বাংলা সিনেমায় যেন সত্যিই ধূমকেতুর আগমন ঘটল। কারণ শুধুমাত্র নয় বছর পর দেব ও শুভশ্রীর বহুপ্রতীক্ষিত জুটির বড় পর্দায় প্রত্যাবর্তন নয়, ‘ধূমকেতু’ নিয়ে এসেছে এমন একটি বিপণন কৌশল ও ব্যবসায়িক মডেল, যা এ যাবৎ বাংলা সিনেমায় দেখা যায়নি।
ছবিটি মুক্তি পাবে আগামী ১৫ আগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে। তবে তারও আগেই ‘ধূমকেতু’ নিয়ে দর্শক এবং চলচ্চিত্রজগতে উন্মাদনা তুঙ্গে। এই ছবিকে ঘিরে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এর বিপণনের নতুন মডেল, ‘প্রি-রিলিজ ডিস্ট্রিবিউশন রাইটস’, যা এতদিন হিন্দি সিনেমার জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এবার প্রথমবারের মতো এই কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে বাংলা ছবিতে।
পরিচালনায় রয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি বরাবরই সাহসী গল্প ও বাস্তবধর্মী চরিত্র উপস্থাপনার জন্য পরিচিত। এই সিনেমার প্রযোজক রানা সরকার জানিয়েছেন, “বাংলা ছবিতে আগে এমন মডেল কেউ ব্যবহার করেনি। আমরা ঝুঁকি নিয়েছি, এখন দর্শকের হাতেই ছবির সাফল্যের দায়িত্ব।”
ছবির ডিস্ট্রিবিউশন স্বত্ব ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। ডিস্ট্রিবিউটর শতদীপ সাহা বললেন, “ছবির টিজার দেখেই বুঝেছিলাম এটি ব্যবসা করবে। তাই মুক্তির আগেই স্বত্ব কিনে নিয়েছি।”
এই ব্যবসায়িক কাঠামো অনুযায়ী, ছবির প্রযোজক আগাম আয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফেরত পাচ্ছেন, যা রিস্ক ম্যানেজমেন্টের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মুক্তির পর যা আয় হবে, তা ভাগ হবে প্রযোজক ও ডিস্ট্রিবিউটরের মধ্যে। এটি বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে এক নতুন রীতি তৈরি করতে পারে।
‘ধূমকেতু’-র ক্ষেত্রে আরও কিছু অনন্য দিক রয়েছে যা এই ব্যবসায়িক সফলতার সম্ভাবনাকে বাড়িয়েছে। প্রথমত, দেব-শুভশ্রী জুটির দীর্ঘ বিরতির পর বড় পর্দায় ফেরা নিজেই একটি ঘটনা। দ্বিতীয়ত, ছবিটি প্রায় ৯ বছর ধরে আটকে ছিল, যার ফলে দর্শকদের মধ্যে কৌতূহল আরও তীব্র হয়েছে। টিজার প্রকাশের পর তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়।
বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম-সুচিত্রা যুগ কিংবা প্রসেনজিৎ অভিনীত কিছু ছবিতে হয়তো অনানুষ্ঠানিকভাবে এমন ব্যবসায়িক ধাঁচ দেখা গিয়েছিল, কিন্তু এইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে, প্রকাশ্যভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে প্রি-রিলিজ স্বত্ব বিক্রির ঘটনা এবারই প্রথম। ফলে ‘ধূমকেতু’ হয়ে উঠেছে বাংলা সিনেমার অর্থনৈতিক কৌশলের একটি মাইলফলক।
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের মতে, এই মডেল সফল হলে ভবিষ্যতে টলিউড আরও বড় বাজেটের সিনেমা নির্মাণে উৎসাহী হবে। ঝুঁকি ভাগাভাগি হলে নির্মাতা ও প্রযোজকেরা আরও সাহসী গল্প বলার সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে বিপণন ও বিজ্ঞাপনেও পেশাদারিত্ব আসবে।
‘ধূমকেতু’ যে শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং বাংলা ছবির ব্যবসায়িক কাঠামোয় এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা, তা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এমআর