নাইজেরিয়ার জামফারা রাজ্যে সরকারি সহায়তায় পরিচালিত এক প্রতিরক্ষা অভিযানে কুখ্যাত সন্ত্রাসী নেতা বেলো তুরজির ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে তার শতাধিক যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা আহমদ মাঙ্গা এই তথ্য জানান।
গত কয়েক বছর ধরে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের গ্রামাঞ্চলে ‘ব্যান্ডিট’ নামে পরিচিত সশস্ত্র অপরাধী চক্রগুলো চরম তাণ্ডব চালিয়ে আসছে। তারা সাধারণত কোনো আদর্শবাদী সংগঠন নয়, বরং মুক্তিপণ আদায়, গবাদি পশু চুরি এবং লুটপাটের জন্য এই হামলা চালায়।
তবে সম্প্রতি এই ব্যান্ডিটদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জিহাদিদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
জামফারা রাজ্যের সিভিলিয়ান প্রটেকশন গার্ড (সিপিজি) সদস্যরা বেলো তুরজির শক্ত ঘাঁটি শিনকাফি জেলায় অভিযান চালান। মাঙ্গা জানান, এই অভিযানে নাইজেরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা (ডিএসএস) ও উত্তর-পূর্ব বর্নো রাজ্য থেকে আনা মিলিশিয়ারা সহায়তা করে, যারা সাধারণত জিহাদিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে।
মাঙ্গা বলেন, ‘এই যৌথ বাহিনী তুরজির ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায় এবং সেখানেই তার ১০০-এরও বেশি যোদ্ধা নিহত হয়।’
এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন একজন সাবেক ব্যান্ডিট নেতা বাশারী মানিয়া। তিনি এখন সরকারি বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন। মাঙ্গা বলেন, ‘এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল তুরজিকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় ধরা।’
একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, তুরজি আগেই এই অভিযানের পরিকল্পনা জেনে ফেলেন এবং আশপাশের অন্যান্য ব্যান্ডিট ঘাঁটি থেকে যোদ্ধা এনে প্রস্তুতি নেন।
সূত্রটি জানায়, ‘মোট মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা বলা কঠিন, তবে ব্যান্ডিটদের দিকেই বড় ক্ষতি হয়েছে।’
এই সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন সিভিল মিলিশিয়া ও ভিজিলান্টি নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন মানিয়াও। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা সূত্র এবং রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা উভয়েই।
৩১ বছর বয়সী বেলো তুরজি ২০১১ সালে নিজের শহর শিনকাফিতে পশুপালন ছেড়ে গবাদি পশু চুরি ও মুক্তিপণ আদায়ের পথে পা রাখেন। জামফারা ও প্রতিবেশী সোকোতো রাজ্যে শত শত গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
তুরজি অতীতে জামফারা সরকারের সঙ্গে একাধিক শান্তি চুক্তি করলেও বারবার তা ভেঙে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি এক ভিডিও বার্তায় হুমকি দেন, নাইজেরিয়াকে অস্থিতিশীল করতে তিনি বিদেশি গ্যাংদের আমন্ত্রণ জানাবেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তার ঘাঁটিতে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় তার ভাইসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয় নিহত হলেও তুরজি নিজে বেঁচে যান।
নাইজেরিয়ার ব্যান্ডিট সহিংসতা শুরু হয়েছিল মূলত পশুপালক ফুলানি জনগোষ্ঠী এবং কৃষকদের মধ্যে জমি ও পানি নিয়ে সংঘর্ষ থেকে। পরে এটি বৃহত্তর অস্ত্র পাচার ও অপরাধচক্রের সংঘাতে রূপ নেয়। বেলো তুরজির মতো নেতারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বোকো হারামসহ জিহাদিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এতে দেশজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
জামফারায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সর্বশেষ এই অভিযান ব্যান্ডিটদের বিরুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য বিজয় হলেও, তুরজির মতো নেতাদের সম্পূর্ণ দমন না করা পর্যন্ত নাইজেরিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এদিকে সাধারণ মানুষ এবং বিশ্লেষকরা চাইছেন, এই বিজয় যেন দীর্ঘমেয়াদে শান্তির ভিত্তি তৈরি করে।
এসএম/টিকে