জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা বলেছি গণহত্যার বিচার, দেশের মৌলিক সংস্কার এবং নতুন সংবিধান লাগবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সেই তিনটির কোনো একটিও সম্পূর্ণভাবে আদায় করতে পারিনি। এই সরকার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান থেকে নির্বাচন নিয়ে তাদের তড়িঘড়ি। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবেই বলেছি নির্বাচন আমরাও চাই। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিতে পুরো বাংলাদেশে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি সংস্কারের যে জুলাই সনদ এবং অভ্যুত্থানের জুলাই যে ঘোষণাপত্রের কথাও বলছি। জুলাই সনদ এবং ঘোষণাপত্রের জন্য আগামী ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে আমরা জড়ো হবো। জুলাই সনদ এবং ঘোষণাপত্র আদায় করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেলে নড়াইল শহরের পুরাতন বাস টার্মিনালের মুক্তমঞ্চে এনসিপি আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, এনসিপি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজপথ থেকে গড়ে ওঠা তরুণদের নেতৃত্বে একটি দল। আপনারা সবই দেখেছেন সবই জানেন। ২০২৪ সাল, গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এদেশের ছাত্র-তরুণ-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। নিজের জীবন দিয়ে আপনাদের সন্তানেরা, আপনাদের ভাই, আপনাদেরই বোন, আপনাদের কারও বাবা রাস্তায় নেমে এসেছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য, দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য।
এই নড়াইল থেকেও ২ থেকে ৩ জন শহীদ হয়েছেন। আমরা যে আজ কথা বলতে পারছি স্বাধীনভাবে, মুক্তভাবে এই শহীদদের আত্মত্যাগ ও আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের ফলে। কিন্তু এক বছর হয়ে গিয়েছে আমরা সেই সকল শহীদদের, সেই সকল আহতদের যে আত্মত্যাগ, যে রক্ত ত্যাগ তার যথাযথ সম্মান দেখাতে পারিনি। এই গণঅভ্যুত্থানের পরে আমাদের স্বপ্ন ছিল- যারা এই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে দলমত নির্বিশেষে, আমরা এই দেশটাকে নতুনভাবে গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, এদেশের ছাত্র সমাজ কর্মসংস্থানের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল। তারা পড়াশোনা করে চাকরি পায় না, সেই চাকরির ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সেই আন্দোলনে পুলিশ, ছাত্রলীগ, সন্ত্রাসী বাহিনী সকলে মিলে নির্মমভাবে গুলি চালায় আমাদের হাজারের ওপরে ভাই শহীদ হয়। আমরা সেই সকল শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলছি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল করা আমাদের লক্ষ্য ছিল না। আমাদের লক্ষ্য ছিল এই দেশটাকে পুনর্গঠন করা, এই দেশটাকে ভালোমতো তৈরি করা। বিদ্যমান যে রাজনৈতিক দলগুলো ছিল যদি তাদের নেতৃত্বে দেশ পুনর্গঠন হওয়া সম্ভব হতো তাহলে হয়তো আমাদের দল করার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আমরা আস্থা রাখতে পারিনি। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পরে সাত মাস দেখেছি- দেশের রাজনৈতিক যে দলগুলো ছিল তারা কীভাবে ক্ষমতার জন্য আসন ভাগ-বাটোয়ারার জন্য ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, একটা গণঅভ্যুত্থানকে গণঅভ্যুত্থান হিসেবে তারা স্বীকার করতে চায় না। তারা মনে করে শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্যই এই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। কিন্তু আমরা মনে করি দেশ পুনর্গঠনের জন্য একটি সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। আপনার সন্তান আমাদের ভাইয়েরা রাজপথে নেমে এসেছিল সেই নতুন দেশ গড়ার জন্য। এক বছরের মধ্য যখন আমরা পায়নি সেই আমাদের আকাঙ্ক্ষি বাংলাদেশ, প্রত্যাশিত বাংলাদেশ। ফলে আমরা রাস্তায় নেমেছি আবার। আমরা সেই তরুণেরা যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বুক চেতিয়ে লড়েছিলাম।
নড়াইলবাসীর উদ্দেশে নাহিদ বলেন, আমরা চাই আপনারা আমাদের ওপরে গণঅভ্যুত্থানের সময় যে আস্থা রেখেছিলেন, আমাদের ওপরে আবারও আস্থা রাখুন। গত ৫৪ বছরের বাংলাদেশ আমরা দেখেছি। গত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সময়ের বাংলাদেশ আমরা দেখেছি। সকল রাজনৈতিক দলকে আপনাদের দেখা হয়েছে। এই নতুন তরুণ নেতৃত্ব, বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে যারা আপনার কথা বলতে চায়। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। এখন আপনাদের কাছে সুযোগ এসেছে নতুন একটি শক্তির উত্থান ঘটানোর। আমরা চাই আপনারা আমরা মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই দেশটাকে গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরের যে ফ্যাসিজম, যেই স্বৈরাচার, আমরা চাই আগামীর বাংলাদেশে নতুন করে কোনো স্বৈরাচার না হতে পারে। আগামীর বাংলাদেশে আপনার আমার কথা বলার অধিকার থাকবে, ভাত-কাপড়ের অধিকার থাকবে। বাংলাদেশে কোনো দুর্নীতি থাকবে না। বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সবাই চাকরি পাবে। এ রকম একটি প্রত্যাশা নিয়ে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করে যাচ্ছি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, খুলনাঞ্চলের অঞ্চল পরিচালক মোল্যা রহমতউল্লাহ, অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার শেলী ও মাহবুবা সুলতানা রিমি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, জাতীয় নাগরিক পার্টি নড়াইল জেলার প্রধান সমন্বয়ক মো. শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
কেএন/টিএ