বিশ্ব মার্কিন হামলার পর ইরানের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা করেছে, যা ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে পশ্চিমা শক্তির সবচেয়ে বড় সামরিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ৩০ হাজার পাউন্ডের বাংকার-বাস্টার বোমা ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার ওপরে ফেলেছে। এ হামলার পর আমেরিকার নেতৃবৃন্দ তেহরানকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং কিছু এলাকায় যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদও হচ্ছে।
এ ঘটনার পর ইরান পরবর্তীতে নিজেদের আত্মরক্ষা করার অঙ্গীকার করেছে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোয় ঘটনায় প্রতিবাদ হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষ রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। ফ্রান্স, পাকিস্তান, গ্রিস ও ফিলিপিন্সের প্রতিবাদকারীরা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধে বড় ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে ইরানে শাসন পরিবর্তনের ধারণা উত্থাপন করেন। তিনি লেখেন, ‘এটি রাজনৈতিকভাবে সঠিক নয় ‘শাসন পরিবর্তন’ শব্দটি ব্যবহার করা, কিন্তু যদি বর্তমান ইরানি শাসন ইরানকে ‘আবার মহান না করতে পারে’, তবে কেন শাসন পরিবর্তন না হবে?’
ইরান এবং ইসরায়েল পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে থাকে। এক ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র জানান, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান পশ্চিম ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। পূর্বে ইরান তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যাতে বহু মানুষ আহত হয় এবং কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ সতর্কতা জারি করেছে, যেখানে সাইবার হামলা বা টার্গেটেড সহিংসতার সম্ভাবনা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, বড় বড় মার্কিন শহরগুলোতে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক স্থানগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাকচি তেহরানে এক বক্তব্যে জানান, তাদের দেশ সব ধরনের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি কোনো সম্মান দেখায়নি, তারা শুধু হুমকি ও শক্তির ভাষা বোঝে।’ ট্রাম্প একটি টেলিভিশন ভাষণে এ হামলাকে ‘একটি অবিশ্বাস্য সামরিক সফলতা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করে, ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক শোধনাগার ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।'
কমার্শিয়াল স্যাটেলাইট চিত্র অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ফোরদো পারমাণবিক প্ল্যান্টে মারাত্মক ক্ষতি করেছে, যদিও সেখানে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে, ইরানের একজন শীর্ষ সূত্র জানিয়েছেন, সেখানে অধিকাংশ পরিশোধিত ইউরেনিয়াম হামলার আগেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, ইউ.এন. পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর কোনো ধরনের অতিরিক্ত বিকিরণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিশ্ব অর্থনীতি প্রভাবিত হতে পারে যদি ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। হরমুজ প্রণালী দিয়ে বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পার হয়ে থাকে এবং এর মাধ্যমে তেল মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। বিশ্বের নিরাপত্তা পরিষদ গত রবিবার মার্কিন হামলা নিয়ে আলোচনা করতে সভা করেছে, যেখানে রাশিয়া, চীন এবং পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ইরানে পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি কমাতে সক্ষম হতে খুব কাছে চলে এসেছে। একই সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদী দলের সদস্যরা নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য শহরে ‘ইরানকে ছাড় দাও’ স্লোগান তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স
আরএম/এসএন