ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলাকে গভীরভাবে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের পারমাণবিক তদারকি সংস্থা আইএইএ-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।
এক বিবৃতিতে তিনি আইএইএ বোর্ড সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর কোনো অবস্থাতেই হামলা করা উচিত নয়—যেকোনো প্রেক্ষাপট বা পরিস্থিতিতেই—কারণ এটি মানবজীবন ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা পারমাণবিক নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং তদারকি ব্যবস্থার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে।’
রাফায়েল গ্রোসি সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান, যাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ না হয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ যা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিপন্ন করে, তা ইরান, পুরো অঞ্চল এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক পরিসরে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে যে সামরিক উত্তেজনা ও সংঘাত চলছে, তার মধ্যেও এটা স্পষ্ট যে টেকসই শান্তির একমাত্র পথ হলো—ইরান, ইসরায়েল, গোটা অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য—আলোচনা এবং কূটনৈতিক সমাধানকে ভিত্তি করে এগিয়ে যাওয়া।’
গ্রোসি জানিয়েছেন, ইসরায়েল যখন দাবি করেছে তারা ইরানের ‘পারমাণবিক কর্মসূচির কেন্দ্রস্থলে’ আঘাত হেনেছে, তখন থেকেই তিনি ইরানে থাকা আইএইএ পরিদর্শকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন।
এর ঠিক আগের দিন বৃহস্পতিবার, আইএইএ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিল যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ সংক্রান্ত (এনপিটি) চুক্তির বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে—এই প্রথমবারের মতো গত ২০ বছরে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পটভূমিতে ইসরায়েলের হামলা পারমাণবিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে গভীর উৎকণ্ঠার সঙ্গে।
এদিকে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ইরানের নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তার (রেডিয়েশন) মাত্রা বৃদ্ধি পায়নি বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে আইএইএ জানায়, ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট দিয়ে বলেন, ‘ইরানি কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়নি এবং নাতানজ সাইটে কোনো রেডিয়েশন বৃদ্ধিও পরিলক্ষিত হয়নি।’ তিনি আরো জানান, ‘আইএইএ ইরানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রেডিয়েশন মাত্রা বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে এবং দেশটির অভ্যন্তরে থাকা আমাদের পরিদর্শকদের সঙ্গেও আমরা নিয়মিত যোগাযোগে আছি।’
নাতানজ ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যেখানে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সেন্ট্রিফিউজ তৈরি ও ব্যবহৃত হয়। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, তারা এই কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
তবে আইএইএ’র এই নিশ্চিত বার্তা কিছুটা হলেও উদ্বেগ প্রশমিত করেছে, বিশেষ করে পারমাণবিক দুর্ঘটনার আশঙ্কা ঘিরে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল, সেটি এখন কিছুটা কমে এসেছে। তবুও পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ থাকায় পারমাণবিক নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ রয়েই গেছে।
কেএন/টিকে