অবশেষে বহুল আলোচিত ইউনূস-তারেক বৈঠকের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে দেশ। লন্ডনে মুখোমুখি হচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। লন্ডনের স্থানীয় সময় ১৩ জুন সকালে এই বৈঠক হবে। এতে ঠিক কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তা এখনও স্পষ্ট না হলেও, রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন—এই বৈঠক থেকেই নির্ধারিত হতে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি।
ড. ইউনূসের এবারের লন্ডন সফর শুধু একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। বৃটেনের রাজা চার্লস থ্রির হাত থেকে কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করার পাশাপাশি তিনি রাজার সঙ্গে একান্ত বৈঠকও করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে বৃটিশ রাজপরিবারের এমন উচ্চ পর্যায়ের সাক্ষাৎ এটিই প্রথম। এটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
তবে সে আনন্দ ছাপিয়ে দেশের রাজনীতিতে মুখ্য হয়ে উঠেছে তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠকটি। এই বৈঠককে ঘিরে শুধু রাজনৈতিক মহলে নয়, প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মাঝেও তৈরি হয়েছে প্রবল আগ্রহ। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দৃষ্টি এখন লন্ডনের দিকে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন এক সময়ে দুই নেতা বৈঠকে বসছেন, যখন নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন তুঙ্গে। বিএনপি’র দাবি, এই বৈঠকের উদ্যোগ মূলত এসেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেই। প্রথমদিকে বিএনপি এই বৈঠকে অনাগ্রহ দেখালেও পরে বিষয়টি নির্বাচনের আলোচনায় পরিণত হতে পারে, এই বিবেচনায় তারা বৈঠকে সম্মত হয়। এমনকি বৈঠকটি চূড়ান্ত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন।
এই বৈঠকে নির্বাচনের দিনক্ষণ, নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো, এবং প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায় কি না এমন সম্ভাবনা থেকেই বৈঠকটি এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে এলেও ড. ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, এপ্রিলে ভোট হবে। এই দুই অবস্থানের মাঝামাঝি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে—এমন একটি সম্ভাব্য সমঝোতার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে বৈঠকের আলোচনায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হতে পারে আস্থার সংকট কাটানোর একটি প্রয়াস। অনেকে বলছেন, নির্বাচন নিয়ে এই লন্ডন বৈঠকই হতে পারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনের এক টার্নিং পয়েন্ট। সব কিছু ঠিকঠাক চললে শুক্রবারের এই বৈঠক শুধু একদিনের আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
টিকে/টিএ