তাই আশা করা যায় সামনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ১১.৪৫% ও ২১.৯৭%। এ সময়ে মোট এলসি খোলা হয়েছে ৫৮.৯৪ বিলিয়ন ডলার এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৮.৮২ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে এপ্রিলে সামান্য মন্দার পর মে মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আবারো গতি ফিরে পেয়েছে, যেখানে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৪৫%। মে মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময় ছিল ৪.২৫ বিলিয়ন ডলার।
এক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। সরকার যদি আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখে, তাহলে নতুন বিনিয়োগ আসবে। অনেক ব্যাংকের হাতে এখন তারল্য রয়েছে। সরকার যদি বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ কম নেয়, তাহলে ব্যাংকগুলো ভালো গ্রাহকদের বেছে বিনিয়োগ করতে পারবে, যা একদিকে বিনিয়োগ বাড়াবে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।’
এফপি/ এসএন