ভুয়া ভিসা নিয়ে যেভাবে ঢাকা থেকে ইমিগ্রেশন পার হলেন একসঙ্গে ৩০ জন

ভুয়া ভিসা নিয়ে ভ্রমণের অভিযোগে তুরস্কের বিমানবন্দর থেকে ৩০ বাংলাদেশি ফেরত পাঠিয়েছে তুর্কি কর্তৃপক্ষ। গত ১১ জুন সকালে ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া তুর্কিশ এয়ারলাইন্সের TK-713 ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন ওই ৩০ জন। জানা গেছে তারা তুরস্কের ই-ভিসা নিয়ে রওনা হয়েছিলেন ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেরত পাঠানো ওই ৩০ বাংলাদেশির মধ্যে কারোই আগে বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা নেই; এমনকি তাদের মধ্যে অনেকেই ফ্লাইটে ওঠার জন্যই জীবনে প্রথমবার ঢাকায় এসেছেন। তাদের মধ্যে কেউ দিনমজুর, কেউ দোকানদার, কেউ গার্মেন্টস কর্মী। ইমিগ্রেশনে তারা বলেছিলেন, পাঁচ দিনের জন্য তুরস্ক যাচ্ছেন।

প্রত্যাবর্তীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা তুরস্কে যাওয়ার জন্য ভ্রমণ ভিসা দেখালেও আসল লক্ষ্য ছিল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া হয়ে লিবিয়া, সেখান থেকে ইউরোপে পৌঁছানো। এ যাত্রায় প্রত্যেকে দালালদের হাতে ৮ থেকে ১৮ লাখ টাকা দিয়েছেন।

তারা জানান, ভ্রমণের আগে ঢাকার পল্টনে এক হোটেলে ট্রেনিংয়ের মতো করে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়—মিশর ও লিবিয়ার ভিসা ‘লুকিয়ে’ রাখতে হবে এবং ইমিগ্রেশনে শুধু তুরস্ক ট্যুর বলেই দাবি করতে হবে।

১১ জুন ভোররাতে যাত্রার দিন শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে ছিল “সি” শিফট। যাত্রীদের একজন জানান, একজন অফিসার একসঙ্গে ৩০ জনের পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস নিয়ে গিয়ে ফিরিয়ে দেন এই লিখে—“OK from prosecution, concerned A-31 sir”। এরপর সবাইকে ইমিগ্রেশন সিল দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তদন্তে জানা গেছে, A-31 কল সাইনটি ব্যবহার করেন ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। যাত্রীদের তথ্য ও ভিসা যাচাই করতে এসআই রাহিয়াতুল জান্নাত কাগজপত্র সরবরাহ করেন ওসিকে। তার নির্দেশেই ‘OK’ মন্তব্যটি লেখা হয়, যা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা 'চাপ' হিসেবে দেখেন।


যাত্রীদের পাসপোর্টে ছিল “বি-১ ক্যাটাগরির” ভিসা, যা কেবল শেনজেন, ইউকে বা ইউএস ভিসা/রেসিডেন্সিধারীদের জন্য অনুমোদিত। অথচ ফিরিয়ে দেওয়া ৩০ জনের কেউই এই যোগ্যতা রাখতেন না। তাছাড়া, তাদের হাতে ছিল মিশরের বোর্ডিং পাস, যা তারা পেয়েছেন ঢাকায় থাকা দালালদের কাছ থেকে।

তুরস্কে পৌঁছে ইমিগ্রেশন না করে বিমানবন্দরে ঘোরাফেরা করার সময় পুলিশ সন্দেহ করে। এক পর্যায়ে জেরা করে ভুয়া ভিসার তথ্য পায়, এবং পরে সবাইকে আটক করা হয়। ২৪ ঘণ্টা আটক রেখে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

ঘটনার সময় NSI সদস্যরা সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেয়ে প্রসিকিউশন অফিসারকে অবহিত করেন, তবে সেসময় ভিআইপি মুভমেন্ট থাকায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
 
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এই যাত্রীরা মূলত বিভিন্ন অঞ্চলের এবং আলাদা দালালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। তাই চক্রের মূল হোতাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছে।
 
মানবপাচারের আন্তর্জাতিক চক্র এখন নতুন রুট হিসেবে তুরস্ক-মিশর-লিবিয়া ব্যবহার করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই যাত্রায় নিরীহ সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। যারা সফল হন, তাদের ভাষায়—‘গেম ওভার’, কিন্তু এই ৩০ জনের জন্য এটি ছিল—‘গেম ডিসমিসড’।

টিকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

সংসদের উচ্চকক্ষে ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টনের পরামর্শ Jun 22, 2025
img
টেস্টে শতক এবং ছক্কায় ধোনিকে ছাড়িয়ে গেলেন পন্ত Jun 22, 2025
নির্বাচনের তারিখে একক দলের প্রাধান্য অযৌক্তিক: এনসিপি নেতা আদীব Jun 22, 2025
রমিজ উদ্দিন কলেজ শিক্ষার্থীদের টি-শার্টে 'শেখ হাসিনা আসবে' স্লোগান Jun 22, 2025
দশ মিনিটের সারা বিশ্বের সর্বশেষ খবর Jun 22, 2025
img
সপ্তাহজুড়ে বিশ্ববাজারে কমেছে স্বর্ণের দাম, বড় পরিবর্তনের আভাস Jun 22, 2025
‘ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যায় নয়, গুণে বিশ্বাসী ইরান, এবার শ্রেষ্ঠত্ব দেখবে ইসরায়েল' Jun 22, 2025
img
হাজারীবাগের ট্যানারি গলিতে ভয়াবহ আগুন Jun 22, 2025
img
এ ধরনের পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়িয়ে দেবে: কাতার প্রধানমন্ত্রী Jun 22, 2025
img
ইরানের এফ-১৪ যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে হামলার দাবি করল ইসরায়েল Jun 22, 2025
img
নতুন মাত্রায় হামলা চালালো ইরান Jun 22, 2025
img
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী Jun 22, 2025
img
ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, জানাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় Jun 22, 2025
img
আমরা পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ করবো না: পেজেশকিয়ান Jun 22, 2025
img
'স্বাধীন দেশ নয়, নিয়ন্ত্রণযোগ্য ইরান চান ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু' Jun 22, 2025
img
নিজ দেশের গোয়েন্দা প্রধানের সাথে বাড়ছে ট্রাম্পের দূরত্ব Jun 22, 2025
img
দিনাজপুরে এনসিপির কমিটিতে স্থান পেয়েছেন যুবলীগ নেতা Jun 22, 2025
img
দেখা করার প্রস্তাব ইয়ামালই দিয়েছিলেন, দাবি পর্ন তারকার Jun 22, 2025
img
দখলদার ইসরায়েলের হামলায় ইরানে ৫ সেনা নিহত, আহত ৯ Jun 22, 2025
img
সমালোচনা তো থাকবেই, দলের জন্য অবদান রাখতে পারাটাই গুরুত্বপূর্ণ: শান্ত Jun 22, 2025