ইরানের রাজধানী তেহরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে তেলের বাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়, ইরানে ইসরাইলের হামলার সরাসরি প্রতিক্রিয়া পড়েছে তেলের বিশ্ববাজারে। শুক্রবার সকালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৫ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গত দুই মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে (৩ এপ্রিলের পর) সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩.৯১ ডলার বা ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি দাঁড়িয়েছে ৭৩.২৭ ডলারে। আর মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ৬ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৪.০৯ ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয়েছে ৭২.১৩ ডলারে।
এমএসটি মার্কির সিনিয়র জ্বালানি বিশ্লেষক শৌল কাভোনিক বলেন, `ইরানের ওপর ইসরাইলি আক্রমণ ঝুঁকির প্রিমিয়ামকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তেল সরবরাহ বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগে এই সংঘাতকে এই অঞ্চলে তেল অবকাঠামোর ওপর ইরানের প্রতিশোধের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। চরম পরিস্থিতিতে ইরান অবকাঠামোর ওপর আক্রমণ চালাতে পারে বা হরমুজ প্রণালী দিয়ে চলাচল সীমিত করে দিতে পারে, যার ফলে প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে।‘
এর আগে শুক্রবার সকালে ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্ব দিকে বিশাল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, তারা ‘নেশন অফ লায়ন্স’ নামে একটি পূর্বপরিকল্পিত সামরিক অভিযানে ইরানে আঘাত হেনেছে। টাইমস অফ ইসরাইলের বরাতে জানা গেছে, এই হামলায় ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘এই হামলাটি উচ্চমানের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে এবং এর মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা। দুই ডজনেরও বেশি জেট বিমানের সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযান ছিল নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত এবং সুনির্দিষ্ট।’
অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন, ‘এই হামলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করা। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ এই অভিযান অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না আমরা মিশনটি সম্পন্ন করি।’
তবে ইরানের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভি অভিযোগ করেছে, ইসরাইলি হামলায় আবাসিক ভবনকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরাইল।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল নিজের ভূখণ্ডেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশটির সামরিক মুখপাত্রের দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারা দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সব ধরনের শিক্ষামূলক কার্যক্রম, সমাবেশ এবং কর্মক্ষেত্রের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দেশের প্রতিরক্ষা নীতিতে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সমস্ত অঞ্চলকে পূর্ণ কার্যক্রম স্তর থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম স্তরে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
এই ঘটনার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইলের এই হামলা একদিকে যেমন তাদের নিরাপত্তার অবস্থান শক্তিশালী করেছে, তেমনি ইরানকে প্রতিশোধে উস্কে দিচ্ছে। ফলে পরবর্তী কয়েকদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আরআর/এসএন