আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের নিরাপত্তা, দেশের রাজনীতির নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
বুধবার (জুন) লন্ডনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক থিঙ্কট্যাংক চ্যাথাম হাউসে আলাপচারিতায় এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। দ্য রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স নামে পরিচিত চ্যাথাম হাউস ১৯২০ সাল থেকে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ওপর গুরুত্ব দেয় এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিভিন্ন বিষয়ে এখানে কথা বলেন।
চ্যাথাম হাউসের পরিচালক ব্রনওয়ে ম্যাডক্সের সঞ্চালনায় আলাপচারিতায় প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের তিন দায়িত্ব—সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরিতে কাজ চলছে এবং আগামী জুলাই মাসে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেখানে সঞ্চালক তাঁকে প্রশ্ন করেন, যে জুলাই সনদ হচ্ছে, সমালোচকেরা বলবেন, অনেক রাজনৈতিক দলকে এর বাইরে রাখা হচ্ছে, যারা এর সঙ্গে একমত নয়, যেমন আওয়ামী লীগ; তাদের জন্য কোনো জায়গা রাখছেন না।
সুতরাং, মানুষকে কোনো বিকল্প দেওয়া হচ্ছে না। তারা বলছে, এটা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। এটা ঐকমত্য সম্পর্কে অনেক কথায় সুন্দরভাবে মোড়ানো বাংলাদেশের জন্য একটি কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ।
জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘হ্যাঁ। ঠিক আছে, এ নিয়েও বিতর্ক আছে। বিতর্ক হলো আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিক দল? যদি তারা রাস্তায় এভাবে তরুণদের হত্যা করতে পারে, এভাবে মানুষকে গুম করতে পারে, এভাবে টাকা চুরি করতে পারে, আমরা কি তখনো এটিকে রাজনৈতিক দল বলব? সুতরাং এটি একটি বিতর্ক। এটি কোনো সিদ্ধান্ত নয়।’
৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশের মানুষ তা উদ্যাপন করেছিল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা ভেবেছিল অবশেষে আমরা মুক্ত। তাই আমরা ভেবেছিলাম, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রস্থানের পর এটি শেষ হবে। আমাদের জন্য সেই অধ্যায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই অংশ শেষ। এখন এটি একটি নতুন দেশ, যেখানে তারা নেই। কিন্তু যারা পালিয়ে গেছে, তাদের জন্য এটা শেষ হয়নি। তারা একই কাজ করে যাচ্ছে। অনুপস্থিত থেকেও অন্য দেশ থেকে একইভাবে কাজ চালিয়ে গেছে, মানুষকে উসকানি দিচ্ছে, রাস্তায় সংঘর্ষ করছে। এখন ১০ মাস পার হয়ে গেছে, এর মধ্যে দলটির কেউ অনুশোচনা, দুঃখ প্রকাশ বা দোষ স্বীকার করেনি। বলেনি, কেউ আদেশ দিয়েছে, তাতে কেউ নিহত হয়েছে, আমি এর জন্য দায়ী নই। আমার খারাপ লাগছে যে আমাকে এটার অংশ হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই। ফলে আমাদের কাছে এটা শেষ, কিন্তু তাদের কাছে এটা এখনো চলছে।’
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘তাই আমরা নিরাপদ বোধ করি না, তারা রাস্তায় বিক্ষোভ করে, লোকজনকে হুমকি দেয়, তারা ইতিমধ্যে এই অভ্যুত্থানের নেতাদের হুমকি দিয়েছে। সুতরাং দেশের নিরাপত্তা, দেশের রাজনীতির নিরাপত্তার জন্য জাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এটুকুই আমরা করেছি। আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।’
এসএম/টিকে