বাংলাদেশকে ছোট ভাই না, সমান মনে করতে হবে ভারতকে: মির্জা ফখরুল

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খুব পরিষ্কার করেই বলেছি যে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে যেরকম সম্পর্ক আমরা রাখতে চাই, ভারতও তেমন। তাদের সঙ্গে আমরা একটা ফাংশনাল রিলেশনশিপ রাখতে চাই। প্রোভাইডেড ভারত যদি সেইভাবে আচরণ করে, ভারত যদি ভালো প্রতিবেশীর মতো আচরণ করে, এখন হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে, তাকে যদি ফেরত দেয় এবং নন ইন্টারফারেন্স করে, বাংলাদেশে ইন্টারফেয়ার না করে, পানি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ইমিডিয়েটলি পদক্ষেপ নেয়, সীমানার হত্যা বন্ধ করে- তাহলে ডেফিনেটলি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না করার তো কোনো কারণ নেই।

তবে প্রথম কথা হচ্ছে, তাকে সম্পর্ক ভালো করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং বাংলাদেশকে ছোট ভাই মনে না করে ইকুয়াল লেভেলে মনে করতে হবে যে বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, ইকুয়াল স্ট্যাটাস দিয়ে করতে হবে এবং সম্মানসূচক সম্পর্ক হতে হবে।

রোববার (১৩ জুলাই) দেশের এক গণমাধ্যমের বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

মাইনাস টু ফর্মুলা এখনো সক্রিয়- এমন আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব গসিপ মনে হয় আমার কাছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের মানুষ একটু গল্প করতে পছন্দ করে, তর্ক করতে পছন্দ করে, আড্ডা মারতে পছন্দ করে- এগুলো বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘকালের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমি নেগেটিভ বলছি না।

আজকাল বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা এত বেশি প্রভাব পড়ছে সমাজের উপরে, সেগুলো বিভিন্নভাবে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে এবং সেগুলো প্রভাব ফেলছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে শুধু নয়, আমি মনে করি, রাজনীতিবিদ হিসেবে সমস্ত রাজনীতিবিদদের এগুলো দেখা উচিত কিন্তু এগুলোতে মুভ হওয়া উচিত না বা সেগুলো প্রভাব বিস্তার যেন না করতে পারে। আমরা নিজেরা দেশের জন্য, যেটা জনগণের পক্ষের মনে করব এবং আমাদের পার্টির ঘোষণাপত্রে যা আছে আমাদের পার্টির আদর্শ যা আছে- সে বিষয়গুলি নিয়ে আসব, এটিই তো স্বাভাবিক। কারণ সংস্কার কমিশনের মিটিং এ বিভিন্ন দল বিভিন্ন কথা বলবে।

এটাকে আবার অন এয়ার করা হচ্ছে। মানুষ ভাবছে, তর্ক হচ্ছে, সব এক হয়ে যাচ্ছে না কেন! এক তো হবে না, গণতন্ত্রের বিষয়টাই হচ্ছে এক না হওয়া। কিন্তু অন্যের মতকে সহ্য করা। সেক্ষেত্রে এত অস্থির হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি মনে করি, এভরিথিং ইজ ইন রাইট ট্র্যাক।

আমরা আশা করি, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাবে। নির্বাচন হয়ে গেলে রাজনৈতিক যে সমস্যাগুলো আছে, সেই সমস্যাগুলো এবং একই সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে।

ভারতের সঙ্গে বিএনপির এলাইন হয়েছে- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, বললাম না যে বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য। এটা দীর্ঘকাল গণতন্ত্রের চর্চা না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে গুজব তৈরি করা, গল্প তৈরি করা, আড্ডা মারার ব্যাপারগুলোকে অন্যভাবে নিয়ে আসা- সেই জায়গাগুলোতেই সমস্যাটা আছে। এখন পর্যন্ত একটা রাজনৈতিক দল অন্য দেশের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক হবে, না হবে, বা কী করবে- সেটা আমরা ঘোষণাই করেছি। আমাদের ঘোষণার মধ্যেই আছে যে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুরোপুরিভাবে আমাদের যে ঘোষিত নীতি অর্থাৎ সকলেই আমাদের বন্ধু হবেন, কেউ আমাদের শত্রু হবেন না- সেইভাবেই আমরা মনে করি আছে এবং সেটাকে আরো প্রমোট করার ব্যবস্থা করব। কারণ কতগুলো বাস্তবতার ব্যাপার আছে তো। বাস্তবতা হচ্ছে, ভারতবর্ষ আমাদের প্রতিবেশি। বড় প্রতিবেশি।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জনগণের এত ঝামেলা, এত প্রশ্ন, এত কিছু- এই কারণে যে ভারত বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশের মানুষের যে চাহিদা আকাঙ্ক্ষা সেগুলোর ব্যাপারে ঠিক সেইভাবে এক্ট করেনি। যেমন- বিগত সরকারের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে। আওয়ামী লীগ যেহেতু বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেনি ভারতের সঙ্গে, পানির সমস্যার সমাধান হয়নি, হিস্যা সমাধান হয়নি, সীমান্তে হত্যার সমাধান হয়নি, নির্বাচনের মধ্যে হস্তক্ষেপ করা, প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করা, অন্যদিকে এখন আবার পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া- এসবে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নিঃসন্দেহে একটা বড় রকমের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

সেজন্যই মানুষে মানুষের খুব আগ্রহ থাকে যে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন? জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন? এনসিপির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন? আমরা আমাদের সম্পর্ক ব্যাপারটা খুব পরিষ্কার করেই বলেছি যে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যেরকম সম্পর্ক আমরা রাখতে চাই, ভারতের সঙ্গে আমরা একটা ফাংশনাল রিলেশনশিপ রাখতে চাই।

প্রোভাইডেড ভারত যদি সেইভাবে আচরণ করে, ভারত যদি তারা সৎ প্রতিবেশীর মত আপনার আচরণ করে, এখন হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে, তাকে যদি ফেরত দেয় এবং নন ইন্টারফারেন্স করে, বাংলাদেশে ইন্টারফেয়ার না করে, পানি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ইমিডিয়েটলি পদক্ষেপ নেয়, সীমানার হত্যা বন্ধ করে- তাহলে ডেফিনেটলি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না করার তো কোনো কারণ নেই। তবে প্রথম কথা হচ্ছে, তাকে সম্পর্ক ভালো করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং বাংলাদেশকে ছোট ভাই মনে না করে ইকুয়াল লেভেলে মনে করতে হবে যে বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, ইকুয়াল স্ট্যাটাস দিয়ে করতে হবে এবং সম্মানসূচক সম্পর্ক হতে হবে।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভালো শেয়ারের দরপতনে নড়বড়ে শেয়ারবাজার Sep 14, 2025
img
সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স প্রধান Sep 14, 2025
img
শিল্পীদের এত পাপী ভাববেন না : কনকচাঁপা Sep 14, 2025
জাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের অভিনন্দন ডাকসু জিএস এস এম ফরহাদের Sep 14, 2025
img
জেন-জি বিক্ষোভে হওয়া সহিংসতাকে অপরাধমূলক কাজ বললেন সুশীলা কার্কি, তদন্তের ঘোষণা Sep 14, 2025
img
ফেব্রুয়ারির পর চলে যেতে হবে, মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই: অর্থ উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার অনুষ্ঠানের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের ছবি Sep 14, 2025
img

শামসুজ্জামান দুদু

নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে Sep 14, 2025
img
শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল Sep 14, 2025
img
মালয়েশিয়ায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বাংলাদেশের! Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশিদের জন্য চীনা ভিসা আবেদনে নতুন নিয়ম চালু Sep 14, 2025
img
বাগেরহাটে টানা সোম-মঙ্গল-বুধবার হরতাল Sep 14, 2025
শিবির প্যানেল থেকে যেভাবে ডাকসুর নেত্রী হলেন জুমা! Sep 14, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু ইসির Sep 14, 2025
img
ওড়না ছাড়া ছাত্রীকে দেখতে চান শিক্ষক, কলেজ গেটে ঝুলছে স্ক্রিনশট Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় লাটভিয়া Sep 14, 2025
img
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করছে সরকার : অ্যাটর্নি জেনারেল Sep 14, 2025
img
দুর্নীতির মামলায় স্ত্রীসহ ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমান রিমান্ডে Sep 14, 2025
img
আমি শিবের ভক্ত, বিষ গিলে ফেলব: মোদি Sep 14, 2025
img
রাকসুর ভোট গণনা ওএমআর মেশিনেই হবে: প্রধান নির্বাচন কমিশনার Sep 14, 2025