‘তদন্ত ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের শাস্তি দেওয়া যাবে না’

সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অভিযোগ কোনো নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হলে তদন্ত কমিটিতে অবশ্যই একজন নারী সদস্য থাকতে হবে। এর ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়া শাস্তি দেওয়া যাবে না।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভোটিং-সাপেক্ষে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

সংশোধনীতে যা রয়েছে

জানা গেছে, অধ্যাদেশটির সংশোধনী প্রস্তাবে অনানুগত্য ধারা, চাকরি হতে অপসারণ দণ্ড বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তাঁর কর্ম হতে অনুপস্থিত থাকতে উসকানি ও প্ররোচিত করার ধারাটিও বাদ দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত ব্যক্তিগতভাবে শুনানিতে ইচ্ছুক কি না নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্তির বিধান রাখা হয়েছে। তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্রতিবেদন দাখিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে এটি তদন্ত কমিটির সদস্যদের অদক্ষতা হিসেবে গণ্য হবে।

এ অদক্ষতা এসিআরে লিপিবদ্ধ হবে। প্রয়োজনে কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। কোনো সরকারি কর্মচারীকে দণ্ড প্রদান করা হলে তিনি দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন।

বর্তমান সরকার গত ২৫ মে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৭-এর পর নতুনভাবে ৩৭ সন্নিবেশিত করে একটি অধ্যাদেশ জারি করে। ওই অধ্যাদেশটি ১৯৭৯ সালের মার্শাল ল অর্ডিন্যান্সের অনুরূপ সাত দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুতি, কোনো অফিস প্রধানের কথা যদি নৈতিকমানসম্পন্ন কোনো কর্মচারী না শোনেন তখন সেই ভালো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনানুগত্যের অভিযোগ এনে চাকরিচ্যুতি, শুধু কর্মস্থলে অনুপস্থিতির জন্য চাকরিচ্যুতি, কর্মস্থলে অনুপস্থিত বা বিরত থাকতে উসকানি বা প্ররোচিত করার অপরাধে চাকরিচ্যুতি বা কর্মে উপস্থিত অথবা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করার জন্য চাকরিচ্যুত করার বিধান রাখা হয়েছিল।

এর প্রতিবাদে সচিবালয়ের কর্মচারীরা কয়েক দফায় আন্দোলন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার আইনটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।

পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অধ্যাদেশটি সংশোধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কর্মচারী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে একের অধিক বৈঠক করেন। সর্বশেষ গত ২৬ জুন বিকেল ৪টায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে অধ্যাদেশটি প্রণয়নের দেড় মাসের মধ্যে সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করল সরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ছিল মূলত সামরিক শাসনামলের বিতর্কিত ও কালা কানুন বাতিল করা। বর্তমান সরকার কর্মচারীদের আপত্তি ও আশঙ্কাগুলোকে বিবেচনায় এনে সংশোধন করেছে—এটি মন্দের ভালো। কেননা প্রশাসনযন্ত্রে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ বহাল ও বিদ্যমান থাকায় অহেতুক এ ধরনের অধ্যাদেশ জারির প্রয়োজন ছিল না। তার পরও এটি সরকার সংশোধন করেছে, এ জন্য কর্মচারীদের পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুলাই যোদ্ধাদের সনদ দেওয়া সম্ভব কিন্তু একটু ক‌ঠিন : উপদেষ্টা শারমীন Jul 04, 2025
img
অন্ধ্রপ্রদেশ-তেলেঙ্গানায় উন্মাদনা ছড়াচ্ছে ‘ওয়ার ২: প্রথম শো ভোর পাঁচটায় Jul 04, 2025
img
ভারতের আধিপত্য রুখতে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে : আব্দুস সালাম Jul 04, 2025
img
মন্দোদরী চরিত্রে পা রাখছেন কাজল? Jul 04, 2025
img
বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও 'কঙ্গুভা ২' -এর দাবি ফ্যানদের Jul 04, 2025
img
যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে লেবাননে ফের হামলা চালাল ইসরায়েল Jul 04, 2025
img
পাকিস্তানের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ Jul 04, 2025
img
চুয়াডাঙ্গায় ট্রাক চাপায় নিহত ৩ Jul 04, 2025
img
‘আখণ্ড ২’তে কেন্দ্রীয় চরিত্রে বজরঙ্গি’র মুন্নি Jul 04, 2025
img
সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের: জয়সুরিয়া Jul 04, 2025
img
রাবণ কি ফিরছেন আধুনিক রূপে: আল্লু অর্জুন-প্রশান্ত নীলের ‘রাবণম’ ঘিরে রহস্য Jul 04, 2025
img
পাকিস্তান চীনের ‘জীবন্ত পরীক্ষাগার’, দাবি ভারতের Jul 04, 2025
img
কপিলকে ছুঁয়ে ধোনির পথে এগোচ্ছেন জাদেজা Jul 04, 2025
'জুলাইয়ের বিচারের আগে নির্বাচন হতে দেব না' Jul 04, 2025
গাজীপুরে বিএনপির সমাবেশ থেকে কি বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ? Jul 04, 2025
img
টানা তিন হিট, এক ক্যামিও: বলিউডে নির্ভরতার নাম অক্ষয় কুমার Jul 04, 2025
img
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তি নাই: সামান্তা শারমিন Jul 04, 2025
img
করণ জোহরের ফ্যান্টাসি থ্রিলারে রাজকুমার রাও Jul 04, 2025
img
টাকা মেরে খাওয়ার জন্য আমরা ক্ষমতায় বসিনি : ধর্ম উপদেষ্টা Jul 04, 2025
img
আমির খান, জাভেদ আখতার কি মারাঠি বলেন?প্রশ্ন নীতেশ রানের Jul 04, 2025