গভীর রাতে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দের মধ্যে, এক অজানা আতঙ্ক আর এক লাল শাড়ির রহস্যময় ছায়া—“বুলবুল” মুক্তি পেয়েছিল ২০২০ সালে। আজ, পাঁচ বছর পেরিয়ে সেই ছবি এখনও দর্শকের স্মৃতিতে ছাপ রেখে গেছে। আর সেই ছাপ সবচেয়ে গাঢ় ত্রিপ্তি ডিমরির মুখে — যিনি শুধু একটি চরিত্র নন, বরং একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন।
পরিচালক অন্বিতা দত্তের হাতে ‘বুলবুল’ কেবল একটি হরর সিনেমা নয়, বরং এক কাব্যিক প্রতিশোধের গাঁথা হয়ে উঠেছিল, যেখানে লোককথা, অলৌকিকতা ও নারী-ক্ষমতায়নের মোহময় সংমিশ্রণ ছিল। এক বাল্যবধূ থেকে এক প্রতিশোধপরায়ণ রমণীতে ত্রিপ্তির রূপান্তর ছিল বলিউডে বিরল এক অভিনয় মাইলফলক। তাঁর চোখে, শরীরী ভাষায়, আর চুপ থাকা অভিমানে — ফুটে উঠেছিল অবদমিত রাগ, দীর্ঘশ্বাস আর মুক্তির আকুতি।
‘বুলবুল’-এর লাল শাড়ি একসময় হয়ে ওঠে নারীর প্রতিশোধের প্রতীক। সেই লাল রঙ যেন শুধু পোশাক নয়, বরং আগুন, যন্ত্রণা আর শক্তির রূপান্তর। আর ত্রিপ্তি ডিমরি ছিলেন সেই আগুনের অগ্রদূত।
যদিও ‘অ্যানিমাল’ তাঁকে নিয়ে আসে মূলধারার দর্শকের দরজায়, ত্রিপ্তি নিজের মুখে বলেন—‘বুলবুল’ ছিল তাঁর সবচেয়ে কঠিন অভিজ্ঞতা। মানসিক দিক থেকে এতটাই গভীরে গিয়ে অভিনয় করতে হয়েছিল, যে নিজেকে প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলেন তিনি। তবুও, সেই চ্যালেঞ্জই তাঁকে তৈরি করে বলিউডের ভবিষ্যৎ শক্তি হিসেবে।
রাহুল বোসের মতো এক অভিজ্ঞ অভিনেতার সঙ্গে সমানে সমানে অভিনয় করে ত্রিপ্তি প্রমাণ করেছেন—শুধু সৌন্দর্য নয়, তাঁর মধ্যে আছে গভীরতা, সংযম ও অভিনয়ের পরিপক্বতা।
এই পাঁচ বছরে ত্রিপ্তির ফিল্মোগ্রাফি যেন এক ছক ভাঙার উদাহরণ। তিনি কখনো কেবল ইনডি ঘরানার 'ডার্লিং' থেকে বেরিয়ে এসে একের পর এক ব্লকবাস্টারে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন—‘স্পিরিট’-এ প্রভাসের বিপরীতে, ‘ঢাড়াক ২’-এ সিদ্ধান্ত চতুর্বেদীর সঙ্গে, আবার ‘অ্যানিমাল পার্ক’-এ রণবীর কাপুরের সঙ্গে। শাহিদ কাপুর ও ইমতিয়াজ আলির আসন্ন প্রজেক্টেও রয়েছেন তিনি—যা প্রমাণ করে, প্রযোজক-পরিচালকদের চোখে তিনিই এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় নাম।
ত্রিপ্তির এই যাত্রা প্রমাণ করে, একটি চরিত্র, একটি দৃঢ় পারফরম্যান্স কতদূর নিয়ে যেতে পারে একজন অভিনেত্রীকে। ‘বুলবুল’ পেরিয়ে গিয়েছে পাঁচ বছর, কিন্তু ত্রিপ্তির প্রভাব যেন দিন দিন আরও বিস্তৃত হচ্ছে। যে প্রতিভা একসময় চুপচাপ আবিষ্কৃত হয়েছিল, আজ সে বলিউডের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
ত্রিপ্তির সফর আমাদের শেখায়, যখন অভিনয় হয় সত্য, গল্প হয় সাহসী — তখন সৃষ্টি হয় ইতিহাস।
আরআর/এসএন