নেতার পরিবর্তন হয়েছে, নীতির পরিবর্তন হয়নি : শায়েখে চরমোনাই

"নেতার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু নীতির পরিবর্তন হয়নি" মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম (শায়েখে চরমোনাই) বলেছেন, "গত ১৬ বছর যাবত স্বৈরাচারী সরকার দুর্নীতি ও দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার।"

তিনি বলেন, "যে উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার দেশকে ফ্যাসিস্ট সরকার ও ভারতের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন আমরা লক্ষ্য করছি না। আগের মতই সকল ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হচ্ছে। নেতার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু নীতির পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং এর থেকে প্রমাণ হয় ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করতে হলে নীতির পরিবর্তন করতে হবে তা হলো ইসলামি নীতি। ইসলামই পারে একমাত্র শান্তি দিতে। সর্বোপরি রাষ্ট্রে পূর্ণাঙ্গ শান্তি ও মুক্তি পেতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামি নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।"

রবিবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর একটি রিসোর্টে অনুষ্ঠিত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের ঐক্য ভাবনায় উলামায়ে কেরাম ও তাওহিদি জনতার করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, রাজশাহী মহানগর শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ-এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সুধীজনরা অংশ নেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর আরো বলেন, "জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন, শোষণ-নিপীড়ন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করতে হবে।

আগামী দিনে বাংলাদেশে যাতে কোনো নির্বাচিত স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও সন্ত্রাসী শ্রেণি রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করতে না পারে এবং একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক রাষ্ট্র সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি তিনি বলেন,"সেটি নিশ্চিত করার জন্য জনপ্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। পতিত ফ্যাসিবাদের সহযোগী যারা এখনো জনপ্রশাসনে কাজ করছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। না হলে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করেই যাবে। দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সক্রিয়, কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও খুন-খারাবি রোধে প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও অবিচল হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সকল পর্যায়ে স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।"

আগামীতেও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সকল স্থানীয় নির্বাচনের বিধান প্রণয়ন করতে হবে উল্লেখ করে প্রধান অতিথি বলেন, "চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সকল দলের জন্য সমতল পরিবেশ এবং সমান সুযোগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক পক্ষ বা ভিন্ন কোনো দেশের চাপে অতীতের মতো যেন-তেন একটি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলে তা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না।"

তিনি বলেন, "দেশবিরোধী ও ইসলামবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলায় সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ও ইসলামী শক্তির ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, জনগণের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং কাঙ্ক্ষিত উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে ইসলামের সুমহান আলোকিত আদর্শের অনুশীলন করতে হবে।"

মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রিত মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর রাজশাহী বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শেখ মুহাম্মদ নূরুন নাবী। এছাড়া দেশ বরেণ্য উলামায়ে কেরাম ও সহযোগী সংগঠনের রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


পিএ/ এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতায় ১৫ হাজার করদাতা Jul 16, 2025
img
রাতে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে মাঠে নামছে সাকিবের দল Jul 16, 2025
রিজিকে বরকত বৃদ্ধির টিপস | ইসলামিক টিপস Jul 16, 2025
img
আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে ‘জুলাই শহীদ দিবস’- এর কর্মসূচি শুরু Jul 16, 2025
ডলার কিনে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক Jul 16, 2025
img
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে ৭ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর বিএসএফের Jul 16, 2025
img
১০ লাখ লোকের জমায়েতের প্রস্তুতি, ১০ হাজার বাস রিজার্ভ জামায়াতের Jul 16, 2025
img
মিটফোর্ডের মতো ঘটতে যাওয়া ঘটনা আটকে দিলো সেনাবাহিনী Jul 16, 2025
img
মেক্সিকান টমেটোতে ১৭ শতাংশ শুল্ক বসালেন ট্রাম্প Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জ নিয়ে সারজিসের ফেসবুকে স্ট্যাটাস Jul 16, 2025
মুখ লুকিয়ে আদালতে যাওয়ার কারণ জানালেন অপু বিশ্বাস Jul 16, 2025
চীনের আমন্ত্রণে সাংহাই সফর শেষে যা জানালেন শফিকুর রহমান Jul 16, 2025
img
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইইউতে প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশিরা Jul 16, 2025
img
চট্টগ্রামের পটিয়ায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে চোরাই ২ অটোরিকশাসহ গ্রেফতার ৭ Jul 16, 2025
img
হজের অব্যয়িত অর্থ ফেরত স্ক্যাম নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা Jul 16, 2025
img
চট্টগ্রামে আজ ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’, গান ও ছবিতে ফিরবে প্রতিবাদের সুর Jul 16, 2025
img
জাবিতে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে ছাড়া হলো আটক ১০টি বাস Jul 16, 2025
img
দুদকের নতুন সচিব হলেন মোহাম্মদ খালেদ রহীম Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে আগুন Jul 16, 2025
img
মেহেরপুরে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত Jul 16, 2025