'ঐক্যমত্য গঠন কমিশন' গঠনের কারণ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

"এই নির্বাচন শুধু একটি সরকার গঠনের জন্য নয়, বরং একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য।" , লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "আমরা একটি উত্তেজনাকর সময় পার করছি। এই উত্তেজনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই, আর একটি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে রূপান্তর করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য শুধু নিয়মিত ভোট নয়, বরং ভোটের মাধ্যমে একটি নতুন আদর্শিক রাষ্ট্র গঠন।"

তিনি বলেন, “যেদিন আমরা দায়িত্ব নিই, যারা রক্ত দিয়েছিল, সেই তরুণদের স্বপ্নের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলাম আমরা। আমরা তাদের স্বপ্ন ও ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েছি। এখন সময় হয়েছে বিশ্ববাসীকে বিদায় জানিয়ে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে তোলার।”

নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা দিতে গিয়ে ইউনূস বলেন, এই রূপান্তরের ভিত্তি হবে তিনটি স্তম্ভের ওপর—প্রথমটি হলো সংস্কার। তিনি বলেন, “আমরা আর সেই পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফিরতে চাই না যেগুলো সমস্যার জন্ম দিয়েছে। আমাদের সকল প্রতিষ্ঠান সংস্কারের আওতায় আনতে হবে।”

এই উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন খাতে একাধিক কমিশন গঠন করে। নির্বাচন, সংসদ, সংবিধান, সিভিল সার্ভিসসহ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে কমিশনগুলো তাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ জমা দিয়েছে। এসব সুপারিশ আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

তিনি জানান, সুপারিশ বাস্তবায়নের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য জরুরি। সে কারণেই গঠিত হয়েছে ‘ঐক্যমত্য গঠন কমিশন’। এই কমিশনের দায়িত্ব, সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের একত্র করে আলোচনার মাধ্যমে সর্বজনস্বীকৃত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।

তবে ইউনূস স্বীকার করেন, "বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন ঐকমত্য তৈরি করা সহজ নয়। অনেক রাজনৈতিক নেতা হয়তো বলবেন, 'ভোটারদের উপর আস্থা রাখুন।' কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভোটদান প্রক্রিয়া কখনও কখনও অর্থের বিনিময়ে বিকৃত হয়। তাই আমরা চাচ্ছি একটি পরিশীলিত ও নৈতিক ভিত্তির ওপর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে।"

তিনি বলেন, "আমাদের চেষ্টার মূল লক্ষ্য, একটি বিশ্বাসযোগ্য, কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া তৈরি করা, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।"

চ্যাথাম হাউজে দেওয়া এই বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির রূপরেখা তুলে ধরেন, যা দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা বহন করে।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
খালেদা জিয়া আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে’ : ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ Nov 26, 2025
img
হামলার পর রমরিময়ে বেড়েছে ক্যাফের আয়, কানাডার পার্লামেন্টেও ‘স্টার’ কপিল শর্মা! Nov 26, 2025
img
আর্টসেলের লিংকনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে রাকসুর জিএসের মামলা Nov 26, 2025
img

লাতিন-বাংলা ফুটবল সুপার কাপ

ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ম্যাচের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা বাফুফের Nov 26, 2025
img
দুই বিএনপি নেতার বহিষ্কারাদেশ বহাল Nov 26, 2025
img
শিল্পী হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে আত্মসম্মান বোধ থাকলে চলবে না: মনোময় ভট্টাচার্য Nov 26, 2025
img
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, কারাগারে কেমন আছেন ইমরান খান? Nov 26, 2025
img
পুলিশ বক্সে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পেলেন না যুবদল কর্মী Nov 26, 2025
img
এখন বিয়ের জন্য আর কিছু বাকি থাকে না: মমতা শঙ্কর Nov 26, 2025
img
গোলাম রাব্বানীর ছাত্রত্ব বাতিল, জিএস পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত পরে Nov 26, 2025
img
আমি বলিউডে অভিনয় করতে চাই: ঋত্বিক চক্রবর্তী Nov 26, 2025
img
নোয়াখালী এক্সপ্রেসের প্রধান কোচের দায়িত্বে খালেদ মাহমুদ সুজন! Nov 26, 2025
img
খ্যাতির উল্টোপিঠটা মোটেই সুখকর নয়: গিরিজা ওক Nov 26, 2025
img
‘ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিলেন’, এবার সাঁতার কাটতে ব্যবসায়ীকে নিয়ে ট্যুরে মালাইকা, ফাঁস ভিডিও! Nov 26, 2025
img
এনসিপিসহ চার দলের সমন্বয়ে নতুন জোটের ঘোষণা আগামীকাল Nov 26, 2025
img
আমরা হিংসার রাজনীতি করি না, প্রতিশোধ নিতে চাই না: মির্জা ফখরুল Nov 26, 2025
img
তারেক রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে দেশকে ২৫ বছর এগিয়ে নিয়ে যাবেন : বুলু Nov 26, 2025
img
নভেম্বরের ২৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এলো ২৪৪১ মিলিয়ন ডলার Nov 26, 2025
img
মানহানিকর ভিডিও বক্তব্য প্রচার নিয়ে আলী রীয়াজের মন্তব্য Nov 26, 2025
img
রুক্মিণীর জন্য পাত্র চেয়ে শহরজুড়ে পোস্টার Nov 26, 2025