রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ ও গুণগত পরিবর্তন ছাড়া কোনো নীতিমালাই কাজে আসবে না: গভর্নর

ব্যাংক খাতের তদারকিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চালু হতে যাচ্ছে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা (রিস্ক বেইজড সুপারভিশন-আরবিএস)। এতে তদারকি হবে আরও আধুনিক, কার্যকর ও তথ্যভিত্তিক। তবে রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন, হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে কোনো নীতিমালাই কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, এরইমধ্যে ২০টি ব্যাংকের সঙ্গে পাইলটিং কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৬১টি ব্যাংকের রিস্ক বেইজড সুপারভিশন চালু হবে। ১২টি ভাগে বিভক্ত ১২টি কমিটি গঠন করা হবে যারা ব্যাংকের চতুর্দিক থেকে অর্থাৎ ৩৬০ ডিগ্রি সুপারভিশন করবে। আমরা একটি শক্তিশালী ব্যাংক খাত গঠনের চেষ্টা করছি, তবে সেজন্য রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন খুবই প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজে হস্তক্ষেপ না করা হয়। সংস্থাটিকে নিজের মতো চলতে দেওয়া হয়।

ইসলামী ধারার দুর্বল কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে গভর্নর বলেন, আমরা ছয়টি ব্যাংকের (সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক) সঙ্গে আলাদা আলাদা আবারও বৈঠক করবো। যদি তারা সঙ্গত কারণ দেখাতে পারে, তাহলে মার্জ হবে না। আমাদের জানামতে, ছয়টি ব্যাংকই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সেজন্য তাদের মার্জের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বোর্ড পুনর্গঠনের পর কিছু ব্যাংক খুবই ভালো করছে। তবে যারা পারফরম্যান্স দেখাতে পারছে না, প্রয়োজনে এসব ব্যাংকের বোর্ড আবার পুনর্গঠন করা হবে। এরইমধ্যে আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছি—কেন তাদেরকে বন্ধ করা হবে না তার উত্তর দেওয়ার জন্য। তারা যদি যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারে এবং সরকার সম্মত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আমার ধারণা, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর জানান, শুধু ডলারভিত্তিক রিজার্ভ ব্যবস্থা থেকে পরিবর্তন এনে পণ্য মুদ্রা বা অন্য সম্পদ সঞ্চয় করা যায় কিনা, সে বিষয়ে ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব আমানতকারী তাদের টাকা ফেরত পাবেন—এ কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এক মাস হোক বা ছয় মাস বা এক বছর—সময় যতই লাগুক না কেন, সবাই তাদের জমা টাকা ফিরে পাবেন।

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অনেক গ্রাহক এরইমধ্যে টাকা পেয়েছেন, বাকিরাও পাবেন—তবে একটু সময় লাগতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এরইমধ্যে কিছু ব্যাংকে পরীক্ষামূলকভাবে এই তদারকি কাঠামো চালু করা হয়েছে। তাতে ইতিবাচক ফল আসায় আগামী জুলাই থেকে ধাপে ধাপে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ঝুঁকিনির্ভর তদারকি কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, পরিচালনাগত, আইনগত ও কৌশলগত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হবে আরও নিখুঁতভাবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এতে করে প্রতিটি ব্যাংকের কার্যক্রম আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হবে।

তথ্যভিত্তিক তদারকি নিশ্চিত করতে তৈরি করা হচ্ছে নতুন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি। একটি কেন্দ্রীয় তদারকি তথ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে সহজেই যেকোনো ব্যাংকের ঝুঁকি চিত্র বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। একইসঙ্গে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা আরও সুসংহত হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি আরও মজবুত হবে।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আজ দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন প্রধান উপদেষ্টা Nov 03, 2025
img
রাজধানীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৪ Nov 03, 2025
img
গোপনে মাস্ককে ২০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা প্রকল্প দিলেন ট্রাম্প Nov 03, 2025
img
আফগানিস্তানে ফের ভূমিকম্প Nov 03, 2025
হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে জুলাই গণ/হত্যাকে সমর্থন করছে ভারত: এনসিপি Nov 03, 2025
অবশেষে শাপলা কলিতেই রাজি এনসিপি Nov 03, 2025
বিএনপিকে নিয়ে যে মন্তব্য করলেন মাসুদ কামাল Nov 03, 2025
ড. মোহাম্মদ ইউনুস কে আদেশ জারি করতে হবে: হাসনাত। Nov 03, 2025
কেন সালমান শাহর মৃত্যুর তিন দিন পর আসেন ডন ? Nov 03, 2025
মায়ের আশীর্বাদ ছাড়া এই জায়গায় আসতে পারতাম না: কাজল Nov 03, 2025
এবার ১৯ বছরের ছোট, হীরা ব্যবসায়ীর প্রেমে মজলেন মালাইকা Nov 03, 2025
img
প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ায় ইসিকে তারেক রহমানের ধন্যবাদ Nov 03, 2025
img
ট্রাম্পের সামরিক পদক্ষেপের জবাব দিলো নাইজেরিয়া Nov 03, 2025
img
যখন সাংবাদিকদের চুপ করানো হয়, তখন সবার কণ্ঠ থেমে যায় : জাতিসংঘ মহাসচিব Nov 03, 2025
img
শীতের আগমন নিয়ে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস Nov 03, 2025
img
আজ শোকাবহ জেলহত্যা দিবস Nov 03, 2025
img
১০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ৩৯ বছর আদালতে হাজিরা! Nov 03, 2025
img
২০২৬ সালে স্বর্ণের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে Nov 03, 2025
img
নৌ, বস্ত্র ও পাট, পরিকল্পনা ও সমবায়ে নতুন সচিব Nov 03, 2025
img
ক্লাসিকোর দুঃস্বপ্ন পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াল বার্সা Nov 03, 2025