উইনস্টন চার্চিল: সাহিত্যে নোবেলজয়ী রাজনীতিবিদ

উইনস্টন চার্চিল। একজন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, লেখক ও রাষ্ট্রনেতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কঠিন দুঃসময়ে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে অদম্য প্রতিরোধের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত।

১৮৭৪ সালের ৩০ নভেম্বর অক্সফোর্ডশায়ারে ডিউক অব মার্লবরোর এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চার্চিল। লেখাপড়ায় তিনি খুব একটা ভাল ছিলেন না। তবে খেলাধুলায় তার দক্ষতা ছিল চোখে পড়ার মত। তাই তিনি লেখাপড়া শেষ করে সেনা প্রশিক্ষণে ভর্তি হন। কমিশন লাভের পর তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি কিউবা এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে সেনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৮৯৯ সালে তিনি সামরিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় বোয়ার যুদ্ধে অংশ নেন। এ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯০০ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে তিনি ওল্ডহ্যাম থেকে কনজার্ভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯০৪ সালে লিবারেল পার্টিতে যোগ দেন। শ্রমিক শ্রেণির কল্যাণ ও দরিদ্রদের সহায়তা প্রদানে তার গভীর সহানুভূতি ছিল।

১৯০৮ সালে বাণিজ্য বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পান। দরিদ্রদের সহায়তা দিয়ে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে লয়েড জর্জের গণ বাজেটের সমর্থক ছিলেন। তিনি বলেছিলেন- “কিছু ভাল কাজের জন্য চেষ্টা না করলে এবং এই বিশৃঙ্খল পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য না করলে বেঁচে থেকে কী কাজ”?

একজন উদারপন্থী হলেও সমাজতন্ত্র ও ট্রেড ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল কঠোর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ১৯১১ সালে নৌবিভাগের ফার্স্ট লর্ডের দায়িত্ব পান। তবে ১৯১৫ সালে তুর্কিদের বিরুদ্ধে এক অভিযান ব্যর্থ হলে এ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার কমিউনিস্ট বিরোধী সেনাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন তিনি।

১৯২৪ সালে তিনি কনজার্ভেটিভ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। কিন্তু তার গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড নীতির কারণে নিম্ন প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও চরম বেকারত্ব দেখা দেয়। তিনি এটাকে একটি বড় ভুল বলে মনে করেছিলেন। ১৯৩০ সালে ইউরোপ জুড়ে জার্মান নাৎসি বাহিনীর আগ্রাসন শুরু হলে তিনি তা প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আবার ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ফার্স্ট লর্ডের দায়িত্ব পান।

১৯৪০ সালে প্রধানমন্ত্রী চেম্বার্লিন পদত্যাগ করলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বেই নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় মিত্র শক্তির জোট বিজয় লাভ করে। এ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন।
এসময় মস্কো, তেহরান, ইয়াল্টা ও নিউইয়র্কে বিভিন্ন সম্মেলনে তিনি অংশ নেন এবং ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ও জোসেফ স্ট্যালিনের সঙ্গে আলোচনা করে জাতিসংঘ গঠনে ভূমিকা রাখেন।

১৯৪৫ সালের নির্বাচনে কনজার্ভেটিভ হেরে গেলে তিনি বিরোধী দলের নেতৃত্ব দেন। স্নায়ুযুদ্ধের সময় পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাব নিয়ে তিনি সতর্ক করেন এবং সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার শাসনামলে ব্রিটেন পারমানবিক বোমা আবিষ্কার করে। তিনি দুটি আত্মজীবনীসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। ‘দ্য সেকন্ড ওয়ার্ল্ডওয়্যার’ এবং ‘অ্যা হিস্টোরি অব ইংলিশ স্পিকিং পিপল’ গ্রন্থ দুটির জন্য তিনি বিখ্যাত। তার এই অবদানের জন্য ১৯৫৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

স্বাস্থ্যের অবনতি হলে ১৯৫৫ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। তবে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৫ সালের ২৪ জানুয়ারি এই মহান নেতা মারা যান। ফ্যাসিবাদ থেকে উদার গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে ভূমিকা রাখায় বিংশ শতাব্দীর এক বিখ্যাত চরিত্র ছিলেন উইনস্টন চার্চিল।

 


টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবনির্বাচিত কমিটির আত্মপ্রকাশ Jul 01, 2025
img
'ফুটবলের প্রতি যে ভালোবাসা এখনও আমার ভিতরে আছে তা আমাকে চালিয়ে নিচ্ছে' Jul 01, 2025
img
‘জুলাই বললে লাল হয়ে যায় স্মৃতি’- প্রেস সচিব শেয়ার করলেন কবিতা Jul 01, 2025
img
এবার ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামটিও নিজের করে নিতে চান ধোনি Jul 01, 2025
img
জুলাই কেবল আবেগ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক: প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ আসামিদের পক্ষে অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি আগামী সোমবার Jul 01, 2025
img
পাকিস্তানে ২ সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বাড়ল পেট্রোল ও ডিজেলের দাম Jul 01, 2025
img
আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
আরেক মেয়াদে টিটুর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করল বাফুফে Jul 01, 2025
img
জাতীয় দলের নতুন নির্বাচক হিসেবে শিপনকে চায় বিসিবি Jul 01, 2025
ফেসবুক পোস্টে এই দিনটি স্মরণ করলেন উমামা ফাতেমা Jul 01, 2025
img
শহীদ আবু সাঈদের মায়ের দোয়া নিয়ে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু Jul 01, 2025
img
‘রামায়ণ’ এর শেষের দিনে চোখের জল আটকালেন না রণবীর! Jul 01, 2025
img
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু Jul 01, 2025
img
স্বৈরাচার পতনে যাতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয় সেই কাজ করছি : প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
আগামী ৫ দিন টানা বৃষ্টির আভাস Jul 01, 2025
img
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করল পাকিস্তান Jul 01, 2025
img
সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় মব হয়েছে : মোশাররফ আহমেদ Jul 01, 2025
img
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৩ হাজার, হাসপাতালে ২১৭ জন ভর্তি Jul 01, 2025
img
শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে মুক্তির স্বাদ দিয়েছে, জুলাই ক্যালেন্ডার উদ্বোধনে প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025