সব ভালোর শেষের মতো আনহেল দি মারিয়ার ইউরোপীয় অধ্যায়ও শেষ হলো। তবু এমন কিছু শেষ থাকে, যা মেনে নেওয়া কঠিন। ইউরোপে ১৮ বছরের এক বিস্ময়কর যাত্রা শেষ হলো পরশু রাতে, ক্লাব বিশ্বকাপে বেনফিকার শেষ ম্যাচ দিয়ে।
তার ইউরোপীয় ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি। শেষ ষোলোর অতিরিক্ত সময়ে ৪-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় বেনফিকা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরানো গোলটি দিয়েছিলেন দি মারিয়াই। পেনাল্টি থেকে করা সেই গোল ম্যাচটিকে নিয়ে গিয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। ক্লান্ত শরীরেও লড়াই করেছিলেন শেষ পর্যন্ত। শেষ ষোলোর অতিরিক্ত সময়ে ৪-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় বেনফিকা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরানো গোলটি দিয়েছিলেন দি মারিয়াই। পেনাল্টি থেকে করা সেই গোল ম্যাচটিকে নিয়ে গিয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। ক্লান্ত শরীরেও লড়াই করেছিলেন শেষ পর্যন্ত। এই টুর্নামেন্টে ৪ গোল করে যৌথভাবে শীর্ষ গোলদাতা ৩৭ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন।
২০০৭ সালে রোজারিও সেন্ট্রাল থেকে ইউরোপের পথে রওনা দেন দি মারিয়া। প্রথম গন্তব্য ছিল বেনফিকা। তিন মৌসুমে দলকে এনে দেন পাঁচটি শিরোপা। সেখান থেকেই নজরে আসেন ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর। ২০১০ সালে নাম লেখান রিয়াল মাদ্রিদে। ২০১০-১৪ পর্যন্ত চার বছরে রিয়ালের হয়ে জেতেন ছয়টি শিরোপা, যার মধ্যে রয়েছে এক চ্যাম্পিয়নস লিগ ও এক লা লিগা। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি।
রিয়াল থেকে ৫৯ মিলিয়ন পাউন্ডে পাঁচ বছরের চুক্তিতে পাড়ি জমান ইউনাইটেডে। দলটির হয়ে ভুলে যাওয়ার মতো এক মৌসুম খেলে চলে আসেন ভালোবাসার শহর প্যারিসের ক্লাব, পিএসজিতে। এখানে সর্বোচ্চ সাত মৌসুম খেলে জেতেন ১৯টি ট্রফি, যার মধ্যে রয়েছে ৫টি লিগ শিরোপা। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালেও খেলেন ২০১৯-২০ মৌসুমে, যদিও দল হারে বায়ার্নের কাছে। এরপর এক মৌসুমের জন্য যান জুভেন্টাসে।
২০২৩ সালে আবার ফিরে আসেন বেনফিকায়। যেন নিজের গল্পটা যেখানে শুরু হয়েছিল, সেখানেই শেষ করার জন্য। সেই শেষটাই হলো পরশু রাতে। শেষ ম্যাচ, শেষ গোল, শেষ অশ্রু।
চেলসির কাছে হারের পর মারিয়ার চোখের পানি থামেনি। ম্যাচশেষে কান্না ভেজা চোখে বিদায় জানান ইউরোপকে। ঝড়বিক্ষুব্ধ রাতে তার ভেতরের ঝড়টাই যেন বেশি প্রবল ছিল। সেই দৃশ্য ছুঁয়ে গেছে কোটি ভক্তের হৃদয়।
তার পুরো ক্যারিয়ারটাই যেন একজন নিঃশব্দ নায়ক হিসেবে কেটেছে। কখনো নিজেকে প্রচারে আনেননি। অথচ কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমা, বিশ্বকাপ ফাইনাল—সবখানেই গোল করেছেন। আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন ২০১৪ সালে।
জাতীয় দলকে আগেই বিদায় জানিয়েছেন। এবার ইউরোপের মঞ্চ থেকেও সরে দাঁড়ালেন। সামনে কেবল রয়ে গেছে নিজের শৈশবের ক্লাব রোসারিও সেন্ট্রালের হয়ে শেষ বাঁশি বাজানোর অপেক্ষা। সেটাও হয়তো হবে তার মতো করেই—নীরব, দৃঢ়, বিনয়ী।
ইউটি/এসএন