দক্ষিণ কোরিয়া ব্যাপক এক নগদ সহায়তা কর্মসূচি চালু করছে, যার আওতায় দেশটির সব বাসিন্দাকে ‘খরচ কুপন’ বা ভোগবর্ধক ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা হবে। দেশীয় খরচ বাড়িয়ে স্থবির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্য নিয়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোরিয়া হেরাল্ডের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এই কর্মসূচি ৩১.৮ ট্রিলিয়ন ওন (২৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থমূল্যের একটি সম্পূরক বাজেটের অংশ, যা শুক্রবার জাতীয় পরিষদে পাস হয়।
এটি আগামী ২১ জুলাই শুরু হয়ে চলবে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
এই উদ্যোগ তত্ত্বাবধানকারী আন্ত সংস্থা টাস্কফোর্সের প্রধান উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিম মিন-জে বলেন, “আমরা এই ‘খরচ কুপন’ প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রস্তুতি নিশ্চিত করব, যাতে এটি ভোগ বৃদ্ধি ও প্রয়োজনমাফিক সহায়তার মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।”
চলতি বছরের ১৮ জুন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত সব নাগরিক এককালীন দেড় লাখ ওন (প্রায় ১১০ ডলার) পাবে। এই অর্থ প্রদান করা হবে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, প্রিপেইড কার্ড কিংবা স্থানীয় সরকার প্রদত্ত গিফট ভাউচারের মাধ্যমে।
মন্ত্রণালয়, দুর্বল শ্রেণির জনগণ অতিরিক্ত সহায়তা পাবে। দারিদ্র্যের ধারেকাছে থাকা পরিবার ও একক মা-বাবার পরিবারকে তিন লাখ ওন (২২০ ডলার), আর মৌলিক জীবনধারণ ভাতাপ্রাপ্তদের চার লাখ ওন (২৯০ ডলার) দেওয়া হবে। গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দারা অতিরিক্ত ৫০ হাজার ওন পাবে ‘সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন’কে উৎসাহিত করতে।
আরো একটি ধাপে দ্বিতীয় দফার খরচ কুপন প্রদান হবে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত।
তখন জাতীয় স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের ভিত্তিতে দেশের সবচেয়ে কম আয়ের ৯০ শতাংশ নাগরিককে এক লাখ ওন (৭৩ ডলার) দেওয়া হবে। এর বিস্তারিত তথ্য সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশ করা হবে।
এশিয়ার চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ২০২৪ সালে সংকীর্ণভাবে একটি কারিগরি মন্দা এড়াতে পেরেছিল, যদিও বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হয় এবং তৃতীয় প্রান্তিকে দুর্বলতা পুনরুদ্ধার হয়। এই স্থবিরতা মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার ফল, যার চূড়ান্ত রূপ ছিল প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিশংসন। তিনি গত ডিসেম্বরে সাময়িকভাবে সামরিক আইন জারি করেছিলেন।
৪ জুন দায়িত্ব দেওয়া নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যাতে নগদ সহায়তা, ডিজিটাল ভাউচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এদিকে কিছু অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেছেন, এই পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা রয়েছে এবং দীর্ঘ মেয়াদে রাজস্ব ঘাটতি ও সরকারি ঋণের বোঝা বাড়তে পারে। কারণ অর্থ মন্ত্রণালয় এই প্রণোদনার ব্যয় মেটাতে নতুন ঋণের ওপর নির্ভর করছে এবং তারা ৪.২ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি ও মোট দেশজ উৎপাদনের ৪৯.১ শতাংশ পর্যন্ত জাতীয় ঋণের পূর্বাভাস দিয়েছে।
পিএ/ এসএন