২০১৮ সালের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধি অনুমোদনের আদেশ স্থগিত

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধি অনুমোদন ও গ্রহণ করে ২০১৮ সালের আপিল বিভাগের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে যে আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ, সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন সর্ব্বোচ আদালত।

রোববার (২৯ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য ৫ জন হলেন— বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

এ আদেশের ফলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্টে যে রিট শুনানি চলছে, তা নিষ্পত্তি করতে আর কোনো বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

এর আগে গত ২৬ জুন নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধির বহুল আলোচিত গেজেট গ্রহণ করে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদনের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

আদালতে সেদিন রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, আজ শুনানিকালে বলেছি যে বিচার বিভাগকে “অ্যাসল্ট করে” এই শৃঙ্খলা বিধি গ্রহণ করা হয়েছিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে। কারণ, তার আগে নয়জন বিচারপতি এ বিষয়ে ভিন্ন আদেশ দিয়েছিলেন। এটি বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তৎকালীন সরকার বাধ্য করেছিল নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের গেজেট সংক্রান্ত আদেশ দিতে। এটি দ্রুত রিভিউ করা প্রয়োজন বলেই আদালতের অনুমতি নিয়ে রিভিউটি করা হয়েছে।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে ১. সংবিধানের ১৫২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সব বিভাগের কাজ সার্ভিস অব রিপাবলিকের ভেতরে পড়বে। তবে বিচার বিভাগের কাজ ও অবকাঠামোর সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের সিভিল সার্ভিসের অনেক ভিন্নতা রয়েছে।

বিচার বিভাগকে অন্যান্য সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে একত্রিত করা যাবে না; ২. বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা এবং নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারিক কাজ করতে পারবেন না; ৩. সিভিল সার্ভিস অর্ডার ১৯৮০ অনুযায়ী সব ম্যাজিস্ট্রেটকে পিএসসির অধীনে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়। একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি; ৪. এই রায় পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা এবং কমিশন গঠন করতে হবে; ৫. সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়ারির সবার চাকরির বিধিমালা (নিয়োগ, পদায়ন, বদলি পদোন্নতি ও ছুটিসহ অন্যান্য) প্রণয়ন করবেন; ৬. রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা প্রণয়ন করবে; ৭. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের থাকবে; ৮. বিচার বিভাগ জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকবে না এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করবেন; ৯. জুডিশিয়ারির (নিম্ন আদালত) বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হাত থাকবে না।

এই বাজেট সুপ্রিম কোর্ট প্রণয়ন এবং বরাদ্দ করবে; ১০. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা প্রশাসনিক আদালতের আওতাভুক্ত থাকবেন; ১১. এই রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগ পৃথককরণের জন্য সংবিধানে কোনো সংশোধন করার প্রয়োজন নেই। তবে পৃথককরণ আরও অর্থবহ করতে যদি সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে তা করা যাবে; ১২. জুডিশিয়াল পে-কমিশন: জুডিশিয়াল পে-কমিশন জুডিশিয়ারির সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ না করবে, ততদিন পর্যন্ত বর্তমান অবকাঠামো অনুযায়ী তার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। ২০০৫ সালে এই রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদকে আইকনিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে : ধর্ম উপদেষ্টা Oct 13, 2025
img
বিশ্বনাথে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার Oct 13, 2025
img
রাতে ঘুমানোর আগে এই ১টি কাজ করলেই দূর হবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা! Oct 13, 2025
img
মোরেলগঞ্জে সাড়ে ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার Oct 13, 2025
img
ট্রুডোর সঙ্গে প্রমোদতরীতে ঘনিষ্ঠ কেটি পেরি Oct 13, 2025
img
খুলনায় লটারির মাধ্যমে ১৫ জন এসি ল্যান্ডের পদায়ন Oct 13, 2025
img
ট্রাম্পের আমলে মার্কিন শেয়ারবাজারে এক ঐতিহাসিক ধস Oct 13, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Oct 13, 2025
মক্কায় স্বর্ণের বিশাল মজুদ আবিষ্কার, সৌদির অর্থনীতিতে নতুন মোড় Oct 13, 2025
বিএনপি-জামায়াতের মতাদর্শের ট্যাগ এড়াতে বিকল্প পথে এনসিপি Oct 13, 2025
চাকসু নির্বাচন বর্জন করবে কি ছাত্রদল? প্রশ্নের জবাবে যা বললেন জিএস প্রার্থী! Oct 13, 2025
img
পেট্রোবাংলার কড়া বার্তা: অবৈধ গ্যাস ব্যবহার বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ Oct 13, 2025
প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঁচ দফা দাবিতে স্মারকলিপি জামায়াতের Oct 13, 2025
হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলা সরাসরি সম্প্রচারকালে ফেসবুক পেইজে সাইবার হা/ম/লা Oct 13, 2025
প্রিন্স মাহমুদের ঘুমের ওষুধের টিপস সারজিসের জন্য! Oct 13, 2025
মোট ভোটারের অর্ধেকই অনাবাসিক, বদলে যেতে পারে বিজয়ের সমীকরণ Oct 13, 2025
img
মেঘনায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে আটক ১১ জেলে, ৮ জনের কারাদণ্ড Oct 13, 2025
ট্রাইব্যুনালে হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু Oct 13, 2025
প্রয়োজনে নারীরা যেকোনো কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পারেন: শিবিরের ভিপি প্রার্থী Oct 13, 2025
আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে অবশ্যই আদালতে আনতে হবে: চিফ প্রসিকিউটর Oct 13, 2025