উপজেলায় অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিগত সম্মতি

বিচার ব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে উপজেলায় পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে একমত হয়েছে ঐক্যমত কমিশনের আলোচনা অংশ নেওয়ার রাজনৈতিক দলগুলো। তবে, এক্ষেত্রে ভৌগলিক অবস্থানে যেসব উপজেলা জেলা সদরের নিকটবর্তী সেখানে আদালত স্থাপনের বিপক্ষে দলগুলো।

আজ সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলগুলো নীতিগতভাবে একমত প্রকাশ করে।

ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, উপজেলা সদরের ভৌগলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা; জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন কোন উপজেলায় স্থায়ী আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে হবে।

বর্তমানে যেসব উপজেলায় চৌকি আদালত পরিচালিত হয়, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সবগুলো চৌকি আদালতকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন, না কি সেক্ষেত্রেও পুনর্বিবেচনা ও পুনর্বিন্যাসের সুযোগ রয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে উপজেলা সদরে স্থাপিত কোনো আদালতের জন্য একাধিক উপজেলাকে সমন্বিত করে অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করা প্রয়োজন হলে, তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।



উপজেলা আদালতগুলোতে সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন করতে হবে। দেওয়ানি মামলা গ্রহণে সিনিয়র সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে বাস্তবানুগ করাও প্রয়োজন। আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, জেলা সদরের অতি কাছে যেসব উপজেলা সদর রয়েছে সেখানে অধস্তন আদালত প্রয়োজন হবে না। একইসঙ্গে জেলা সদরে উপজেলা অধস্তন আদালতের প্রয়োজন নেই। কোন উপজেলায় অধস্তন আদালত প্রয়োজন তার সংখ্যা নিরূপণের জন্য সমীক্ষার অনুরোধ করেন তিনি।

আদালতে বিকেন্দ্রীকরণ প্রস্তাবের পক্ষে গণসংহতি আন্দোলন একমত উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে অনেক মামলা ও গ্রেপ্তার হয়, কিন্তু জামিন থেকে শুরু করে একেবারে প্রাথমিক কাজের জন্য তাদেরকে জেলায় যেতে হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক চাপ থাকে। অনেক সময় মামলার জন্য জেলায় গিয়ে থাকতেও হয়।

উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত হলে মামলা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কার কথা বিবেচনায় না নিয়ে বর্তমান বিচার ব্যবস্থার অসুবিধা বিবেচনা নিয়ে এটি করা দরকার বলে মনে করেন সাকি।

উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ হলে তা প্রতিটি উপজেলায় হওয়া দরকার। সংসদীয় আসন কিংবা অন্যকিছু বিবেচনা করায় হলে তাহলে এক অঞ্চলে সঙ্গে আরেক অঞ্চলে দ্বন্দ্ব বাড়বে মনে করেন সাকি।

আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকটি দলের নেতা উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপন করা হলে দুর্নীতি বাড়বে আশঙ্কা করেন। বিষয়টিতে দ্বিমত জানান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত হলে দুর্নীতি বাড়বে এটা ভুল ধারণা। বিচার প্রার্থীকে হয়রানি রোধ করতে বিচারের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। দুর্নীতির বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপনে তাগিদ দেন। প্রয়োজনে সংসদীয় আসনের ভিত্তিতে দ্রুতই অধস্তন আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করেন তিনি।
কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে আগামী কত বছরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ করা হবে তা নির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয় ঐকমত্য কমিশনকে।

পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে বেশ কিছু পরামর্শ এসেছে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। সেগুলো নিয়ে বিরতির পরে আলোচনা শুরু হবে।

এখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই সংক্রান্ত কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে বর্তমান যে বিধান রয়েছে তা ভয়াবহভাবে নাগরিক অধিকারকে সংকুচিত করে এবং আদালতকে এমনভাবে বেঁধে দেয় যে তার পক্ষে কিছুই করার থাকে না। তাই সংবিধানের ১৪১ ক, খ, গ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জরুরি অবস্থার মেয়াদ ৬০ দিনের বেশি হবে না। জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের দ্বারা নিশ্চিত করা নাগরিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই নাগরিকদের তাদের অধিকার প্রয়োগের জন্য আদালতে যাওয়া বন্ধ করা যাবে না।


পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আনসার বাহিনীর দুই পরিচালক পদে রদবদল Jul 08, 2025
img
সাবেক গোয়েন্দা প্রধানের ব্যাংক হিসাব জব্দ Jul 08, 2025
img
নয় ঘণ্টা ঘুমিয়ে নয় লাখ টাকা জিতলেন তরুণী Jul 07, 2025
img
নীল ছবির জগৎ ছেড়ে ইসলাম ধর্মে জাপানের অভিনেত্রী Jul 07, 2025
img
মিরপুরে আ. লীগের ফ্যাসিস্ট বলে ২০ লাখ টাকা দাবি, গ্রেফতার ৪ Jul 07, 2025
img
ইয়েমেনি গোষ্ঠীর হামলায় লোহিত সাগরে জাহাজডুবির দাবি Jul 07, 2025
img
আসছে ‘রাতসাসান টু’, নিশ্চিত করলেন অভিনেতা বিষ্ণু বিশাল Jul 07, 2025
img
এনসিপিকে আমি সরকারি দলই বলি : মাসুদ কামাল Jul 07, 2025
১০ মিনিটে বাংলাদেশের আলোচিত সব খবর। Jul 07, 2025
img
সারাদেশে বৃষ্টি থাকবে, কমবে দিনের তাপমাত্রা Jul 07, 2025
img
৩৬৭ রানে ইনিংস ঘোষণা, লারার রেকর্ড না ভাঙার কারণ জানালেন মুল্ডার Jul 07, 2025
img
রাজনীতির হিসাব বদলে যাচ্ছে : রনি Jul 07, 2025
img
কক্সবাজারে টানা বৃষ্টিতে লাখো মানুষ পানিবন্দী Jul 07, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-তুরস্কসহ ৮ দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ Jul 07, 2025
img
‘তারে জমিন পার’ পেরিয়ে ‘গেমারলগ’ দিয়ে দর্শিলের নতুন সফর শুরু Jul 07, 2025
img
২০ বছর বয়সে কেন কটাক্ষের শিকার হন গায়িকা নেহা? Jul 07, 2025
img
সিরিজ জিততে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ : ইমন Jul 07, 2025
img
পরিবার থেকে সন্তানধারণের চাপ নিয়ে জানালেন অঙ্কিতা Jul 07, 2025
img
জুলাই শহীদদের আদর্শ ও প্রেরণা অনুসরণ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়া সম্ভব: উপদেষ্টা মাহফুজ Jul 07, 2025
img
আরও একবার মেসির পায়ের জাদু দেখল ফুটবল বিশ্ব, ৫ জনকে বোকা বানিয়ে জাদুকরী গোল Jul 07, 2025