হলিউড ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে, যারা শুধু নায়ক নন, একেকজন জীবন্ত চরিত্রের ব্যাখ্যা। সেই তালিকার শীর্ষে নিঃসন্দেহে রয়েছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। রোমান্টিক হিরো থেকে শুরু করে মানসিক টানাপোড়েন, জীবনের কঠিন বাস্তবতা কিংবা কল্পনার গভীর জগতে প্রবেশ—প্রতিটি চরিত্রে তিনি দিয়েছেন অভিনয়ের নতুন সংজ্ঞা।
‘টাইটানিক’-এর জ্যাক ডসনের প্রেমিক রূপে তিনি হয়ে উঠেছিলেন গোটা দুনিয়ার হৃদয়ের অধিপতি। এক দরিদ্র শিল্পীর চোখ দিয়ে ধরা সেই প্রেম আর ট্র্যাজেডি তাকে নিয়ে যায় বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার চূড়ায়। ক্যাট উইন্সলেটের সঙ্গে তার অনবদ্য রসায়ন আজও রোমান্টিক সিনেমার মাপকাঠি হয়ে আছে।
তারপর এলো ‘ইনসেপশন’। স্বপ্ন আর বাস্তবতার ধূসর সীমায় দাঁড়িয়ে ডম কাব চরিত্রে ডিক্যাপ্রিও দেখালেন, অভিনয় কীভাবে দর্শকের মনোজগতেও প্রবেশ করতে পারে। ক্রিস্টোফার নোলানের এই জটিল সিনেমার প্রাণ তিনি নিজেই।
‘দ্য উলফ অফ ওয়াল স্ট্রিট’-এ তার জর্দান বেলফোর্ট হয়ে ওঠা ছিল এক অদ্ভুত আকর্ষণের দৃষ্টান্ত। উন্মাদনা, মাদকতা আর নৈতিকতার টানাপোড়েন—সবকিছুর মধ্যেই তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে নায়কের গায়ে খলচরিত্রের ছাপ রেখেও দর্শক টেনে রাখা যায়।
অস্কারজয়ী ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ তার ক্যারিয়ারের যেন এক অন্য উঁচু পাহাড়। কথার চেয়ে চোখে, ঘায়ে আর নিঃশ্বাসে বলা এই চরিত্র তাকে এনে দিয়েছে বহু প্রতীক্ষিত স্বীকৃতি। প্রকৃতির নির্মমতার মধ্যে জীবন রক্ষার যুদ্ধে এক অভিনেতা কীভাবে সত্যিই নিজেকে ভেঙে গড়েন, তা তিনি প্রমাণ করেছেন।
তবে, তার ক্যারিয়ারের আরেক গর্ব ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’। টম হ্যাঙ্কসের সঙ্গে মুখোমুখি এই সিনেমায় তিনি যেন আধুনিক জীবনের চাতুর্য আর শৈশবের অভিমান মিশিয়ে তৈরি করেছিলেন এক অসাধারণ প্রতারকের মানবিক রূপ।
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও শুধু অভিনয় করেন না, চরিত্র হয়ে ওঠেন। তার বেছে নেওয়া প্রতিটি চরিত্রই যেন সময়ের আয়নায় জীবনের নতুন প্রতিচ্ছবি। আজকের হলিউডে তার মত বহুমাত্রিক ও বাস্তবধর্মী অভিনয়ের উদাহরণ খুবই বিরল।
তিনিই সেই অভিনেতা, যিনি প্রেমিক থেকে যোদ্ধা, চতুর প্রতারক থেকে ভেঙে পড়া মানুষ—সবই হতে পারেন, নিজের সত্যতাকে বিসর্জন না দিয়েই। এবং সেখানেই তিনি কিংবদন্তি।
এসএন